ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর) রাজ্যের গর্ব। বীরতা ও বন্ধুত্ব এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে টিএসআর জওয়ানগণ দেশের সেবায় নিয়োজিত। দেশের অন্যান্য পুলিশ বাহিনীর তুলনায় রাজ্যের টিএসআর বাহিনীর সাফল্য কোন অংশে কম নয়। আমাদের দেশে এই বাহিনীর সুনাম রয়েছে। আজ মান্দাইয়ের বিনন কোবরা পাড়ায় টিএসআর’র দ্বিতীয় বাহিনীর পোস্ট পরিদর্শন ও দীপাবলি উৎসব উদযাপনে অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় টিএসআর জওয়ানগণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী টিএসআর বাহিনীগুলির সার্বিক উন্নতির জন্য ৬টি পরিকল্পনার কথাও ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা জওয়ানদের দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, দীপাবলি হল অশুভ শক্তির বিনাশ এবং অন্ধকার থেকে আলোতে আসার উৎসব। তিনি বলেন, রাজ্যে ১৯৮৪ সালের ১২ মার্চ ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের (টিএসআর) এর প্রথম ব্যাটেলিয়ান প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর স্বল্পতার কারণে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ধাচে টিএসআর বাহিনী গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে রাজ্যে ১৪টি টিএসআর ব্যাটেলিয়ান রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, টিএসআর জওয়ানদের রেশনমানি ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হবে। সব র্যাঙ্কের জওয়ানদের জন্য পোশাক ভাতা ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হবে। প্রত্যেক ব্যাটেলিয়ানে জিমনাসিয়াম স্থাপনের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হবে। টিএসআর ব্যাটেলিয়ানে সেবা দিতে ইচ্ছুক মেডিক্যাল অফিসারের সাম্মানিক বর্ধিত করে মাসিক ৬০ হাজার টাকা করা হবে। অ্যাডহক ভিত্তিতে ২৪০ জন জওয়ানের পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হবে। টিএসআর পোস্ট এবং ব্যারাকের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টিএসআর এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে বীরতা ও বন্ধুত্ব। এখন ত্রিপুরাতে জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ও নিরাপত্তার একটা বাতাবরণ রয়েছে। এই বাতাবরণ সৃষ্টিতে টিএসআর জওয়ানদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য টিএসআর তৈরী হলেও এখন বিভিন্ন কাজে তারা যুক্ত।
সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলা ছাড়াও, বর্তমানে টিএসআর বাহিনী রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা, বিপর্যয় মোকাবিলা, শিল্প নিরাপত্তা, ভিআইপি নিরাপত্তা এবং নেশাবিরোধী অভিযানের সঙ্গে যুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করছে। রাজ্যের শিল্প এলাকার নিরাপত্তার সাথে সাথে টিএনজিসিএল এবং নীপকোতে টিএসআর বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চাহিদা অনুসারে দিল্লীতে পার্লামেন্ট স্ট্রিট সহ বিভিন্ন দূতাবাস এলাকায় টিএসআর জওয়ানরা নিয়োজিত রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনের সময়ে টিএসআর বাহিনীকে নিযুক্ত করা হচ্ছে এবং তাদের দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের ফলে রাজ্যের সুনাম অর্জিত হচ্ছে। ১৯৯০ সাল থেকে টিএসআর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ান প্রতিষ্ঠিত হবার পর ১৬ জন জওয়ান সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় আত্মবলিদান দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে প্রায় ৮৫৬ কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে। বিএসএফ এর সঙ্গে টিএসআর জওয়ানরা দ্বিতীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করে সীমান্ত সুরক্ষায় দেশ সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। ২০১১ সালে ত্রিপুরা পুলিশ এবং টিএসআর বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রেসিডেন্টস কালার মেডেল এ সম্মানিত হয়েছিল। ‘প্রাইড অব ত্রিপুরা’ হিসাবে টিএসআর বাহিনী রাজ্যে নিজেদের স্বতন্ত্রতা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। সম্প্রতি ত্রিপুরায় যে বন্যা হয়েছে সেখানে বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে টিএসআর জওয়ানদের ভূমিকা অপরিসীম। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টিএসআর এ প্রথম বারের মতো ১৩৭ জন মহিলা নিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে ১৪টি টিএসআর ব্যাটেলিয়ান রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের উত্তর পূর্বাঞ্চলে এখন শান্তির বাতাবরণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (টিএসআর ও ওপিএস) ক্যারি মারাক, টিএসআর ২য় ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডেন্ট নারায়ণ রায় চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক জি এস রাও। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ও অতিথিগণ জওয়ানদের মধ্যে দীপাবলি উপলক্ষে মিষ্টি তুলে দেন এবং জওয়ানদের সঙ্গে দীপাবলি উৎযাপন করেন।