Saturday, July 27, 2024
বাড়িখবরশীর্ষ সংবাদপূজা পরিক্রমা খোয়াই ২০২৩

পূজা পরিক্রমা খোয়াই ২০২৩

বাসুদেব ভট্টাচার্যের খোয়াই ১৮ই অক্টোবর….আর মাত্র কয়েকদিন পর হতে চলেছে বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা।আর একে কেন্দ্র করে বাঙ্গালীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই তাইতো বলে বাঙালিরা বারো মাসে তেরা পারবেন পালন করে,এর মধ্যে সবথেকে বড় পার্বন হল একটি সেটি হলো দুর্গা পূজা।একে কেন্দ্র করে পুজোর এক মাস আগে থেকেই বাঙালিরা নিজেদেরকে বিভিন্নভাবে তৈরি করে ফেলে যে কিভাবে পুজোয় আনন্দ করবেন পুজোর চারটে দিনে।এতে করে ছোট-বড় বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই পুজোতে বিভিন্ন জামা কাপড়, জুতো,বিভিন্ন প্রসাধনী ইত্যাদি ক্রয় করতে বাজারে বিভিন্ন দোকানে ভিড় জমান।আর অন্যদিকে প্রত্যেক দোকানিরা তাদের নিজ নিজ পসারী সাজিয়ে খদ্দেরের আশায় বসে থাকেন যদিও বাজারে তেমন ভিড় দেখা যাচ্ছে না।এই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে জাতি ধর্ম ,বর্ণ ,নির্বিশেষে সবাই অপেক্ষা করে থাকে এই দুর্গাপুজোর চারটে দিন সমস্ত দুঃখ বেদনা ভুলে পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে থাকতে।এবং মায়ের চরণে পুষ্পার্ঘ দিতে পুজোর প্রত্যেকটি দিনে মার ভক্তরা পুজো করে থাকেন নিজেদের সুখ সমৃদ্ধির জন্য এবং নিজ নিজ সংসারও কর্মক্ষেত্রে উত্থানের জন্য প্রার্থনা করে থাকেন।এবার খোয়াই মহকুমাতে দূর্গা পূজা করার জন্য পুলিশ প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় 80 টি ক্লাব পূজার অনুমতি পত্র নেন বলে জানান পুলিশ।তবে একটি বিষয়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং বিশেষ করে বিভিন্ন কাপড় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে তাদের অবস্তা জানতে চাইলে খোয়াই মহকুমার বিভিন্ন কাপড় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাজায় পূজাতে যেমনই ব্যবসা হোক না কেন তারা মার খাচ্ছেন অনলাইন শপিং এর কাছে।খোয়াই সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহরের ব্যবসায়ীদের একই অবস্থা অনলাইনে কাপড় কেনার একটা ধুম পরে পুজোর সময় তাতে করে এর প্রভাব পড়ছে কাপড় ব্যবসায়ীদের উপর।শুধু কাপড় ব্যবসায়ী কেন অন্যান্য জিনিসপত্র ও রয়েছে যেমন জুতা ,বিভিন্ন প্রসাধনী সহ আরো অনেক জিনিস ।এর পর ও সমস্ত ব্যবসায়ীরা আশাবাদী যে তারা পূজোয় ভাল ব্যবসা করতে পারবে সেই আশায় রয়েছেন। অন্যদিকে কুমার পাড়াতে মৃৎশিল্পীরা নিজ নিজ প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত এবং শেষ তুলে টান দিলেই মূর্তি তৈরি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে প্রত্যেকটি প্রতিমা চলে যাবে নিজ নিজ ক্লাব ঘরে।এখন চলে আসি খোয়াই মহকুমার কয়েকটি ক্লাবের পূজাতে যে তারা কি কি পরিকল্পনা নিয়ে পুজো আয়োজন করছে এবং নিজ নিজ মণ্ডপে দর্শনার্থীদের টানতে সে বিষয়ে কয়েকটি ক্লাবের পুজোর থিম নিয়ে আলোচনা করছি যারা কিছু বড় বড় পুজো করছে খোয়াইতে।প্রথমেই চলে আসি খোয়াই অফিস টিলার স্কাইলার্ক ক্লাবের কথায়।

