রাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল ভাবনা হচ্ছে ‘প্রত্যেক নারী এবং শিশুকন্যার জন্য অধিকার, সমতা এবং ক্ষমতায়ন’। এই দিবসটি উদযাপনে ত্রিপুরার জন্যও বিশেষ ভাবনা রাখা হয়েছে। ভাবনা হলো ‘রাজ্য থেকে বাল্যবিবাহ ও অন্যান্য সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করতে সম্মিলিত আন্দোলনের সূচনা এবং মহিলা ক্ষমতায়ন’। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানটি আগামী ১৩ মার্চ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। আজ সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষামন্ত্রী টিংকু রায় একথা জানান। তিনি জানান, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন এমন মহিলা সিডিপিও, মহিলা আইসিডিএস সুপারভাইজারদের অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে। পাশাপাশি দক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকাদের পুরস্কৃত করা হবে। সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের পাশাপাশি রাজ্য সরকারের অন্যান্য দপ্তরগুলিও আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ত্রিপুরা মহিলা কমিশনের উদ্যোগে আগরতলায় বর্ণাঢ্য র্যালি, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের উদ্যোগে সকালে আগরতলায় মহিলাদের রাজ্যভিত্তিক মিনি ম্যারাথন প্রতিযোগিতা, ত্রিপুরা শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের উদ্যোগে আগরতলায় একটি সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ত্রিপুরা শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের উদ্যোগে জেলা স্তরের শিশু কল্যাণ কমিটি ও শিশু সুরক্ষা কমিটিকে যুক্ত করে গত ১ মার্চ থেকে ইট ভাট্টা ও চা বাগানগুলিতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজিত হচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষামন্ত্রী টিংকু রায় জানান, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে রাজ্যের সবক’টি জেলার স্কুলগুলিতে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে কিশোরী ও তাদের অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মশালা ও আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হবে। রাজ্য পুলিশের উদ্যোগেও ‘মহিলা ক্ষমতায়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা’ এই ভাবনাকে সামনে রেখে ঐদিন সকালে এক অনুষ্ঠানে মহিলা পুলিশ আধিকারিক এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী মহিলাদের সংবর্ধনা জানানো হবে। পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তা ও মহিলাদের অধিকার সম্পর্কিত জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উদ্যোগেও সমগ্র রাজ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হবে। এই উপলক্ষ্যে মিশনের রাজ্য এবং ব্লক কার্যালয়ে সেলফি পয়েন্ট তৈরি করা হবে। আত্মরক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে। স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর কাজে সাফল্য অর্জনকারী মহিলাদের সংবর্ধনা ও পুরস্কৃত করা হবে। স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর বিভিন্ন সাফল্য ও কাজকর্ম নিয়ে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে বিশেষ স্বাস্থ্য ও সচেতনতামূলক শিবিরের আয়োজন করা হবে। বাল্যবিবাহ এবং কিশোরীদের গর্ভধারণের কুফল সম্পর্কে হাসপাতালে আসা সাধারণ নাগরিকদের সচেতন করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে প্রতিটি মহকুমা এবং জেলা হাসপাতালে সচেতনতা ডেস্ক স্থাপন করা হবে। ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি যেমন গ্রাম প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য, কাউন্সিলার, ওয়ার্ড সদস্য ও সাধারণ মানুষকে যুক্ত করে ১ মার্চ থেকে ৮ মার্চ পঞ্চায়েত ও ওয়ার্ড স্তরে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্রম দপ্তরের উদ্যোগে চা বাগান, ইটভাট্টা ও শিল্পাঞ্চলগুলিতে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। আগরতলা পুরনিগমের উদ্যোগে বাল্যবিবাহ, মহিলাদের অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়ন বিষয়ক কর্মশালার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত জেলাভিত্তিক আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হচ্ছে। তাতে শিল্পকলা, ক্রীড়া, সামাজিক কাজে যুক্ত প্রখ্যাত মহিলা ব্যক্তিত্বগণ সহ মহিলা বিধায়ক, জিলা পরিষদের সভাধিপতি, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরপরিষদ ও নগর পঞ্চায়েতের মহিলা চেয়ারপার্সনদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জেলাভিত্তিক অনুষ্ঠানে পোষণ ট্র্যাকার এন্ট্রি, প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনা, মুখ্যমন্ত্রী মাতৃ পুষ্টি উপহার, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে যেসকল অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছেন তাঁদের সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী মাতু বন্দনা যোজনায় চলতি অর্থবর্ষে ৩৪ হাজার ৯৭৪ জন গর্ভবতী মহিলাদের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মাত্র পুষ্টি উপহার প্রকল্পে চলতি অর্থবর্ষে প্রায় ২১,৫৫১ জন গর্ভবতী মহিলা সুবিধা পেয়েছেন। চলতি অর্থবর্ষে ১ হাজার ৩৭৩ জন শিশুকে স্পনসরশিপ এবং ফোস্টার কেয়ার অ্যালাউন্স দেওয়া হয়েছে। কর্মরত মহিলাদের সুবিধার্থে রাজ্যে ১০টি ওয়ার্কিং উইমেন হোস্টেল নির্মাণ করা হবে। এজন্য ১১৪ কোটি টাকা অনুমোদিত হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম কিস্তি হিসেবে ৭৫ কোটি ২৪ লক্ষ টাকার মঞ্জুরি পাওয়া গিয়েছে। তাছাড়াও মহিলাদের সুবিধার্থে আগরতলায় সখী নিবাস, জেলাগুলিতে ওয়ান স্টপ সেন্টার রয়েছে। পাশাপাশি মহিলাদের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যে রাজ্যের ৮টি জেলায় উইমেন হাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস উপস্থিত ছিলেন।