খোয়াই প্রতিনিধি ৩০শে এপ্রিল….নেশামুক্তি শ্লোগানের আড়ালে নেশার জমজমাট কারবার।সর্ষের মধ্যেই ভূতের বাসা খোয়াইয়ে বি জে পি জেলা সভাপতির ছেলেদের নেশাকাণ্ডে সর্বত্র ছি ছি রব। বি জে পি নেতৃত্বাধীন ত্রিদলীয় জোট সরকারের জমানায় নেশামুক্তি শ্লোগানের আওয়াজ শুনে এখন কানে তুলো গুঁজে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।নেশামুক্তি শ্লোগানের আড়ালে এখন সুশাসনের জমানায় নেশার জম্পেশ কাজ কারবারের কথা ইতিমধ্যে জানে সর্বজনে।নেশার জমজমাট কাজ কারবারের পরিধি ইতিমধ্যে পরিব্যাপ্ত হয়ে গেছে শাসকদলের খোয়াই জেলা সভাপতির ঘরেও।জেলা সভাপতির গুণধর দুই ছেলের নামে নেশা কারবারের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিনের।জেলা সভাপতি কি জানেন না উনার ঘরের খবর।দিনকয়েক ধরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে এখন দুই জনই আপাতত জেল হাজতে।এন ডি পি এস কেইসের নির্দিষ্ট ধারায় দুই জনের নামেই মামলা নিয়েছে খোয়াই থানার পুলিশ।সাত বছর আগে সরকার বদলের পর পরই শাসক গেরুয়া পার্টির নেতা মন্ত্রীরা গগণ চুম্বী শ্লোগান তুলেছিলেন যে, এবার নেশামুক্ত স্বর্গরাজ্য গড়বো মোরা ত্রিপুরায়।বামফ্রন্টের সরকার নাকি রাজ্যটাকে নেশার আতুরঘরে পরিণত করে ছেলে ছোকড়াদের শেষ করে দিয়েছে।এবার নাকি নেশা নেশাখোর আর নেশার কারবারিদের কোন স্থান হবে না ত্রিপুরায় নতুন ত্রিপুরা হবে এবার। রীতিমতো ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে নেশার রোগ আর নেশার রোগীদের।মডেল রাজ্যে নাকি এবার নেশার নামগন্ধও থাকবে না তিল পরিমাণও।কিন্তু হায় রে অদৃষ্টের লেখা নেশার রোগ সাড়াই করার জন্য ঝাড়ু হাতে যে গেরুয়াধারী কবিরাজের দল ঘুরে বেড়ায় আর দস্তুর মতো মঞ্চ কাঁপিয়ে নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ার স্বপ্ন ফেরী করে বক্তৃতা ঝাড়ে সেই কবিরাজ কূলের ঘরেই আজ নেশার কারবারির বস বাস।নেশা তাড়ানোর কবিরাজদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন মহামহিম বিনয় দেববর্মা।বি জে পি দলের খোয়াই জেলা সভাপতি এই প্রবল পরাক্রমশালী জনজাতি নেতা বিনয় দেববর্মা।এই সেদিনও মঞ্চে দাপিয়ে নেশার বিরুদ্ধে সংস্কৃতির গুণগান করে বক্তৃতা দিয়েছেন বিনয় বাবু।পুরোনো টাউন হলের মঞ্চে নজরুলের জন্মবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিনয় বাবুও এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরার বাণী উদগীড়ন করেছেন।আজ সেই বিনয়ের ঘরেই নেশা কারবারের কারবারিদের বস বাস।বিনয়ের পুত্রদ্বয় সান্টি আর বান্টি, ওরফে বিপ্লব আর সৈকত নেশা কারবারের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে এখন আপাতত জেল হাজতে। এন ডি পি এস আইনের ২০( বি)/২৯নং ধারায় মামলা নেওয়া হয়েছে সান্টি বান্টির নামে।যে বিনয় দক্ষ গেরুয়া কবিরাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ঝাড়ু হাতে মঞ্চ কাঁপিয়ে নেশা আর নেশারু তাড়ায় আজ সেই বিনয়ের পুত্রদ্বয় নেশার কারবারি বলে অভিযুক্ত হয়ে জেল বন্দী।আপাতত চৌদ্দ দিনের জেল হাজত।আগামী ৮ই মে আবার আদালতে তোলা হবে বিনয়বাবুর পুত্রদ্বয়কে। তখনই জানা যাবে আদালতের পরবর্তী সিদ্ধান্ত।সর্ষের মধ্যেই ভূতের বাসা।খোয়াই জুড়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মধ্যে একরাশ ঘৃণা বিরাজ করছে।শাসকদলের লোকজনেরাই বলাবলি করছেন যে, জেলা সভাপতি পদে আর কাউকে কি খুঁজে পাওয়া গেল না! ছি ছি করছেন সবাই।অনেকেরই প্রশ্ন এই যে, খোয়াইয়ে শাসকদলের নেতারা মুখ দেখায় কী করে! জেলা সভাপতি অবশ্য ছেলেদের কাণ্ডকীর্তির পর সেই যে ঘরে ঢুকে দরজায় খিল তুলে দিয়েছিলেন এরপর আর তার দেখা নেই।