বাসুদেব ভট্টাচার্যী খোয়াই ২০শে ফেব্রুয়ারি….. তাইতো বলাহয় সাংস্কৃতিক সহরের পীঠস্থান হল খোয়াই সহর। খোয়াই সহরটি শুধু সংস্কৃতির শহরই নয়, শিল্পেরও শহর। এই শহর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষ্যাত নামা শিল্পীদের জন্ম।তাইত ত্রিপুরার ইতিহাসের পাতায় খোয়াই শহরের নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা ।শুধু তাইনা খোয়াই শহরটি রাজ্যের শিল্প, সংস্কৃতি চর্চার এক আঁতুড় ঘর ।এই নাট্য চর্চার দিক দিয়ে আশি এবং নব্বই এর দশকে নাট্য চর্চা নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার নাট্য কর্মীরা নাটক নিয়ে কি ধরনের যে উন্মাদনায় ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।এর পাশাপাশি খোয়াই এর নাট্য মোদি দর্শকরাও সেই নাটক গুলি দেখতে থিয়েটারের টিকিট কেটে ভিড় জমাত। নাট্যচর্চা, নাটক করা নিয়ে সেই সময়টা ছিল নাট্যকর্মীদের জন্য এক দক্ষযজ্ঞ। কোন সংস্থা কার থেকে বেশি ভালো নাটক প্রযোজনা করে দর্শকদের কিভাবে খুশি করতে হয় বা প্রেক্ষাগ্রিহে দর্শকদের টানতে হয় সেই পরিকল্পনাও করতে হতো।তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করত আর একের পর এক বলিষ্ঠ নাটক গুলি প্রযোজনা হতো খোয়াই এর পুরাতন টাউন হলে। ঐ সময়টাতে চলত প্রতিবছর কালচারাল ক্যাম্পেন এর শেখরস্মৃতি নাট্য উৎসব,তৎসহ নাট্য সংসদের নাট্য মেলার নাটক দেখতে দর্শকদের উন্মাদনা ছিল ব্যাপক।একেতো চলছে ইন্টারনেটের যুগ,অন্ন দিকে কালের প্রবাহে গত দুই দশক নাট্য চর্চার দিক দিয়ে খোয়াই এর নাট্য আন্দোলন এবং নাট্য চর্চা অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছিল।যদিও সৌরজিৎ গোপ এর মত নব প্রজন্মের নাট্যকাররা সেই হালটা ধরার ফলে খোয়াইতে নাট্য চর্চার দিক দিয়ে নতুন দিগন্তের দীশা পেল সেটা বলাযায়। ত্রিপুরার নাট্যচর্চার ধারার দিকে তৎকালে দেখা যায় এই খোয়াই শহর ত্রিপুরা নাট্য জগতকে উপহার দিয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠ নাট্যকার এবং প্রচুর নাট্যকর্মীকে। যেমন হীরেন্দ্র সিনহা, কমল রায়চৌধুরী, চন্দন সেনগুপ্তের মত নাট্যকারদের । পাশাপাশি প্রচুর নাট্যকর্মী রয়েছেন যারা দর্শকদের মন জয় করতে এক ফোঁটাও নিজেদের অভিনয়ে কারচুপি করেনি।যার ফলে তৎকালিন সময়ে প্রত্যাকটি নাটক উপস্থাপনের দিক দিয়ে গগনচুম্বী সাফল্য পেয়েছিল। যারা এই সাফল্যে গুলি এনেছিলেন নাট্য জগতে এরা হলেন কমলা রন্জন ভট্টাচার্য,নিরেন ঘোষ,বিজন ভৌমিক,প্রমোদ রায়,বিভু ভট্টাচার্য,হীরেন্দ চৌধুরি (রানা চৌধুরি) অভিক প্রসাদ চক্রবত্তী,জীবন ঘোষ,পরেশ সুত্রধর,অরুন পাল,শেখর ভট্টাচার্য, সঞ্জয় কর, অসীম রায়,নন্দা চৌধুরি,রেখা সরকার,রেখা দত্ত,বিশু ভট্টাচার্য,কমল মজুমদার,ননী গোপাল দাস,সিবু রায় ২ জন পার্থ সারথী রায়,লিখা বিশ্বাস,সমির রায়,হরিপদ সিনহা,উত্তম সিনহা,সুপ্রীতি ঘোষ সহ আরো অনেকে রয়েছেন। খোয়াইয়ের নাট্য সংসদ, কালচারাল ক্যাম্পেইন ইত্যাদি নাট্য