বাসুদেব ভট্টাচার্যী খোয়াই ১৮ই মে……কথায় বলে নাচ,গান, আবৃতি, নাট্য চর্চা এইগুলি একটি শিল্প এবং একটা আর্ট।যা স্থান কাল পাত্র বিশেষ এই গুলি করা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা।এর জন্য চাই মননশীলতা, ধ্যান, জ্ঞান ও চর্চা।এই গুলিকে আয়ত্ব করতে না পারলে এই সংস্কৃতির জগতে একজন শিল্পী হয়ে উঠা খুবই কঠিন। তাইতো এইসবের দিক দিয়ে রাজ্যের মধ্যে খোয়াই মহকুমাটি আজও সংস্কৃতির পিঠস্থান হিসাবে পরিচিত।এক কথায় সংস্কৃতি আতুর ঘর যাকে বলে।তার মধ্যে এই সহর নাট্য চর্চার দিক দিয়ে এক কদম এগিয়ে রয়েছে। শুধু তাইনা বিশেষ করে নাট্য চর্চার দিক দিয়ে খোয়াই এর নাম রাজ্য সহ বহিঃ রাজ্যেও ক্ষ্যাতি অর্জন করেছে।এমন কি বড়দের নাটকের পাশাপাশি ক্ষুদে নাট্য শিল্পীরাও কম যায়না। তেমনি ভাবে খোয়াই কালচারাল ক্যাম্পেনের উদ্যোগে আয়োজিত ১৬ এবং ১৭ই মে সন্ধ্যায় খোয়াই পুরাতন টাউন হলে অনুষ্ঠিত হল নাট্য সন্ধ্যা। প্রথম সন্ধ্যায় কিশোর বিভাগের দ্বার মঞ্চস্থ হল দুটো নাটক। প্রথমার্ধে প্রকৃতির স্বাভাবিক শ্রীবৃদ্ধি রক্ষা করার খেত্রে শিশুদের মনের উপযোগী নান্দনিক নাট্য রচনা বিভু ভট্টাচার্যের ” প্রানের প্রদীপ জ্বেলে দাও”। বিপ্লব পালের নির্দেশনায় মঞ্চে উপস্থাপন করে একঝাঁক ছোট্ট নাট্য বন্ধুরা।টগর , জবা , কেয়া , কামিনী, কৃষ্ণচূড়া , অশ্বত্থ গাছগুলোর আনন্দময় পরিবেশে সাহেব দাদুর বনসাই বানানোর পরিকল্পনা যখন আসে তখন এই দুই বিপরীত ধর্মী অবস্থা সমবেত ভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে ফুটিয়ে তুলে বিহাঙ্গন পাল, প্রেয়সী দাস , আরাধ্যা কর , স্রেয়সী মুদি , অঙ্কিতা বড়ুয়া, আর্য আচার্য্য,আয়োষ দত্ত। রূপকথা দে ও প্রিয়াঙ্কা দাস ছাত্রীর চরিত্রে ছিল স্বাভাবিক। এই নাটকের বড় সম্পদ সাহেব দাদুর চরিত্রে ছিলেন অনুভব দে।
দ্বিতীয়ার্ধের নাটক ” আমরা সবাই রাজা ” রচনা সঞ্জয় কর । রবিবার স্কুল ছুটির বিকালে বন্ধুরা একসাথে খেলতে এসে নাটক করবে সহমত পোষণ করে রাজা চরিত্রে সবাই অভিনয় করার বায়না ধরে। এরই মাঝে দাদুর প্রবেশ, তিনি বলেন তোমরা সবাই রাজা হব। সবাই চিৎকার করে উঠল কিভাবে দাদু ? এই প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণে , আমাদের দেশের রাজতন্ত্র, বৃটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের সহজ সরল সত্য সুন্দর গল্প বলল সবাই মিলে। আমাদের দেশের মূল সুরের সাথে একাত্ম হয়ে বলে উঠল আমরা সবাই রাজা। বিশ্বায়ন পাল, বিরাজ দত্ত, অনুভব দে ,কোয়েল কর ,অন্তরা দে, সানভি দত্ত, অদ্রিজিত দত্ত পায়েল কর সমবেত অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করে নাটকের মূল ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়েছে। দুটি নাটকের আবহ সংগীতে দ্বীপজয় ভৌমিক, দেবব্রত পাল, সুস্মিতা সোম , মঞ্চ সজ্জায় রূপক চন্দ,প্রনব দাস ও রাজীব আচার্য্য,আলোক সম্পাতে দুলাল দাস যথাযথ। রূপসজ্জায় কুন্তল নাথশর্মার ভাবনা চিন্তার অবকাশ রয়েছে। দুটি নাটকের নির্দেশক হিসেবে বিপ্লব পাল আগামী দিনের জন্য সম্ভাবনাময়।
দ্বিতীয় সন্ধ্যায় বাংলার পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের একটি অনবদ্য আখ্যান কাব্য ” নক্সী কাঁথার মাঠ ” নৃত্যনাট্য রূপে মঞ্চে নিয়ে আসে শিল্পী সুজিত দাস। এই কাব্য উপন্যাসটির রূপাই ও সাজু নামক দুই গ্রামীণ যুবক যুবতীর অবিনশ্বর প্রেমের করুণ কাহিনী ফুটিয়ে তোলেন সুজিত দাস ও শ্রেয়া ভট্টাচার্য। এই কাহিনীকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ সমাজের সরল জীবন যাপনের প্রানবন্ত চিত্রায়ন সমবেত ভাবে ২৬ জন খুদে শিল্পীরা বিশ্বাসযোগ্য ভাবে ফুটিয়ে তোলে।আলোক প্রক্ষেপণের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে বলা যায় অনেক দিন পর খোয়াইয়ের মঞ্চে সার্বিক সফলতায় পৌঁছবে কালচারাল ক্যাম্পেনের প্রযোজিত নৃত্যনাট্য ” নক্সী কাঁথার মাঠ ।সেই অভিপ্রায় নিয়ে ঐদিন নাট্য মোদী দর্শকরা হাসি মুখে বাড়ি ফিরল।