এইচআইভি ও এইডস সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা বাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আজ সচিবালয়ে ইনটেন্সিফাইড ইনফরমেশন এডুকেশন এবং কমিউনিকেশন (আইইসি) এর রাজ্যব্যাপী প্রচার অভিযানের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রচার অভিযান রাজ্যে আগামী দু’মাসব্যাপী চলবে।
এর পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সচিবালয়ে এইডস সংক্রান্ত বিষয়ে এক পর্যালোচনা সভায় মিলিত হন। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী এইচআইভি সংক্রমণ ও এইডস রোগ সৃষ্টির উৎসগুলিকে চিহ্নিতকরণ এবং সেই অনুসারে ব্যাপক জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, নাগরিক সচেতনতার মধ্য দিয়ে এইডস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। স্কুল পড়ুয়া থেকে শুরু করে কলেজ স্তরের ছাত্রছাত্রীদের এই রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে হবে। পাশাপাশি নেশায় আসক্ত হয়ে যাতে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটাতে না পারে তারজন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব নিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৮টি জেলায় ড্রাগ রিহেবিলিটেশন সেন্টার চালু করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাজ্য বাজেটেও এর উল্লেখ ছিল। এছাড়া বিশ্রামগঞ্জে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ বৃহত্তর একটি রিহেবিলিটেশন সেন্টার গড়ে তোলা হবে। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী এইডস রোগীদের আরও বেশি স্ক্রিনিং করা ও তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে সিকিমে সবচেয়ে কম এইডস আক্রান্ত রোগী রয়েছে। আমাদের রাজ্যে এক্ষেত্রে এই হার আরও নীচে নামিয়ে আনার জন্য এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান।
পর্যালোচনা সভায় মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, এইডস সংক্রান্ত তথ্য প্রচারের আগে দায়িত্বপূর্ণ সচেতনতা অবলম্বন করা প্রয়োজন যাতে অহেতুক এই সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, এইডস-এর প্রচার অভিযানের ক্ষেত্রে বিভিন্নস্তরে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালানো প্রয়োজন। এক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি যারা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত তাদের নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা ও সমন্বয়মূলক সভা করা আবশ্যক।
পর্যালোচনা সভায় রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে এবছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়গুলির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ১০০টির বেশি এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান। রাজ্যের ৮টি জেলার ৩১টি কলেজ ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রেড রিবন ক্লাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজে আইইসি সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতার জন্য রাজ্যে ১৩টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন। ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির স্ট্যান্ড এলোন ২৪টি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং ও টেস্টিং সেন্টার এবং স্ক্রিনিং ও টেস্টিং পরিষেবায় ১৩৩টি ফ্যাসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এবং টেস্টিং সেন্টার রয়েছে, ২৩টি ওএসটি সেন্টার চালু রয়েছে এবং আরও ৯টি সেন্টার শীঘ্রই চালু করা হবে। রাজ্যে ১টি মোবাইল আইসিটিসি ভ্যান চালু রয়েছে। সভায় সচিব শ্রী গিত্যে আগামীদিনে ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির কর্মপরিকল্পনা নিয়েও বিশদ আলোচনা করেন।
সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী বলেন, সমাজ সচেতনতা বাড়াতে সুসংহত পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকায় মহিলা পরিচালিত স্বসহায়ক দলগুলিকে যুক্ত করতে হবে। সভায় রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, অর্থসচিব অপূর্ব রায়, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, সমস্ত জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারগণ, ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ডা. সমর্পিতা দত্ত এইডস, নেশা বিরোধী কর্মসূচি এবং জনসচেতনমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং রাজ্যকে এইডস ও নেশামুক্ত করতে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।