Monday, May 19, 2025
বাড়িখবররাজ্যড. বি আর আম্বেদকরের চিন্তাধারা ভারতীয় সংবিধানে নিহিত রয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী

ড. বি আর আম্বেদকরের চিন্তাধারা ভারতীয় সংবিধানে নিহিত রয়েছে: মুখ্যমন্ত্রী

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে ড. বি. আর. আম্বেদকর অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁর চিন্তাধারা ভারতীয় সংবিধানের প্রতিটি ধারা এবং উপধারায় নিহিত রয়েছে। আজ আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে সংবিধান প্রণেতা ভারতরত্ন ড. বি. আর. আম্বেদকরের ১৩৫ তম জন্মজয়ন্তী উদযাপনের সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ও আলোচনাচক্র অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রশাসন এবং তপশিলিজাতি কল্যাণ দপ্তরের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ড. বি. আর. আরম্বেদকর ছিলেন একজন দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশের সংবিধান প্রণয়ণে যারা কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে ড. বি. আর, আম্বেদকর অন্যতম। তিনি বলেন, বি আর আম্বেদকর অস্পৃশ্য মাহার সম্প্রদায়ের হওয়ার ফলে স্কুল জীবনে তাকে নানাধরণের অনাচার এবং অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তবে বহু প্রতিকূলতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অপমানের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেকে তিনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ভারতের সংবিধান রচনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন বি আর আম্বেদকর। এর পাশাপাশি ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত প্রথম কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী হিসেবেও তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সংবিধানের প্রস্তাবে নাগরিকদের শোষণ মুক্তির বেশ কয়েকটি উপায়ের কথাও বলেছিলেন। দেশের উন্নয়নে দায়বদ্ধতার সাথে কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন তিনি। আম্বেদকর বলেছিলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃষি এবং শিল্পকে প্রাধান্য দিতে হবে। কৃষি থেকে শিল্পায়নে উন্নীত না হলে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে না। এক্ষেত্রে তিনি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথাও উল্লেখ করেছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আম্বেদকর সারাজীবন ধরে বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এক অসম লড়াই চালিয়ে গেছেন। ভারতবর্ষের দলিত সম্প্রদায়ের আশা-আকাঙ্খার সার্থক রূপায়ণে তিনি জীবনব্যাপী সংগ্রাম করে গেছেন। তাই তাকে দলিত সূর্য নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তার নিরলস সংগ্রাম ও অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে তাকে মরণোত্তর ভারতরত্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ড. বি আর আম্বেদকরের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রের উন্নয়ন, দলিত সমাজের অগ্রগতি, গ্রামীণ ভারতের বিকাশ, মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ভাবনা প্রতিটি বিষয়কেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছেন। ‘ভারত রত্ন’ বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের সমতার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। সমাজের দূর্বলতর শ্রেণীর উন্নয়ন, গরীবি দূরীকরণের জন্য সরকারের প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার মাধ্যমে গরীব অংশের মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে এখন সরকারি অনুদান সরাসরি সুবিধাভোগীদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে ট্রান্সফার করা সম্ভবপর হচ্ছে। গরীব নাগরিকদের আত্মনির্ভর করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা প্রকল্প নিয়ে আসা হয়েছে। এই যোজনায় এসসি, এসটি ও নারী উদ্যমীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় গরীব পরিবারে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ড. বি আর আম্বেদকরের চিন্তাধারাকে প্রধান্য দিয়ে নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় ৯ কোটি পরিবারে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে মায়েরা চুলার ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশে রান্না করতে পারছেন। গরীব মানুষের নিজের পাকা গৃহে বসবাসের মৌলিক চাহিদাকে সুনিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রচেষ্টায় বাবাসাহেবের স্মৃতির সাথে জড়িত পঞ্চতীর্থ, মধ্যপ্রদেশের মহুত বাবাসাহেবের জন্মভূমি, লন্ডনে ড. আম্বেদকর মেমোরিয়াল তাঁর শিক্ষাভূমি, নাগপুরে তাঁর দীক্ষাভূমি, মুম্বাইয়ে ইন্দুমিল তাঁর কর্মভূমি এবং মৃত্যুকালে দিল্লির আলিপুরের সেই গৃহ এই ৫টি স্থানকে বিশেষ স্থান হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বাবাসাহেব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথপ্রদর্শক ছিলেন তাই আজ ভারতে তৈরি ইউপিআই ব্যবস্থাকে তাঁর নামে ভিম (ভারত ইন্টারফেস ফর মানি) অ্যাপ চালু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজ্য সরকারও তপশিলিজাতি ও অন্যান্য পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ন করছে। এই সমস্ত কর্মসূচিগুলিতে ড. বি আর আম্বেদকরের দর্শন, সামজিক ন্যায়, শিক্ষার উন্নতি, পিছিয়েপড়া অনগ্রসর মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতির মূল ভাবনাগুলি প্রতিফলিত হচ্ছে। আজাদি-কা-অমৃত-মহোৎসবের অঙ্গ হিসাবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থানুকুল্যে রাজ্য বিধানসভা ভবন প্রাঙ্গণে সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ব্রোঞ্জ ও মেটাল নির্মিত ভারতরত্ন ডঃ বি আর আম্বেদকরের পূর্ণাবয়ব মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। তপশিলি জাতির কল্যানে তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীকে প্রাক-মাধ্যমিক স্কলারশিপ প্রদান করা হচ্ছে। ড. বি আর আম্বেদকর মেধা পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনুসূচিত জাতি অভ্যুদয় যোজনার মাধ্যমে তপশিলি জাতি অধ্যুষিত গ্রামে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচিতে পোল্ট্রি শেল্টার, সোলার স্ট্রিটলাইট, বাউন্ডারি ওয়াল, ওয়াটার ট্যাঙ্ক, পাকা ড্রেন, ব্রিক সলিং রোড, বক্স কালভার্ট, অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টার নির্মাণ এবং সাবমারসিবল পাম্প বসানো, ক্ষুদ্র ব্যাসের ডিপ টিউবওয়েল বসানো ইত্যাদি কাজ করা হবে। তপশিলি জাতিভুক্ত পরিবারগুলির আয় বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে মুরগি ও হাঁস পালন সংক্রান্ত একটি প্রকল্প চালু করার প্রস্তাব এবার বাজেটে গৃহীত হয়েছে। তপশিলি জাতিভুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা মাছ, শুকনো মাছ এবং সব্জি বিক্রি করেন তাদের আর্থিক সাহায্য করার সংস্থান রাখা হয়েছে।