সংস্থাগুলো তৎকালীন সময়ে বাংলা নাট্যধারায় অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। এই সমৃদ্ধ ও গৌরবময় শহরের সংস্কৃতি ধারায় আরেকটি পালক সংযোজিত হলো এবার। ২০২৫ সালের ৪৩তম আগরতলা বইমেলায় রাজ্যের বিশিষ্ট গুণীজনদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিসীম ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে তাদেরকে ভূষিত করা হয়। নাট্যচর্চার দিক দিয়ে বিশেষ অবদানের জন্য ৩৫ বছর বয়সের নিচের যে উজ্জ্বল তারুণ্যকে অজিত মজুমদার স্মৃতি পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়। তিনি হলেন খোয়াইয়ের নাট্য সংসদের তরুণ সম্পাদক তথা বিশিষ্ট নাট্যকর্মী সৌরজিৎ গোপ। খোয়াই তথা রাজ্যের নাট্যচর্চার ধারায় সৌরজিৎ এক নতুন জ্যোতিষ্ক। বর্তমান সময়ে নাট্য সংসদের দায়িত্বভার কাঁধে নিয়ে তিনি নাট্য সংসদকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন । যার ক্ষ্যাতি বর্তমান সময়ে রাজ্য সহ বহি রাজ্যেও ছড়িয়ে পরেছে।২০০৪ সালে রাজ্য তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশিষ্ট নাট্যকার হীরেন্দ্র সিনহার হাত ধরে সৌরজিৎ গোপের নাট্যমঞ্চে প্রবেশ। শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি উনার ছিল প্রবল ঝোঁক যারফলে বিদগ্ধজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন তনি। খোয়াইয়ের বিভিন্ন নাট্য উৎসব প্রতিযোগিতা ও কর্মশালায় উনার অভিনয় দর্শক এবং নাট্যপ্রেমীদের মন জয় করতে সমর্থ হয়। বহুবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার শিরোপা উনাকে নাট্য জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করছে। রাজ্যে ও বহিঃরাজ্যের বিভিন্ন বিশিষ্ট নাট্যকারদের সংস্পর্শে এবং শিক্ষায় ঋদ্ধ সৌরজিৎ গোপ অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনার ক্ষেত্রেও উনার দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন বেশ কয়েক বার। বিভিন্ন নাট্য উৎসব ও প্রতিযোগিতায় উনার নির্দেশিত নাটকগুলি শ্রেষ্ঠত্বের পদক গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি তিনিও ভূষিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ নির্দেশকের ভূমিকায়। তাছারা তিনি রচনা করেছেন ছোটদের ও বড়দের বেশ কয়েকটি নাটক। উনার রচিত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটক হলো ভাসান, বীরাঙ্গনা কাঞ্চন, প্লাস ইক্যুয়েল টু মাইনাস ,’অনন্যা’ ইত্যাদি। বর্তমানে তিনি রাজ্যে এবং রাজ্যের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় উনার রচিত নাটক অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নাট্য সংসদ এবং রাজ্যের সুনাম বৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছেন।এই ভাবে যদি আগামী দিন তরুন তুর্কীরা নাট্যকার হিসাবে এগিয়ে আসেন তাহলে খোয়াই এর নাট্য চর্চার দিনটা আরো বলিষ্ঠ হবে বলে মনে করছেন নাট্য জগতের নাট্য পিপাসু দর্শকরা।