খোয়াই প্রতিনিধি ১৮ই মার্চ…….প্রচলিত অর্থে নানা শারীরিক কসরত এর মাধ্যমে যে ‘যোগা’-র সঙ্গে আমরা প্রায় প্রত্যেকে পরিচিত সেই অর্থে ঋষি অরবিন্দের দৃষ্টিভঙ্গিতে ” সারা জীবনই যোগা”-র ধারণা বলতে গেলে সম্পূর্ণ ভিন্নতর।আর ওনার এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পাথেয় করেই রবিবার অর্থাৎ ১৭ ই মার্চ খোয়াই সুভাষ পার্ক টিকে ডিকে রোড স্থিত স্বপনপুরী অতিথি নিবাসের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল শ্রী অরবিন্দ সোসাইটি ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির ষোড়শতম বার্ষিক সম্মেলন ।মাত্র পাঁচ মাস আগে গঠিত শ্রী অরবিন্দ সোসাইটির খোয়াই কেন্দ্রের সহযোগিতায় এই দিন একটি অভূতপূর্ব দ্বিপার্বিক অনুষ্ঠান সকাল দশটা থেকে সন্ধে ছটা পর্যন্ত এই অতিথি নিবাসের কনফারেন্স হলে সম্পন্ন হয়।রবিবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান ড: বিভাস কান্তি কিলিকদার মহোদয় অতিথি নিবাসের সম্মুখস্থ ভূমিপ্রাঙ্গণে শ্রী মায়ের পতাকা উত্তোলন করেন। এর পর পন্ডিচেরি থেকে শ্রী অরবিন্দ সোসাইটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক নবনীতর শ্রী গোপাল ভট্টাচার্য মহোদয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানের সরাসরি উদ্বোধনী বক্তৃতা পেশ করার পর অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত সম্মানিত অতিথিবর্গ মঙ্গলদীপ প্রজ্জ্বলন করে শ্রীমা ও শ্রী অরবিন্দের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করলে স্বল্প সময়ের জন্য শ্রী মায়ের বাদ্যানুসঙ্গ অনুসরণে ধ্যান ও প্রার্থনা সম্পন্ন হয়। এরপর স্বাগত ভাষণ রাখেন রাজ্য কমিটির সম্পাদিকা ড: অরুন্ধতী রায় মহোদয়া। তিনি অন্যান্য আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান ও অরবিন্দ সোসাইটির মধ্যে আদর্শগত এবং জীবনশৈলী পার্থক্য প্রাঞ্জলভাবে বিশ্লেষণ করেন।এরপর শুরু হয় উদয়পুর, কৈলাসহর, আগরতলা তেলিয়ামুড়া এবং খোয়াই কেন্দ্রসহ রাজ্যকমিটির উপস্থিত শ্রী অরবিন্দ অনুরাগী সদস্য সদসাদের ব্যক্তিগত পরিচয়পর্ব। পরিচয় পর্ব শেষে রাজ্য কমিটিসহ প্রতি কেন্দ্রের সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষরা সুশৃঙ্খলভাবে যথাক্রমে বার্ষিক প্রতিবেদন এবং বার্ষিক হিসাব-নিকাশ পেশ করেন। সারা জীবন-ই যোগা’ – বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন পেশ করতে গিয়ে কৈলাসহর কেন্দ্রের কোষাধ্যক্ষ শ্রী অপু পাল মহোদয় পক্ষান্তরে সামগ্রিকভাবে সোসাইটির মূল লক্ষ্য অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেন। যার মর্মার্থ – শ্রী অরবিন্দ সোসাইটি মানব চেতনা পরিবর্তনের মাধ্যমে ব্যক্তি জীবনে আধ্যাত্মিকতার গতিশীল প্রয়োগ ও ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণতা, সামাজিক রূপান্তর এবং আধ্যাত্মিক ভিত্তির উপর মানবিক ঐক্য স্থাপনের লক্ষ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। রাজ্য কমিটির চেয়ারম্যান ড: বিভাস কিলিকদার মহোদয় প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানের নির্যাস আলোচনা শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপক বক্তব্য রাখেন খোয়াই কেন্দ্রের সম্পাদক দীপেন নাথ শর্মা ।কর্মসূচি অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকেল চারটায়। সকলের জন্য অবারিত এই পর্বে প্রথম পর্বের মতই যাবতীয় আনুষ্ঠিকতা শেষে উদ্বোধক ভারত সেবাশ্রম সংঘের স্থানীয় প্রতিনিধি অসীমানন্দজী মহারাজ উদ্বোধকের আসন অলংকৃত করেন। এই পর্বে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে খোয়াই পুরসভার চেয়ারপারসন শ্রী দেবাশীষ নাথ শর্মা মহোদয় এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে জিলা পরিষদের সদস্য শ্রী সুব্রত মজুমদার মহোদয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি ড: বিভাস কান্তি কিলিকদার মহোদয় শ্রী অরবিন্দের স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন থেকে ঋষি অরবিন্দে উত্তরণ পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে যোগসূত্রগুলো ঐতিহাসিক আলোকে সংক্ষিপ্ত অথচ প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরে উপস্থিত সকলকে সমৃদ্ধ করেন। প্রকৃতপ্রস্তাবে, আধ্যাত্মিক নীরবতা ও শান্তির পরিবেশ সমগ্র অনুষ্ঠানপর্বটিকে এক বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল।অনুষ্ঠানের প্রান্তিকপর্বের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একটি মনোগ্রাহী দেশাত্মবোধক নৃত্য পরিবেশন করে খোয়াইয়ের বারবিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কন্যা শিল্পীরা।”স্বদেশে আমার স্বদেশ”– গীতিআলেখ্য রচনা ও বাচিক উপস্থাপনে অশীতিপর ড: অরুন্ধতী রায় সহ শিল্পীরা যথাক্রমে ড: জ্যোতির্ময় শর্মা, শিখা মজুমদার, মণিকা রায় এবং যন্ত্রানুসঙ্গে দেবব্রত পাল উপস্থিত সকলকে মন্ত্রমুগ্ধ আনন্দ উপহার দেন। খোয়াই কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শ্রী মৃণালকান্তি মজুমদারের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বৎসরের রাজ্য বার্ষিক সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।