স্কাইলার্ক ক্লাব:—–এই ক্লাব কি ধরনের পুজো করছে জানতে চাইলে পুজো কমিটির সম্পাদক পিন্টু রায় জানান এই বছর ক্লাবটি দিল্লির লালকেল্লাটি বানাচ্ছেন ।যা বানাতে তাদের খরচ হবে ১০ লক্ষ টাকার মতন । লালকেল্লার আদলে মন্ডপ টি বানাচ্ছেন কলকাতার শিল্পী মিটন হালদার।তিনি জানান সম্পূর্ণ মণ্ডপটি তৈরি হচ্ছে বাঁশ কাঠ ও কাপড় দিয়ে মন্ডপটির উচ্চতায় প্রায় ৪০ ফুট প্রস্তে ত্রিশ ফুট এবং দৈর্ঘ্যে ৫০ ফুট। এই ক্লাবের প্রতিমা বানাচ্ছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পী কৃষ্ণ রুদ্র পাল। আলোকসজ্জা পরিবেশ অনুযায়ী।এছাড়া ক্লাবের পূজো কমিটির সভাপতি হচ্ছেন সরজিত দাস এবং কোষাধ্যক্ষ শিশির কান্তি পাল চৌধুরী।

এভার গ্রিন ক্লাব ;—- এই ক্লাবটি রয়েছে সুভাষ পার্ক কালীবাড়ি এলাকাতে ।এই ক্লাবের পূজো কমিটিতে রয়েছে সম্পাদক শানু দেবনাথ,সভাপতি আশীষ দেব,এবং কোষাধ্যক্ষ অনির্বাণ দেব।এ বছরএই ক্লাবটি কি ধরনের পূজা করছে জানতে চাইলে সম্পাদক শানু দেবনাথ বলেন ইতালি শহরের ভার্টিকান সিটির আদলে ওরা এই মন্ডপ তৈরি করছে। এই পুজাতে তাদের এবার বাজেট ১০ লক্ষ টাকা ।মন্ডপ তৈরি করছেন খোয়াই জেলার গৌরাঙ্গ টিলার শিল্পী দেবব্রত দেববর্মা।তিনি বলেন মণ্ডপের উচ্চতা হবে ৭০ ফুট দৈর্ঘ্যে ৬০ফুট প্রস্তে চল্লিশ ফুট।তারা মন্ডপটি তৈরি করছে বাঁশ বেত কাঠ এবং কাপড় দিয়ে।এই ক্লাবের প্রতিমা বানাচ্ছেন স্থানীয়. মৃৎশিল্পী সুনীল রুদ্র পাল আলোক সজ্জা করছেন স্থানীয় কার্তিক নম দাস ।পুজো কমিটির কর্মকর্তারা আশাবাদি তাদের এই মন্ডপে দর্শনার্থীদের ভির জমাতে পারবেন বলে।

জি এ বি ক্লাব :—–এই ক্লাবটি রয়েছে খোয়াই শহরের প্রাণকেন্দ্র নৃপেন চক্রবর্তী এভিনিউ সংলগ্ন ।এ বছর তাদের ক্লাবপুজো কমিটির সম্পাদক সোম দাস,সভাপতি শক্তিময় দেব,এবং কোষাধ্যক্ষ পলাশ দে সরকার,এ বছর কি ধরনের থিম নিয়ে পূজা করছেন জানতে চাইলে পুজো কমিটির সম্পাদক সোমনাথ বলেন এবার এই ক্লাবের বাজেট হয়েছে ১৬ লক্ষ টাকা।এবং এই ক্লাবের মন্ডপ তৈরি হচ্ছে চন্দ্রযান থ্রি এবং বিক্রম লেন্ডার এর আদলে।এই মন্ডপ টি তৈরি করছেন স্থানীয় শিল্পী জন্মেজয় দেববর্মা।তিনি জানান মন্ডপের উচ্চতা হচ্ছে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যে ৪৫ ফুট সমস্ত মণ্ডপে তৈরি হচ্ছে বাঁশ বেত কাঠ ও কাপড় দিয়ে।এই ক্লাবের প্রতিমা বানাচ্ছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পী সুনীল পাল আলোক সজ্জা থাকছে মন্ডপ অনুযায়ী।

