ধর্মীয় পর্যটন, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের উপর কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই দুটি ক্ষেত্রে নানা প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের বর্তমান সরকার কাজ করছে। রাজ্যগুলিকেও এই দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করতে হবে। আজ বিকেলে রাজ্য অতিথিশালায় ত্রিপুরার পর্যটন নিয়ে আয়োজিত এক পর্যালোচনা সভায় কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপী একথা বলেন। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় পর্যটন শিল্পের বিকাশের প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রকৃত পেশাদারি মনোভাব নিয়ে চলতে হবে। পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের বিরাট সুযোগ রয়েছে। পর্যটনের মাধ্যমে স্বরোজগারী হওয়ার জন্য বেকারদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে মুদ্রা লোন একটি বড় ভূমিকা নিতে পারে। নবপ্রজন্ম এগিয়ে এলে শুধু তারাই স্বাবলম্বী হবে না ত্রিপুরাও এর মাধ্যমে লাভবান হবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে অন্য রাজ্যগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়কে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার উপর পরামর্শ দিয়েছেন।পর্যালোচনা সভায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, পার্বতী রাজা ত্রিপুরায় এই সময়টা ট্যুরিজমের পিক আওয়ার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। এই সময়ে নানা অনুষ্ঠান বিশেষ করে গ্রামে গিয়ে খাদ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর উৎসবের আয়োজন করার জন্য শ্রী গোপী পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই উৎসবগুলিতে দেশের অন্য রাজ্যগুলিকেও সামিল করতে হবে। এগুলিতে দেশের নামী ক্রীড়াবিদদের মধ্য থেকে কাউকে সামিল করা হলে এই উৎসব অনেক বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। একে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্প যেমন বিকশিত হবে তেমনি রাজ্যের আয়ও বাড়বে। সবচেয়ে বড় কথা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। নির্দিষ্ট কোনও মাসকে ত্রিপুরা মাস হিসেবে পালন করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার জন্য পরামর্শ দিয়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে পর্যটনের বিকাশে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। ত্রিপুরা এভাবে এগিয়ে গেলে গোটা দেশের মধ্যে বিষয়টা একটা মডেল হিসেবে প্রতিপন্ন হতে পারে। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতে বিনষ্ট না হয় তা সুনিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, পরিবেশ যাতে কোনোভাবেই দূষিত না হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। রাজ্যে পর্যটকরা এলে তারা যাতে কোনও অসুবিধার সম্মুখীন না হন তা সুনিশ্চিত করার উপরও তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখতে হবে। তবেই রাজ্যের পর্যটন শিল্প আরও বিকশিত হবে।পর্যালোচনা সভায় ত্রিপুরার পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিত পথে রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্পের বিকাশে কাজ করছে। পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা তথা পর্যটন উন্নয়ন নিগমের এমডি প্রশান্ত বাদল নেগি পর্যটন দপ্তরের কাজকর্ম বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি জানান, রাজ্যে পর্যটকদের আগমনের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩-২৪ সালে রাজ্যে ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার ২৯৯ জন পর্যটক এসেছিলেন। এরমধ্যে ৪ লক্ষ ৬৯ হাজার ৩২৮ জন দেশি এবং ৭৫ হাজার ৯৭১ জন হচ্ছেন বিদেশি পর্যটক। ২০২২-২৩ সালে রাজ্যে আসা পর্যটকদের সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৩৬ জন। এরমধ্যে দেশি পর্যটক ছিলেন ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৭১২ জন ও বিদেশি পর্যটক ছিলেন ৩৫ হাজার ১২৪ জন। চলতি বছর ৭ লক্ষের মতো পর্যটক রাজ্যে আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা আগরতলা থেকে আইজল, শিলং, ডিব্ৰুগড় রুটে পুনরায় বিমান চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী শ্রী গোপীর কাছে দাবি জানিয়েছেন। বৈঠকে আগরতলা পুরনিগমের অতিরিক্ত পুরকমিশনার মহম্মদ সাজ্জাদ পি এবং পর্যটন দপ্তরের আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, তিনদিনের রাজ্য সফরে কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আজ দুপুরে রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন। দুপুরে এমবিবি বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগি। সরকারি অতিথিশালায় পর্যটন নিয়ে পর্যালোচনা সভার পর কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আগরতলা-আখাউড়া চেকপোস্ট পরিদর্শন করেন। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আগরতলার ওএনজিসির প্রধান কার্যালয়ে ওএনজিসি ও ত্রিপুরা পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের আধিকারিকদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন।