ধলাই জেলার সুরমা বিধানসভার সালেমা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অপূর্ব পোদ্দারের বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অভিযোগকারীকে ভয় দেখানোর মতো একাধিক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ওঠায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগকারী মনোরঞ্জন দেবনাথ, যিনি দীর্ঘদিনের বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত, তিনি সরাসরি পঞ্চায়েত প্রধানের দিকে আঙুল তুলেছেন। একইসঙ্গে, প্রধানের বিরুদ্ধে একাধিকবার সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ এবং ব্যক্তিগত দুর্নীতির অভিযোগও সামনে এসেছে। বিজেপি নেতার আনারস বাগান ও জোরপূর্বক টাকা আত্মসাৎ অভিযোগকারী মনোরঞ্জন দেবনাথ দাবি করেন, তিনি ১৯৯৮ সাল থেকে সক্রিয়ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে যুক্ত। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তাঁকে একটি আনারস বাগান দেওয়া হয়, যা তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তুলেছেন।
তাঁর মূল অভিযোগ, সরকারি ‘বেনী ফিসারি’ প্রকল্পের টাকা দেওয়ার নাম করে তাঁকে বারবার ব্যাংকে যেতে বলা হয়। ব্যাংকে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এই টাকা সরাসরি পঞ্চায়েত প্রধান অপূর্ব পোদ্দারের নির্দেশে বিলি হবে। টাকা তোলার পর ব্যাংকের সামনেই প্রধান অপূর্ব পোদ্দার ও তাঁর অনুগামীরা উপস্থিত হয়ে মনোরঞ্জনবাবুকে চাপ দেন। তাঁর অভিযোগ, টাকা নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলে তাঁকে অনুসরণ করা হতে পারে—এমন ভীতি প্রদর্শন করা হয়। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি তখন বাধ্য হয়ে ২৩,০০০ টাকা প্রধানের হাতে তুলে দেন, যার বিনিময়ে তাঁকে ফেরত দেওয়া হয় মাত্র ৮,০০০ টাকা।
এর আগেও একই ধরনের ঘটনায় ১৬,০০০ টাকা তোলার পর তাঁকে কেবল ৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন মনোরঞ্জন দেবনাথ। আরও ভয়াবহ অভিযোগ হলো, তাঁর স্ত্রীর নামে আরেকটি অ্যাকাউন্টে জোরপূর্বক টাকা ঢুকিয়ে তোলা হয় এবং সেখান থেকে মাত্র ২,০০০ টাকা তাঁর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভয়াবহ আতঙ্কে অভিযোগকারী এই আর্থিক হয়রানির শিকার হয়ে মনোরঞ্জন দেবনাথ বর্তমানে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে তিনি আনারস বাগানে শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারছেন না। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, তিনি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন—যদি এই ঘটনার প্রতিবাদে তিনি মুখ খোলেন, তবে তাঁর ও তাঁর পরিবারের ওপর হামলা বা সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিশোধ নেমে আসতে পারে বলে তিনি তীব্র আশঙ্কা করছেন। মনোরঞ্জন দেবনাথ স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভবিষ্যতে তাঁর ওপর কোনো আঘাত, হুমকি বা অত্যাচারের ঘটনা ঘটলে, তার সম্পূর্ণ দায়ভার সালেমা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অপূর্ব পোদ্দারের ওপর বর্তাবে। একইসঙ্গে, তিনি অবিলম্বে প্রধানকে পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
একধিক দুর্নীতির অভিযোগের দীর্ঘ তালিকা
প্রধান অপূর্ব পোদ্দারের বিরুদ্ধে কেবল মনোরঞ্জন দেবনাথের অভিযোগই নয়, আরও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে, যা তাঁর ব্যক্তিগত সততা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে: পুকুর খনন খাতে ঘুষ: অভিযোগ রয়েছে, পুকুর খনন প্রকল্পের নামে তিনি একজন বেনিফিশারির কাছ থেকে ৬২,০০০ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। বেনিফিশারীর টাকা আত্মসাৎ: বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের বেনিফিশারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে সেই টাকা জোরপূর্বক আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শৌচাগার প্রকল্পে ভুয়া বরাদ্দ: আরও গুরুতর অভিযোগ হলো, প্রধান হওয়ার পর তিনি দু’বার করে নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়ো শৌচাগার নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ করিয়েছেন:প্রথমবার নিজের মেয়ে অঙ্কুরিতা পোদ্দার (কলেজ পড়ুয়া)-এর নামে।
দ্বিতীয়বার ভাইয়ের স্ত্রী শর্মিষ্ঠা সাহা পোদ্দার-এর নামে।
শাসক দল ও প্রশাসনের নীরবতা কেন? একের পর এক গুরুতর অভিযোগ সামনে আসার পরেও, স্থানীয়দের দাবি—কোন এক অজ্ঞাত কারণে শাসক দল কিংবা প্রশাসন প্রধান অপূর্ব পোদ্দারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এ বিষয়ে আগেও সংবাদ প্রকাশিত হলেও অভিযুক্ত প্রধান এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। সালেমা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা এই সমস্ত অভিযোগ ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এখন দেখার, এই গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসন অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে অভিযোগকারী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করে।