উত্তর রামচন্দ্র ঘাট সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি :——এই নামাকরনেই ক্লাবটি পুজো করছে এ বছর এটি উত্তর রামচন্দ্র ঘাটের একটি গ্রামীণ পূজা হলেও বিশাল অংকের বাজেট নিয়ে পুজোতে নেমে ছেন এলাকাবাসী ।এবার পুজো কমিটিতে যারা যারা রয়েছেন এরা হলেন সম্পাদক চিন্তু দেব,সভাপতি সতীশ রুদ্র পাল,কোষাধ্যক্ষ বিপ্লব দত্ত ।পুজো কমিটির সম্পাদক চিন্তু দেবের সাথে কথা বলে জানা যায় এ বছর তারা এ পুজোর জন্য বাজেট করেছে ১৫ লক্ষ টাকা। এবং মন্ডপ তৈরি করছে একটি কাল্পনিক মন্দিরের আদলে ।মন্ডপ তৈরি করছে তেলিয়ামুড়া শিল্পী জীবন দাস তিনি জানান মণ্ডপটির উচ্চতা ৭০ফুট,দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ ফুট।এছাড়া এই পুজোতে দুর্গা প্রতিমা বানাচ্ছেন খোয়াই জেলার বাগানবাজার এলাকার এক পশ্চিমা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মৃৎশিল্পী শৈলেন তাঁতি ।যাকে তাতি সম্প্রদায় হবার কারণে বাগান বাজার এলাকার এক মৃৎশিল্পী একটি কথা কে কেন্দ্র করে শৈলেন তাঁতি কে অপমান করেছিল আজ থেকে ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে ।সেই অপমানে তখন থেকেই মূর্তি বানানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন শৈলেন তাঁতি একের পর এক মূর্তি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন খোয়াই জেলাবাসীকে।তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে একজন গুরু এবং কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই যে মূর্তি বানানো যায় তা তিনি করে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন ।এবং মন খুলে একটা কথা বলেছিলেন এই কাজের জন্য তিনি কোন গুরুর সান্নিধ্য লাভ পাননি এমনকি কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই সেই অপমানের জেদে আস্তে আস্তে করে মূর্তি তৈরীর কাজে নিজেকে তৈরি করেছিলেন এরপর ২০২০ /২০২১ সালে বাগানবাজার এলাকার বাঘাযতীন ক্লাবের মূর্তি বানিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন এরপর এই বছর উত্তর রামচন্দ্র ঘাটের সার্বজনীন দুর্গাপূজাতে প্রতিমা বানানোর কাজের বরাত পান ।যার কারণে এই প্রতিমা তৈরি করতে তিনি এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক মূল্য নিচ্ছেন।মূর্তি বানিয়ে কল্যাণপুর এলাকা থেকে তিনি তিনবার পুরস্কৃত হন বলেও জানান।এছাড়া আলোকসজ্জা থাকছে মণ্ডপ অনুযায়ী।

সূর্য তরুণ সংঘ :—-এই ক্লাবটি রয়েছে খোয়াই মহকুমা এলাকার চেবরিতে।এই ক্লাবের পূজো কমিটিতে রয়েছে সম্পাদক নিত্য গোপাল রায় এবং চয়ন আচার্য,সভাপতি তপন শুক্ল দাসও বিশ্বজিৎ রায়, কোষাধ্যক্ষ সঞ্জয় রায়।কি ধরনের পূজা করছেন জানতে চাইলে পুজো কমিটির সম্পাদক নিত্য গোপাল রায় বলেন প্রতিবছর এই ক্লাবটি রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন নিজস্ব থিম গুলি নিয়ে পূজোর মন্ডপ তৈরি করে এই ক্লাব কখনোই কাল্পনিকভাবে কোন মন্ডপ আজ পর্যন্ত তৈরি করেনি। যার ফলে এ বছর ওরা মণ্ডপ তৈরি করছে স্থানীয় আগরতলা বাধারঘাট রেল স্টেশনের আদলে এক কথায় আগরতলার রেলস্টেশন টিকে মন্ডপের আদলে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে ।তাতে করে তাদের এ বছরের বাজেট ১২ লক্ষ টাকা ।এবং মণ্ডপটি তৈরি করছেন তেলিয়ামুড়া এলাকার মন্ডপ শিল্পী পিন্টু সাহা।উনার সাথে কথা বললে উনি জানান মন্ডপের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৮০ ফুট , উচ্চতায় ৪৫ ফুট ।মন্ডপ তৈরি হচ্ছে কাঠ এবং কাপড় দিয়ে।পুজোতে এই ক্লাবের প্রতিমা তৈরি করছেন স্থানীয় মৃৎশিল্পী নির্মল পাল। এবং আলোক শয্যায় সাহায্য করছেন শিল্পী পিন্টু সাহা। তবে এখানে দেখা যাচ্ছে যে সমস্ত ক্লাবগুলি বড় বড় পূজা করছে তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ প্যান্ডেলে দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে টানতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্নভাবে।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

three × 2 =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য