এছাড়াও ছাত্রীনিবাস নির্মান, প্রাক্-মাধ্যমিক বৃত্তি (রাজ্য প্রকল্প), প্রাক্-মাধ্যমিক বৃত্তি, অপরিচ্ছন্ন কাজে নিযুক্ত পরিবারের সন্তান-সন্ততিদের জন্য প্রাক-মাধ্যমিক বৃত্তি (কেন্দ্র এবং রাজ্য ৯০:১০), ড. বি. আর. আম্বেদকর মেধা পুরস্কার (কেন্দ্রীয় প্রকল্প), এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান (রাজ্য প্রকল্প), মুখ্যমন্ত্রী স্ব-নির্ভর পরিবার যোজনায় সহায়তা, তপশিলী জাতিভূক্ত আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ (রাজ্য প্রকল্প), প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনা (কেন্দ্রীয় প্রকল্প), বাবু জগজীবন রাম ছাত্রাবাস যোজনায় সাহায্য প্রদান করা হবে।

অনুষ্ঠানে সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য্য ড. বি. আর. আম্বেদকরের বিচারধারাকে পাথেয় করে দেশের একতা এবং অখন্ডতা রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একতা এবং অখন্ডতা বজায় থাকলে দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হবে এবং কোন শক্তি দেশকে পরাজিত করতে পারবে না। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক ও সমাহর্তা ডা. বিশাল কুমার। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা জয়ন্ত দে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল। অনুষ্ঠান শেষে ড. বি. আর. আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উলপক্ষ্যে আয়োজিত প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। তাদের হাতে পুরস্কার হিসাবে স্মারক-উপহার, শংসাপত্র এবং চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

14 − nine =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য