মানুষের ছি ছি রব আর গণ ঘৃণা থেকে বাঁচতে গেলে এছাড়া তার আর কি ই বা বিকল্প ছিল! এক কালের আগমার্কা কট্টর বামপন্থী ছিল বিনয়বাবু।বামফ্রন্ট জমানায় চাকুরি হাতায় পঞ্চায়েত দপ্তরের করণিক পদে।মোহনপুর, গণ্ডাছড়ায় এল ডি ক্লার্কের চাকুরি করে এরপর পোস্টিং হয় খোয়াইয়ের পদ্মবিল আর তুলাশিখর ব্লকে।এর পরই প্রমোশন হয়।হেড ক্লার্ক বনে যান বিনয় বাবু।জয়েন করে আগরতলায় গুর্খাবস্তীর পঞ্চায়েত ডাইরেক্টরেটে।বামপন্থী কর্মচারী নেতা ছিল বিনয় বাবু।সেখানে গিয়ে অফিসের এক ডিভোর্সি , নাকি বিধবা মহিলাকে সহকর্মী হিসেবে পেয়ে যায়।ব্যাস আর যায় কোথায়! রঙ্গরসে মজে যায় বিনয়।দুজনের প্রেমের জমজমাট কাহিনী সর্বত্র প্রচার হতে থাকে।আর এই দিকে নতুন প্রেমিকা জুটে যাওয়ায় স্ত্রী আর চার পুত্রের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিনয় বাবুর।খোয়াইয়ের লালছরা বাড়ীতে টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয় বিনয় বাবু।স্ত্রী পুত্ররা অথৈ জলে পড়ে হাবুডুবু খেতে থাকে।এই অবস্থায় বিনয়ের ছেলেরা রুজি রোজগারের জন্য অনৈতিক ও বেআইনী কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে।বিনয় দেববর্মার স্ত্রী একসময় আইনের দ্বারস্থ হয়।খোরপোষ দাবী করে।বিচার বৈঠক হয়।হাজার দশেক টাকা স্বামীর বেতন থেকে পেতে থাকে স্ত্রী।এরপর একসময় স্বেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে দেয় বিনয় দেববর্মা।এরপর থেকে পেনশন থেকে মাসে হাজার ছয় সাতেক করে পেতে থাকেন প্রাক্তন স্ত্রী।আইনগত ডিভোর্স এখনো হয়নি বিনয় বাবুর সাথে ওনার স্ত্রীর।সংসারের কোন দায়িত্বই পালন করেনি বিনয় দেববর্মা।ফলে অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে যায় গোটা পরিবার।আর তাতেই ছেলেরা অসামাজিক কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে।তাই স্বাভাবিক ভাবেই ছেলেদের আজকের এই অবস্থার দায়ভার বাবা হিসেবে কিছুতেই অস্বীকার করতে পারেনা বিনয় দেববর্মা।২০১৮সালে সরকার পরিবর্তনের পর দল বদল করে বিনয় বাবু।সি পি এম-র নির্বাচনী তহবিলের পঁচাশি লক্ষ টাকা আত্মসাত করা আরেক দল বদলু নেতা বিশ্বজিত দত্তের মাধ্যমে নতুন শাসকদল বি জে পি দলে অভিষেক হয় বিনয় বাবুর।হাল আমলে বি জে পি র জেলা সভাপতি বনে যান জনৈক নিকটাত্মীয় রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের মদতপুষ্ট হয়ে।যে সাধারণ সম্পাদক আবার ২০২৮সালে দ্বিতীয়বারের জন্য খোয়াই কেন্দ্রে পদ্ম চিহ্নে প্রার্থী হবার জন্য দৌড় ঝাঁপ করছেন।
এখন দেখা যাক শাসকদলের রাজ্য নেতৃবৃন্দরা খোয়াই জেলা সভাপতি সম্পর্কে কী সিদ্ধান্ত নেয়। উক্ত বিষয়টা খোয়াইয়ের অনেকেই ভালোভাবেই জানে যে, বিনয় দেববর্মার জন্যই আজ তার সুখের সংসারের এই হাল দশা।বিবাহিতা স্ত্রীর স্বামী হিসেবে বা চার পুত্রের জন্মদাতা বাবা হিসেবে ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করেন নি তিনি।ফলে জেলা সভাপতির সংসারে আজ অশান্তির কালো মেঘ ঘুরপাক খাচ্ছে। উনার নিজের জন্যই দুই ছেলে আজ জেল হাজতে। এধরনের এক ব্যক্তিকেই কিনা শাসকদল খোয়াই জেলা সভাপতি পদে বেছে নিয়েছে।যা আজ চরম লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসকদলের কাছে।কিন্তু প্রশ্ন হলো কার স্বার্থে বা কাদের স্বার্থে বিনয়ের মতো লোকেরা আজ দলের জেলা প্রধানের চেয়ারে ?বিনয় বাবুকে শিখণ্ডী বানিয়ে বা ধরো লক্ষণের মতো নীরব দর্শকের ভূমিকায় রেখে ক্ষমতার মধুভাণ্ড চুষে চুষে নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্যই কি বিনয়ের এক নিকটাত্মীয় সাধারণ সম্পাদক বিনয়কেই বেছে নিলেন! তিনি তার পথের কাঁটা পরিষ্কার রাখার জন্যই কি বিনয় বাবুর মতো বিতর্কিত লোককে বেছে নিলেন! সবার মুখে মুখে এই প্রশ্নই ঘুরছে ।যা বর্তমানে শাসকদলের নেতা কর্মীদেরই মুখে মুখে!