আগরতলা, জানুয়ারী ৩০ঃ
দেশের প্রায় সব প্রান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা এখানে এসে একত্রিত হয়েছে মেডিকেল পড়াশোনার জন্য। রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এই দৃশ্য দেখে অভিভূত। তাঁদের মতে, এটি রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেবে। অর্থনৈতিক উন্নতিরও দিশা দেখাবে এই কলেজ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে যে, National Medical Council এর প্রয়োজনীয় অনুমতি নিয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই আগরতলার কাছেই রাণীর খামারে গড়ে ওঠা ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে ১৫০ আসন নিয়ে এমবিবিএস পাঠ্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম বছরেই এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের তালিকা দেখলে বোঝা যায়, এখানে ভারতবর্ষের প্রায় প্রতিটি কোণ থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে। ত্রিপুরা থেকে সর্বাধিক ৪৭ জন ছাত্রছাত্রী এখানে ভর্তি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৬ জন, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ১ জন, অরুণাচলপ্রদেশ থেকে ৪ জন, উত্তরপ্রদেশ থেকে ১১ জন, অসম থেকে ১১ জন, বিহার থেকে ৭ জন, ছত্তিশগড় থেকে ৫ জন, গুজরাট থেকে ২ জন, হরিয়ানা থেকে ৭ জন, হিমাচলপ্রদেশ থেকে ১ জন, ঝাড়খণ্ড থেকে ৩ জন, কেরালা থেকে ২ জন, মহারাষ্ট্র থেকে ১৭ জন, নাগাল্যান্ড থেকে ১ জন, দিল্লি থেকে ১ জন, ওডিশা থেকে ৭ জন, পাঞ্জাব থেকে ১ জন, তামিলনাড়ু থেকে ৩ জন, তেলেঙ্গানা থেকে ১ জন এবং উত্তরাখণ্ড থেকে ২ জন ছাত্রছাত্রী এখানে পড়তে এসেছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা দপ্তরের মতে, এই বৈচিত্র্যময় ছাত্রভর্তি কলেজের পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্য, শিক্ষার মান ও সুনাম আরও বৃদ্ধি করবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক বলেন, “বোঝায় যাচ্ছে এই মেডিকেল কলেজ এখন শুধুমাত্র ত্রিপুরার নয়, সমগ্র ভারতের এক মিলনস্থল হয়ে উঠেছে। এখানে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীরা একে অপরের সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হবে, যা তাঁদের মানসিক বিকাশেও সহায়ক হবে।”
আধিকারিকের মতে এই ভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়ুয়ারা আসার ফলে, তাদের মাধ্যমে, রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নও বৃদ্ধি পাবে। কলেজের এক ছাত্র বলেন, “আমি সুদূর মহারাষ্ট্র থেকে এসেছি। এখানে এসে ইতিমধ্যেই আমার ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যের সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। একসাথে পড়াশোনা করা, একসাথে থাকা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, ভাবের আদান প্রদান — এটা সত্যিই একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।”
শিক্ষক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ সঞ্জয় নাথ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র ভালো ডাক্তার তৈরি করা নয়, বরং এমন মানবিক চিকিৎসক গড়ে তোলা, যারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের বাস্তব চিত্র সম্পর্কে সচেতন থাকবে এবং ভবিষ্যতে সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করবে।”
কলেজের সভাপতি মলয় পীট বলেন “অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই সারা দেশে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ যে ভাবে নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরেছে তাতে আগামী দিনে আরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে আকৃষ্ট করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। শুধু পড়াশোনা নয়, এই মেডিকেল কলেজ হবে ভারতীয় সংস্কৃতির এক মেলবন্ধনের স্থান। এই বহুত্ববাদী পরিবেশ আগামী দিনে দেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলেই আমি স্থির বিশ্বাস।”