বাসুদেব ভট্টাচার্জী খোয়াই ১লা মার্চ……. বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ খোয়াই মহকুমা এলাকাতে বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্কুল ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। এই স্কুলগুলি মধ্যে সবথেকে পুরনো বেসরকারি বনেদি স্কুল হল ডিরোজিও মিশন স্কুল। ২০০৪ সালে খোয়াই জাম্বুরা এলাকাতে এই স্কুলটির পথচলা শুরু হয়। এই স্কুলটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। তৎকালীন সময় খোয়াইয়ের প্রয়াত বিধায়ক সমীর দেব সরকার খোয়াইতে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নেই বলে বেশ কয়েকজনকে দিয়ে একটি ট্রাস্ট বডি বানিয়ে শুরু করা হয়েছিল স্কুলটি। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল ভালোই। প্রথম প্রথম স্কুলটি বেশ ভালই চলছিল। পরবর্তীতে লক্ষ্য করা যায় স্কুলটি যেন একটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাইরের চাকচক্য দেখে কেউ বুঝতে পারবে না পঠন পাঠন এর পরিধি কিরকম হচ্ছে। এই স্কুলের যে টাস্ট বডি রয়েছে এর মধ্যে দুই একজন আছে যারা খুবই চতুর ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি নিয়ে স্কুলটি পরিচালনা করবার চেষ্টা করছে। যদিও এই স্কুলটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আদৌ এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কতটুকো ইংরেজি শিক্ষা প্রদান করেন সেই বিষয়ে এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বললে পরিষ্কার বুঝা যাবে। প্রথম দিকে অর্থাৎ ২০০৪ সালের পর যেই পরিমাণ ছাত্র-ছাত্রী ছিল স্কুলে, আস্তে আস্তে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন অভিভাবকরা এই স্কুল থেকে ছাত্র ছাত্রীদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। যদিও এই স্কুলটি সি বি এস ই পরিচালিত। যে বছর সি বি এস ই অনুমোদন পেল এই ডিরোজিও মিশন স্কুলটি তখনই অনুমোদন আদায় করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ কি পরিমান মেকি সাজ সাজিয়েছিল সিবিএস ই কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনুমোদন আদায় করার জন্য। সেই সময়ের যারা ছাত্রছাত্রী তাদের সঙ্গে আলোচনা করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। করুনা কালীন সময় সারা ভারতবর্ষের স্কুল-কলেজ গুলি বন্ধ থাকলো, সেই সাথে ডিরোজিও মিশন স্কুল ও বদ্ধ ছিল, কিন্তু এই ডিরোজিও স্কুলের ট্রাস্ট বডি এতটাই ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ছিল যে, প্রত্যেকটা ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে সমপরিমাণ মাসিক বেতন তারা নিয়েছে। প্রতিটা ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে সম্পূর্ণ বেতন তারা নিয়েছেন। কিন্তু এখানে প্রশ্ন থাকে বেতনের যে রশিদ সেখানে উল্লেখ করা আছে কোন কোন বিষয়ের উপর তারা চার্জ নিচ্ছে । এখানে প্রশ্ন থেকে যায় সবমিলিয়ে যে বেতন প্রদান করতে হয় অভিভাবক অভিভাবকদের সেখানে উল্লেখ থাকে ইলেকট্রিক বিল, স্মার্ট ক্লাস, কম্পিউটারের চার্জ, মিউজিক ক্লাস সব মিলিয়ে নির্ধারিত একটা বেতন হয়। করুণা পিরিয়ডে কোন ছাত্র-ছাত্রী স্কুলেই গেল না তাহলে সম্পূর্ণ বেতন ভাতা কেন তারা নিলেন?যদিও অভিভাবকরা এই বিষয়ে কিছু বলতে যায়নি ছেলে মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। কিন্তু সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারল না এক ছাত্র। অবশ্য এর দায় নিলোনা স্কুল কর্তৃপক্ষ। সিবিএস ই পরিচালিত মাধ্যমিক পরীক্ষায় একটি বছর পিছিয়ে গেল দারিদ্র পরিবারের একমাত্র সন্তান। শুক্রবার ছিল সি বি এস ই পরিচালিত মাধ্যমিকের হিন্দি পরীক্ষা। খোয়াই মহকুমা রাম চন্দ্র ঘাট বিধানসভার অন্তর্গত লাল টিলা এলাকার ডিরোজিও মিশন স্কুলের ছাত্র বাপন দেব জহর নবোদয় বিদ্যালয়ে যান পরীক্ষা দিতে অন্যান্য ছাত্রদের মত। যদিও সে বাংলা বিভাগের ছাত্র। কিন্তু পরীক্ষা হলে গিয়ে জানতে পায় শুক্রবার ছিল হিন্দি বিষয়ক পরীক্ষা। সঙ্গে সঙ্গে সেই ছাত্রটির মাথায় যেন বাজ পরে যায়। স্কুল থেকে সোজা লাল টিলার বাড়িতে চলে এসে পরিবারকে ঘটনাটি জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে। ঘটনাটি জেনে হতদরিদ্র মা-বাবাও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। মা-বাবার অভিযোগ, ৫ মাস আগে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে খোয়াই জাম্বুরার বনেদি বেসরকারি স্কুল ডিরোজিও মিশন স্কুলে
বাপন কে ভর্তি করায় খুব কষ্টে সুদে টাকা এনে। বাপনে এর হিন্দি কোন বিষয়ই ছিল না। সে বাংলা নিয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে বলে বাপনের মা জানান। কিন্তু শুক্রবার যখন শুনতে পারেন বাপন পরীক্ষা দিতে পারেনি তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে দরিদ্র পরিবারের মাথায়। দুপুরে লালটিলা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে খোয়াই শহরের জাম্বুরা ডিরোজিও মিশন স্কুলের ছুটে যান বাপনের পরিবার বাপনকে সাথে নিয়ে। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি দায় অস্বীকার করে বলে বাপনের রেজিস্ট্রেশনে হিন্দি বিষয় নাকি তোলা ছিল। তাদের সামনেই ভেরিফিকেশন হয়েছে আগে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে যায়। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারের আর্তনাদ পাঁচ মাস আগে মাঝ পথে মোটা টাকার বিনিময়ে কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ তার ছেলেকে ভর্তি করালো এর কোন সদুত্তর স্কুল কর্তৃপক্ষ দিতে পারিনি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা অনুরাগী মহলের বক্তব্য সি বি এস ই পরিচালিত কোন স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার ৬ মাস আগে কোন ছেলেকে ভর্তি করানো সম্ভব কিনা। আর যদিও ভর্তি করানো হয় শিক্ষার অনুরাগী মহলের বক্তব্য মোটা অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করানো হয়েছে। যেই ছেলেটি পরীক্ষা দিতে পারল না তার জীবন থেকে এক বছর এমনিতেই নষ্ট হয়ে গেল এর দায়ভার কে গ্রহণ করবে। গোটা ঘটনাটি নিয়ে খোয়াই মহকুমা এলাকার শিক্ষা অনুরাগী থেকে অভিভাবক মহল ডিরোজিও মিশন স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করে।