মঙ্গলবার পাঁচ দফা দাবিতে আমরা বাঙালি ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি এক সাংবাদিক সম্মেলনে মিলিত হন। এদিন আমরা বাঙালি দলের সচিব সংবাদ মাধ্যমকে জানান বাঁচার তাগিদে সম্প্রতি কাঞ্চনপুর মহকুমার সুভাষনগর, কাশীরামপুর, আশাপাড়া ইত্যাদি তেরটি গ্রামের ৫১টি বাঙালী পরিবারের ২১৭ জন পানিসাগরের পেকুছড়া গ্রামে বনের মধ্যে এসে আশ্রয় নিয়েছে। গত ৫দিন ধরে তারা শিশু বৃদ্ধ-বৃদ্ধানিয়ে খোলা আকাশের নীচে অসহায়ভাবে থাকলেও অমানবিক প্রশাসন, এখনি পর্যন্ত তাদের জন্যে খাবারের ব্যবস্থা দূরে থাক পানীয় জলের ব্যবস্থাটুকুতো করেইনি উল্টো উদ্বাস্তু পরিবারগুলিকে পেকুছড়া থেকে উচ্ছেদ করার জন্যে পুলিশও প্রশাসনের লোক মিলে জোরজবরদস্তি করে চলেছে। এমনকি এলাকায় পানীয় জল ঢুকতে বাঁধা দিয়ে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করেছে। বার বার প্রশাসনের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে জায়গা ছেড়ে দেবার জন্যে। অথচ ঘটনা স্থলের খানিক দূরে বনদপ্তরের আরও একটি জায়গায় প্রায় একশ উপজাতি পরিবার বসবাস করলেও তাদের উচ্ছেদের ব্যাপারে প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরব। এই হল বর্তমান বিজেপি সরকারের বাঙালী বিদ্ধেষ তথা উপজাতি তোষণ নীতির নমুনা যা অতীতের বাম আমলকে ও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে যে সমস্ত অসহায় বাঙালী পরিবার অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে পেকুছড়া বনে এসে আশ্রয় নিয়েছে তারা স্বাধীনতা তথা ত্রিপুরা ভারত ভূক্তির পর থেকে কাঞ্চনপুর মহকুমার নইসিংপাড়া, আশারামবাড়ি, গচ্ছিরামপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। পরবর্তীতে মিজোরাম থেকে রিয়াং শরনার্থীরা চলে এসে জোর জবরদস্তি করে বাঙালীদের জায়গাজমি দখল করে, চুরি ডাকাতি সহ বহু হিংসাত্বক ঘটনা ঘটায়। পরে তারা নিরাপত্তার অভাবে প্রান বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে কাঞ্চনপুর মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চলে এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ও বাঁচতে না পেরে পেকুছড়ার জঙ্গলে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এখন সেখানে থেকে তাদের উচ্ছেদ করে দেবার জন্যে প্রশাসন থেকে অনবরত চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমরা বাঙালী ত্রিপুরা রাজ্যকমিটি পেকুছড়া অবস্থানরত উদ্বাস্তু বাঙালী পরিবার গুলির উপর প্রশাসনের অমানবিক নির্দয় আচরনের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাচ্ছে এবং প্রশাসন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানানো হয়েছে যা হল:
বিকল্প ব্যবস্থা না করে পেকুছড়ায় আশ্রিত কোন বাঙালী পরিবারকে পেকুছড়া থেকে উচ্ছেদ করা চলবে না।
অবিলম্বে পেকুছড়া অঞ্চলে আশ্রিত উদ্বাস্তু বাঙালী পরিবারগুলিকে সরকারী উদ্যোগে খাদ্য, পানীয়, ঔষধপত্র ও থাকার জন্যে ঘর নির্মানের ব্যবস্থা করতে হবে
৮০ জুনের গণহত্যার পর থেকে এপর্যন্ত উগ্রবাদী আক্রমনে ও উগ্র রিয়াং শরনার্থীদের আক্রমনে যে সমস্ত বাঙালী পরিবার স্বজনহারা সম্পদ হারা হয়েছেন তাদের পূর্ণক্ষতি পূরন ও নিরাপত্তা দিয়ে স্বস্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাধীনতার জাতীয় প্রতিশ্রুতি মোতাবেক পঞ্জাবী উদ্বাস্তুদের মতো বাঙালী উদ্বস্তদের ও পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
হাইকোর্টের কর্মরত বিচারপতি দিয়ে ৮০ জুনের গণহত্যার বিচার-বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি বিধান করতে হবে।
প্রতিটি বাঙালী পরিবারকে উপজাতিদের মতো বনের অধিকার ও জমির পাট্টা দিতে হবে।