বাসুদেব ভট্টাচার্যী খোয়াই ২৯ শে নভেম্বর….. এই পৃথিবীতে যারা জন্মগ্রহণ করে তাদের প্রত্যেককে একদিন এই জগতের মায়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অসময়ে চলে গেলে তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপ ও গুনাগুন মানুষের মনের স্মৃতি হয়ে ছাপ রেকে যায় আজীবন । তেমনটি এক ঘটনা ঘটেছে এক নাট্য শিল্পী জীবন ঘোষের সাথে গত ২৪ শে নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যাবার ফলে । উনার মৃত্যুতে নাট্য জগতের এক অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল যা পূরণ করা কোনদিনই সম্ভব নয় । তাইতো ওনাকে স্মরণে রাখতে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয় “ভালোবাসার আরেক নাম জীবন” জীবন মানেই শেষ হবার নয় ,জীবন মানে থেমে থাকা নয় , জীবন মানেই এগিয়ে চলার নাম ও নতুন পথের সন্ধানে পথচলা । এই নামাকরেনেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খোয়াই অরবিন্দ পার্ক স্থিত খোয়াই নাট্য সংসদের অফিস গৃহে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয় । এই স্মরণ সভায় নাট্য সংসদের বিভিন্ন সদস্য সদস্যা ছাড়া উপস্থিত ছিলেন খোয়াই মহকুমার বিভিন্ন সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও সাংস্কৃতিক জগতের বিভিন্ন শিল্পী ও সহসাংবাদিকরা । এই স্মরণ সবার প্রথমে প্রয়াত জীবন ঘোষের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করেন স্মরণ সভায় উপস্থিত সবাই । এরপর শিল্পী বিপ্লব দেবনাথ প্রয়াত জীবন ঘোষের স্মৃতিতে “তুমি রবে নীরবে” এই গানটির মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ।তারপর প্রয়োত নাট্য শিল্পী জীবন ঘোষের কর্ম জীবন, নাট্য জীবন এবং উনার ধর্মীয় জীবন নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে স্মরণসভায় উপস্থিত প্রত্যেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন । স্বাভাবিকভাবেই এই নাট্য শিল্পী জীবন ঘোষ উনার কর্মজীবন এবং নাট্য জীবনে একজন নাট্য শিল্পী হিসেবে এই সংস্থার প্রত্যেকটি মানুষের মন যেমন কেড়ে নিয়েছিলেন তেমনিভাবে গোটা খোয়াই সহ রাজ্যবাসীর মন কেড়ে নিয়েছিলেন অনেক নাটকের মাধ্যমে। এরমধ্যে একটি নাটকের দ্বারা অর্থাৎ রাজেন্দ্র ঢাকির গল্পের নায়ক রাজেন্দ্র ঢাকি হিসেবে প্রয়াত জীবন ঘোষ সেই নাটকটিকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন উনার সেই অসাধারণ প্রতিভাকে আজও মানুষ ভুলতে পারেনি ।সেই নাটকের পর অনেকেই বন্ধু স্থানীয় লোকেরা জীবন ঘোষকে রাজেন্দ্র ঢাকী অথবা রাজেন্দ্র হিসেবে ডাকতো । একটা সময় প্রয়াত জীবন ঘোষ ওই নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন এক ডাকে উনাকে সবাই চিনতো । এরপর তিনি কর্মজীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে নাট্য চর্চা করাতেন। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নাটক উপস্থাপন করতেন নিজের নির্দেশনায় ,এমনকি বেশ কয়েকটি নাটকও তিনি লিখেছেন বলে জানা যায়। তাছাড়া ধর্মীয় জীবনে ওনি রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শিষ্য থাকা কালীন অবস্থায় খোয়াই রামকৃষ্ণ আশ্রমের বিভিন্ন কাজে নিজেকে নিযুক্ত করে রেখেছিলেন ।শেখানে ও সম্মানের সহিত কাজ করেছেন ।এই দিন স্মরণসভায় রাতে জীবনঘোষের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন সঠিকভাবে তাদের গলা দিয়ে শ্বর বের হচ্ছিল না । এরপরও অনেকে প্রয়াত জীবন ঘোষের নাট্য জীবন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং কিভাবে একটি নাটক করতে গেলে সেই নাটকের চরিত্রের চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে হয় তার জন্য যেমন অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। তেমনিভাবে তাক ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন এর জন্য তিনি এই বিষয়ে সবসময় খুবই খুঁতখুতে ছিলেন যাতে কোন জায়গায় ভুল ত্রুটি না হয় । স্মৃতিচারণে অনেকেই বলেছেন জীবন ঘোষের জীবনী নিয়ে বলা এই অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব না কারণ তিনি এক অসাধারণ ব্যক্তিত্বের মানুষ এবং অসাধারণ প্রতিভার শিল্পী ছিলেন প্রয়াত নাট্য শিল্পী জীবন ঘোষ । এমনকি ওনার স্কুল জীবনের সহপাঠীরাও এই স্মরণ সভায় উনার ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এই দিন স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন এই নাট্য সংস্থার সম্পাদক সৌরজিত গোপ ,সভাপতি নীলকান্ত সিনহা, এই সংস্থার ফাউন্ডার মেম্বার তথা বরিষ্ঠ প্রাক্তন নাট্য শিল্পী অভিক প্রসাদ চক্রবর্তী অমল নাথ শর্মা , ননী দাস ,অসীম দেব , বিপুল দেবনাথ, উৎসব চক্রবর্তী নাট্যশিল্পী অরুণ পাল ও গৌতম সরকার, সুস্মিতা সোম ,অর্পিতা রায়, চন্দন মিশ্র সহ খোয়াই শহরের গুণী ব্যক্তিরা সহ সাংস্কৃতিক জগতের লোকেরা । তমসোম সদগময়, তমসোমা জ্যোতির্গময়.. পরপারে ভালো থাকুন শিল্পী আপনাকে চিরকাল স্মরণে রাখবে গোটা ত্রিপুরা রাজ্যের সমস্ত শিল্পীরা।……..