Thursday, December 26, 2024
বাড়িখবরশীর্ষ সংবাদরাজেন্দ্র ঢাকি নাটকের মূল কুশীলবের চরিত্রে থাকা রাজেন্দ্র ঢাকি তথা জীবন ঘোষ...

রাজেন্দ্র ঢাকি নাটকের মূল কুশীলবের চরিত্রে থাকা রাজেন্দ্র ঢাকি তথা জীবন ঘোষ চলে গেলেন না ফেরার দেশে ।

বাসুদেব ভট্টাচার্যী খোয়াই ২৫ শে নভেম্বর….. প্রচলিত একটা কথা রয়েছে এবং এই কথাটা অনেক সময় সংবাদপত্রের মুখ্য একটি লাইন হয়ে দাঁড়ায় কথাটি হল ঢাকি শুদ্ধ বিসর্জন। তেমনটাই ঘটলো রবিবার সকালে বিসর্জিত হলেন অর্থাৎ পড়লোকে চলে গেলেন খোয়াই নাট্য সংসদের সদস্য ও অভিনেতা এক নাটকের ঢাকি তথা জীবন ঘোষ ।এই ঢাকি অর্থাৎ জীবন ঘোষকে খোয়াই বাসি শেষ বিদায় দেয় রবিবার সকালে । রবিবার সকালে দুর্গানগর স্থিত নিজ বাড়ির ঠাকুর ঘরে পূজো দিতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হন শেষে খোয়াই জেলা হাসপাতাল থেকে আই এল হাসপাতালে নিয়ে যাবার পথে মৃত্যুবরণ করেন । পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক মৃত্যুকালে ওনার বয়স হয়েছিল প্রায় ৬০ এর কাছাকাছি । মৃত্যুকালে রেখে গেছেন স্ত্রী ও পুত্র সহ অনেক গণমুগ্ধদের । কেন জীবন ঘোষের নাম ঢাকি হল অর্থাৎ রাজেন্দ্র ঢাকি নামে তিনি পরিচিত হলেন এর প্রেক্ষাপটটা না বললে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বর্তমান প্রজন্মের পাঠকরা সেটা বুঝতে পারবে না। যদিও নাট্য জগতের সমস্ত ব্যক্তিরাই এই ঢাকি অর্থাৎ জীবন ঘোষকে খুব ভালো করে চেনেন রাজেন্দ্র ঢাকির গল্পের নায়ক হিসেবে। সত্যি বলতে এক দুর্দান্ত অভিনয় করে গিয়েছিলেন রাজেন্দ্র ঢাকি নাটকের মূল কুশীলব জীবন ঘোষ। রাজেন্দ্র ঢাকি নাটকের মূল কুশীলব রাজেন্দ্র ঢাকি হিসেবে খ্যাতি পাওয়ার পেছনে যার অবদান সব থেকে বেশি ছিল তিনি হলেন এই নাটকের লেখক এবং পরিচালক স্বর্গীয় হীরেন্দ্র সিনহা। তিনি যদিও উনার জীবনে অনেক নাটক লিখে গেছেন তার মধ্যে এই রাজেন্দ্র ঢাকির গল্প নাটকটি রাজ্যসহ দেশের মধ্যে ব্যাপক সুনাম কামিয়েছিল আজ থেকে থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে। চারিদিকে শুধু রাজেন্দ্র ঢাকি নাটকের চর্চা হচ্ছিল। একের পর এক নাটক প্রতিযোগিতায় রাজেন্দ্র ঢাকি নাটকটি সবদিক দিয়ে একের পর এক প্রথম স্থান অধিকার করে নিচ্ছিল পাশাপাশি রাজেন্দ্র ঢাকির চরিত্রের মূল কুশিলব জীবন ঘোষ শ্রেষ্ঠ কুশীলব হিসাবে পুরস্কার পেয়ে চলেছেন। আর এই নাটক কে নিয়ে উত্তেজনার সীমা ছিল না নাট্যপ্রেমী দর্শকদের মধ্যে। রাজেন্দ্র ঢাকি নাটকের সাথে জীবন ঘোষের নাম কেন এত ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল সেই প্রসঙ্গে আসছি। ৮০ থেকে ৯০ দশকে সাংস্কৃতিক জগতে এবং নাট্য চর্চায় খোয়াই শহরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছিল সেই থেকে বিভিন্ন নাট্য সংস্থার গুলি তাদের একের পর এক শ্রেষ্ঠ নাটক গুলি দর্শকদের জন্য উপহার দিয়েছিল তাইতো খোয়াই শহরকে সংস্কৃতিক জগতের পিঠস্থান বলে আখ্যা দেওয়া হয় ।সেই সব সংস্থার মধ্যে আরেকটি সংস্থা ছিল যার নাম সবার উপরে সেই নাট্য সংস্থাটি হলো খোয়াই নাট্য সংসদ এই সংসদের আজীবন সদস্য ছিলেন প্রয়াত জীবন ঘোষ। প্রয়াত নাট্যকার হীরেন্দ্র সিনহার লেখা কিংবদন্তি নাটক ছিল এই রাজেন্দ্র ঢাকির গল্প ।এই গল্পের পান্ডুলিপির থিমটা ছিল একটি ঋষি পরিবারের ছেলে আর্মিতে যোগদান করেছে সেই নিয়ে ঘটনা। এই নাটকের মূল কুশীলব রাজেন্দ্র ঢাকি অর্থাৎ জীবন ঘোষ এক সময়ে ঢাক বাজিয়ে সংসার প্রতিপালন করতেন। শেষে এক সময় বয়সের ভারে ঢাক বাজানো ছেড়ে দিয়েছিলেন বাড়িতে বসেই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বানাতেন ।