বাসুদেব ভট্টাচার্যী খোয়াই ১৭ই জানুয়ারি…….শুক্রবার বিকেলে খোয়াই বিজেপি মন্ডলের উদ্যোগে এবং তিনটি শক্তি কেন্দ্রকে নিয়ে খোয়াই সিঙ্গিছাড়া ২ নং এলাকার স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হলো শহীদ সমাবেশ। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রক্ষিত, খোয়াই জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা বিধায়ক পিনাকি দাস চৌধুরী, মন্ডল সভাপতি অনুকূল দাস, মন্ডল সাধারণ সম্পাদক সমীর দাস, খোয়াই পুর পরিষদের চেয়ারম্যান দেবাশীষ নাথ শর্মা, প্রণব বিশ্বাস সহ ১৬ জন শহীদ পরিবারের আত্মীয় পরিজনরা। এখানে উল্লেখ্য আজ থেকে ২৩ বছর আগে ২০০২ সালের ১৩ই জানুয়ারি সন্ধ্যা রাতে খোয়াই সিঙ্গিছড়া দুই নং এলাকার বাজারে যখন মানুষ বুড়ি ঘরের বাজার করতে উপস্থিত হয় তখন এটি টি এফ এর উগ্রবাদীদের দ্বারা এলোপাথারি গুলি করার ফলে ঐদিন সেই বাজারে ১৬ জন সাধারণ মানুষ খুন হয়ে যায় উগ্রবাদীদের হাতে। সেই ঘটনা ঘটেছিল তৎকালীন সিপিএমের আমলে। কিন্তু তখন থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সিপিএম দলের পক্ষ থেকে কোনদিন শহীদদের কোন সম্মান জানানো হয়নি। শেষে ২০১৮ সালে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই সেই গণহত্যার শহীদদের সম্মান জানিয়ে যাচ্ছেন খোয়াই মন্ডলের উদ্যোগ। তেমনি ভাবে শুক্রবার বিকালে শহীদ স্মরণের মঞ্চে শহীদ হওয়া ১৬ জন পরিবারের সদস্য সদস্যদের মঞ্চে উপবিষ্ট নেতৃত্বরা ফুলের তোড়া, চাদর ও রামচন্দ্রর প্রতিচ্ছবি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৬ জনের শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন উপস্থিত সমস্ত নেতৃত্বরা । এবং শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে কিভাবে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল সেই প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন খোয়াই পুর পরিষদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাথ শর্মা। কারণ উগ্রবাদীদের হাতে এবং সিপিএম এর মদত পুষ্ট গুন্ডা বাহিনীরা উনার বড় ভাই দীপঙ্কর নাথ শর্মা, এবং উনার বড় ভাই দিলীপ নাথ শর্মা কে কিভাবে হত্যা করেছিল সেই প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন। শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পিনাকি দাস চৌধুরী বলেন ২০০২ সালের ১৩ ই জানুয়ার খোয়াই থানাধীন সিঙ্গীছড়া দুই নং বাজার অর্থাৎ প্যাক্সবাজারে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। এই গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে সেই দিন শিশু বৃদ্ধ্ব সহ ১৬ টি তাজা প্রাণের বিসর্জন দিতে হয়েছিল। সেই বীভৎস গণহত্যার ২৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ১৩ ই জানুয়ারি দিনটি এলে গোটা সিঙ্গীছড়ার স্বজন হারা মানুষ গুলি কেঁদে বুক ভাসায় । দীর্ঘ ২৩ বছর পরও ১৬ টি তাজা প্রাণের স্মরণে কর্মসূচি গ্রহণ করা হল খোয়াইয়ের দুই নং বাজারে। বিজেপির নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবছর ১৩ ই জানুয়ারি সকলকে সাথে নিয়ে শহীদ স্মরণে সমাবেশ করা হয়। নিজের আলোচনায় বিধায়ক পিনাকি দাস চৌধুরী বাম জমানায় অপশাসন থেকে শুরু করে উগ্রবাদ কিভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেই বিষয়গুলো তুলে ধরেন। এবং এও বলেন কমিউনিস্টরা যাতে আর কোনদিন ত্রিপুরা রাজ্যে ফিরে না আসতে পারে সেজন্য সকলকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান রাখেন। পাশাপাশি তিনি এই দিন দায়িত্ব সহকারে দাবি করেন গোটা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম রাজনৈতিক দল হচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি। এছাড়াও এই সমাবেশে স্থানীয় মন্ডল সভাপতি অনুকূল দাস ও বক্তব্য রাখেন। পাশাপাশি দাবি করেন এই সময়ের মধ্যে সরকার উন্নয়নকে হাতিয়ার করে মানুষের পাশে থাকার জন্য নিরন্তর ভাবে প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার এই শহীদ স্মরণে সমাবেশে গোটা খোয়াই বিজেপি মন্ডলের অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে শহীদ সমাবেশে একটি জিনিসই খুব দৃষ্টিকটু লেগেছে বলে অনেকে উক্তি করেন। কারণ খোয়াই মন্ডলের উদ্যোগে এই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে স্মরণ সভা কড়া হলেও খোয়াই মন্ডলের প্রাক্তন মন্ডল সভাপতিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি । যদিও বয়সের কারণে উনার পথ ছেড়ে দিতে হয়েছে তবু এখানে বলা যায় বিগত দিনগুলিতে খোয়াই মণ্ডলের উদ্যোগে এই শহীদ দের সম্মান জানানো হতো যেটা শুরু করেছিলেন প্রাক্তন মন্ডল সভাপতি সুব্রত মজুমদার। দলের পক্ষ থেকে এমন একটা অনুষ্ঠানে প্রাক্তন মন্ডল সভাপতি কে দেখতে না পেয়ে অনেকেই হতাশ গ্রস্ত। কারণ এই সমাবেশের রাস্তাটা উনি তৈরি করে দিয়ে গেছিলেন বলে মন্তব্য করেন অনেকেই।