Sunday, April 20, 2025
বাড়িখবরশীর্ষ সংবাদচিরাচরিত প্রথা মেনে কুঞ্জ সাজিয়ে মালা বদল করে বাজনা বাজিয়ে বৃষ্টির জন্য...

চিরাচরিত প্রথা মেনে কুঞ্জ সাজিয়ে মালা বদল করে বাজনা বাজিয়ে বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দিলেন খোয়াই আশারামবাড়ী এলাকার মহিলারা।

বাসুদেব ভট্টাচার্যী খোয়াই ৩০ শে মার্চ……..বর্তমান সময়ে চৈত্র মাসের প্রচন্ড দাবদাহে জ্বলছে সমস্ত রাজ্য। তাতে করে জন জীবনের অস্বস্তিভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। ঝড় বৃষ্টির কোন লেস মাত্র দেখা নেই। প্রচন্ড দাবদাহে বিভিন্ন এলাকার খাল, বিল, পুকুরের জল শুকিয়ে গেছে। তাতে করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জলের জন্য হাহাকার করছে।রাজ্যের মানুষ একটু বৃষ্টির জন্য হা হুতাশও করতে দেখা যাচ্ছে। তার মধ্যে এই প্রচন্ড দাবদাহের ফলে বিশেষ করে এই সময় খারিপ ফসল গুলি ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির মুখে। কৃষকরা শুধু একটু বৃষ্টির জলের জন্য আকাশ পানে চেয়ে রয়েছে, বৃষ্টি না হবার কারণে এই সময়ে প্রচণ্ড দাবদাহের ফলে কৃষকের জমির ফসল গুলি ঝলসে যাচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টি কবে হবে কেউ জানে না। প্রচন্ড দাবদাহে মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে যদি না সানস্ট্রোক হয়ে যায়। তাই এই প্রচন্ড দাবদাহ থেকে স্বস্তি পেতে বৃষ্টির আশায় চিরাচরিত প্রথায় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হল প্রত্যন্ত সীমান্তবর্তী এলাকা খোয়াই আশারাম বাড়িতে শনিবার রাতে। বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়েকে কেন্দ্র করে গত তিনদিন ধরে চলছিল বিভিন্ন আয়োজন। সাধারণত হিন্দু শাস্ত্রের একটি বিয়ের ক্ষেত্রে যে ধরনের আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয় সেই আচার অনুষ্ঠান মেনেই ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। এর জন্য প্রথমে পান খিলি, এরপর করা হয় মঙ্গলাচরণ, গায়ে হলুদ, অধিবাস ইত্যাদি পালন করা হয়। এই বিয়েতে ছেলের পক্ষ এবং মেয়ের পক্ষ উভয়েই এই আচার অনুষ্ঠান করেন বলে জানান মহিলারা। শেষে শনিবার রাতে বর (ব্যাংঙ) বিয়ের মালা পড়ে গাড়ি চড়ে বরযাত্রী নিয়ে মেয়ে (ব্যাংঙ)কে বিয়ে করতে তার বাড়িতে গিয়ে উঠে। সেখানে গিয়ে যা আচার বিচার তাই করা হয়। তাদের বিয়ের জন্য সাজানো হয়েছিল কুঞ্জ। জামাইকে বসানো হলো কুঞ্জের চেয়ারে এরপর স্ত্রী ব্যাঙকে নিয়ে আসলে কুঞ্জে সাত পাক ঘুরে মালা বদল করে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এবং সমস্ত বরযাত্রীরা সহ এলাকাবাসী মিষ্টি খেয়ে বিয়ের আনন্দ অনুষ্ঠানে সামিল হয়।বৃষ্টির জন্য খোয়াই আশারাম বাড়ি এলাকার লোকজন শনিবার বিকেল থেকেই ব্যাঙের সন্ধানে খোঁজ খবর করতে শুরু করে দেয়। অবশেষে অনেক খোঁজা খুঁজির পর তারা ব্যাংঙ পেয়ে যায় এবং ব্যাংঙের বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। শেষে আসামবাড়ী এলাকার লোকজন শনিবার রাত দশটা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চালিয়ে যায় ।এই অনুষ্ঠানে শতাধিক গ্রামবাসী অংশ গ্রহণ করেন । তারা দুটি পুরুষ ও স্ত্রী ব্যাঙ ধরে তাদের বিয়ে দেয়। গ্রামবাসীরা পুরো সময় “আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই”এই গানটি গেয়ে নাচতে থাকেন। এই দিন আশারাম বাড়ি এলাকায় ব্যাঙের বিয়ের অনুষ্ঠানের মূল আয়োজন কারীরা ছিলেন বিশেষ করে এলাকার স্থানীয় মহিলারাই। কেন ব্যাঙের বিয়ে এই বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামের মহিলারা জানান বৃষ্টি হবে কি না জানি না। কিন্তু আমরা বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেছি চিরাচরিত প্রথা মেনে। আমাদের পূর্বপুরুষরাও এই প্রথাকে মেনে ব্যাঙের বিয়ে দিতেন বৃষ্টির জন্য। এবং আমরাও তাদের সেই প্রথাকে অনুসরণ করলাম যাতে বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারব এবং প্রচন্ড দাবদাহ থেকে প্রত্যেকেই বেঁচে যাবে ও স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারবে যদি বৃষ্টি হয় বলে জানালেন খোয়াই আশারামবাড়ী এলাকার মহিলারা। মহিলারা এও জানান ব্যাংঙ দুটির বিয়ের পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় পাশের একটি পুকুরে। তবে এই ঘটনাটিকে অনেকেই অবাস্তব বলে মনে করতে পারেন আবার অনেকে কুসংস্কারও বলতে পারেন। কিন্তু প্রকৃতিতে এমন অনেক ঘটনা দেখা গেছে যে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়ার পর বৃষ্টি হয়েছে। এমন অনেক নজিরবিহীন ঘটনা ত্রিপুরা রাজ্যও ঘটেছে গত বছর দুয়েক আগে। ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া নিউজ চ্যানেল গুলি ফলাউ করে নিউজ করেছিল তারপর দেখা গেছে ঠিকই বৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার বিষয় সেই গ্রামবাসীদের মনের ইচ্ছা পূরণ করতে প্রকৃতি সবার প্রতি সহায় হয় কিনা। তবে একটি প্রবাদ বাক্য আছে বিশ্বাসে মিলে কৃষ্ণ তর্কে বহুদূর। এই বিষয়ে অনেকের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ের প্রথাকে মান্যতা দিয়ে ঈশ্বর সত্যি ভু মাতাকে বৃষ্টিস্নাত করাবেন অবশ্যই।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

four × 4 =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য