আর একটা সময় ঢাক বাজাতেন বলেই উনার নাম পড়েছিল রাজেন্দ্র ঢাকি গল্পের সূত্রে ।উনার দুই পুত্র ছিল বড় ছেলে পরান ঋষি দাস কোনভাবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে। ছেলেকে নিয়ে তার পিতা রাজেন্দ্র ঢাকির প্রায় সময় চিন্তা হতো । একটা সময় দেশের সীমান্তের যুদ্ধ লাগে সেই যুদ্ধে যোগদান করে ছেলে পরান ঋষি দাস । ছোট জাতি থেকে একটি ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছে বলে সেই রাজেন্দ্র ঢাকি কে মানুষ গালমন্দ করত যে এক মুচির ঘরের ছেলে কিভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় এই নিয়ে নাটকের গল্পটি শুরু হয়। শেষে এক সময় সেই যুদ্ধে পরান ঋষি দাস দেশের জন্য শহীদ হয়ে যান । ছেলের মৃত্যুর খবর নিয়ে এক সেনা অফিসার খোঁজ করতে করতে রাজেন্দ্র ঢাকির বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় এবং পুত্র পরান ঋষি দাস দেশের জন্য আত্ম বলিদান দিয়েছে তার জন্য একটি মেডেল তুলে দেন রাজেন্দ্র ঢাকির হাতে মরণোত্তর সম্মান। এরপর থেকে নাটকের মোর ঘুরা শুরু করে নাটকে পরিবেশ পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে যায় মঞ্চে নাটকের পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আবেগপ্রবণ ।শেই খবর প্রচার জন্য বাড়িতে আসে সাংবাদিক সহ এক ক্যামেরাম্যান যেই ক্যামেরাম্যানের ভূমিকায় সংবাদ প্রতিনিধি স্বয়ং ছিলেন ক্যামেরাম্যান ।যখন ক্যামেরাম্যান প্রয়াত পরান ঋষি দাসের বাবা রাজেন্দ্র ঢাকি অর্থাৎ জীবন ঘোষের ছবি তোলার জন্য এগিয়ে আসেন তখন উনি কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ছেলের বিয়োগের কারণে । এক সময় যারা রাজেন্দ্রকে অপমান করতে ছাড়েনি তারাই এরপর খবর পেয়ে দলে দলে বিভিন্ন এলাকাবাসী উনার বাড়িতে হাজির হচ্ছিলেন। এলাকার গর্ব এক ঋষি সম্প্রদায়ের ছেলে নিজের জীবন দিয়ে দেশকে রক্ষা করেছে পাশাপাশি ওই এলাকার নাম উজ্জ্বল করেছে বলে। শুধু এখানেই শেষ না নাটকের শেষ দৃশ্যে তার ছেলে পরান ঋষিক দাস কে শ্রদ্ধা জানাতে বাবা নাটকের কুশিলব রাজেন্দ্র ঋষি দাস অর্থাৎ জীবন ঘোষের গলায় ছেলেকে শেষবারের মতন দেখতে পাইনি বলে যার যে আকুতি মিনতি পরানননন… কোথায় গেলি বাবা আমাদের ছেড়ে নাটকের মঞ্চে এই যে শেষ দৃশ্যটা করেছিলেন জীবন ঘোষের তা ছিল এক অসাধারণ প্রতিভার প্রতিস্খলন ।এই দৃশ্য দেখে রাজেন্দ্র ঢাকির গল্প নাটকটি দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি বাদ যায়নি যে কারো চোখে জল আসেনি। কি অসাধারণ দৃশ্য ফুটিয়েছিলেন জীবনঘোষ সহ অন্যান্য কুশীলবরা তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।তাইতো প্রয়াত লেখক হীরেন্দ্র সিনার লেখা নাটক রাজেন্দ্র ঢাকির গল্পটি আজও নাট্য জগতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে । আর সেই নাটকের মূল কুশিলব রাজেন্দ্র ঢাকি অর্থাৎ জীবন ঘোষ ভালো নাম মনমোহন ঘোষ এই পৃথিবীর সমস্ত মায়া ত্যাগ করে রবিবার সকালে পড়লোক গমন করেন ।উনার মৃত্যুতে নাট্য জগতের এক বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল যা পূরণ করা কোনদিনই সম্ভব নয়। নাট্য জগতের এইরকম এক প্রতিভা কে হারানোর ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল নাট্য চর্চার দিক থেকে । মৃত্যুর পরেও এই ধরনের মহান অভিনেতারা দর্শক শ্রোতার মনে রাজেন্দ্র ঢাকি হিসেবেই বেঁচে থাকবেন । সাংস্কৃতিক শহর হিসেবে পরিচিত খোয়াই শহরের সমস্ত সাংস্কৃতিক জগতের লোকদের মধ্যে এবং নাট্য জগতের কাছে প্রয়াত জীবন ঘোষ রাজেন্দ্র ঢাকি হিসেবে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

five × two =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য