রাজ্য ‘বিকশিত ত্রিপুরা’র নির্ধারিত পথে সুদৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। গুণমানসম্পন্ন, বস্তুগত ও সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন, পরিকল্পিত নগরসমষ্টির উন্নয়ন, প্রযুক্তিনির্ভর ও সংস্কারমুখী জনকল্যাণকামী প্রশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের অনুকুল পরিবেশ সুনিশ্চিতকরণ, বিনিয়োগ প্রবর্ধন এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকর্ষণ করে আমাদের সরকার রাজ্যের সার্বিক বিকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা আমাদের মূল মন্ত্র সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই বাজেটের মাধ্যমে সমাজের সকলস্তরের জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক সামগ্রিক বিকাশ সাধনে বদ্ধপরিকর। আজ বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য ৩২ হাজার ৪২৩ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকার আর্থিক ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় একথা বলেন।
আর্থিক ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে সুসমন্বিত ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সামগ্রিক উন্নয়নমুখী কেন্দ্রীয় বাজেট লোকসভায় পেশ করার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যগুলি এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রধান প্রধান ঘোষণাগুলি তুলে ধরেন। অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বাজেট বক্তৃতায় বিধানসভায় বলেন, ত্রিপুরা পুলিশ চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, হত্যাকান্ড, দাঙ্গা এবং নারীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে অপরাধের তদন্তের জন্য ৫টি অত্যাধুনিক মোবাইল ফরেন্সিক ভেহিক্যাল কেনা হয়েছে। রাজ্যের ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরোটরিকে আধুনিক প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম ক্রয় করার মাধ্যমে উন্নীত করা হয়েছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, প্রজুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সমাজে নতুন ধরণের অপরাধের অভিযোগ আসছে। নতুন যুগের এই সমস্ত অপরাধের মধ্যে যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমজনিত অপরাধ, বিদ্বেষজনিত অপরাধ, ক্রিপ্টো কারেন্সি সম্পর্কিত অপরাধ মানবপাচার, ভয়েস অ্যানালিসিস ইত্যাদি মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকার ‘নিউ এইজ ক্রাইম ইউনিট’ গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পশ্চিম আগরতলা, পূর্ব আগরতলা, বিলোনীয়া, বাইখোরা, বাগবাসা, মধুপুর পুলিশ স্টেশনে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে কারাবাসীদের জন্য টেলিমেডিসিন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে পশ্চিম ত্রিপুরায় একটি নতুন সাব জেল নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তাতে ব্যয় হবে ২০ কোটি টাকা। আমবাসায় একটি মডেল জেলা সংশোধনাগার নির্মাণ করা হবে। বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। মনুবাজার, দামছড়া, অম্পি, রইস্যাবাড়ি এবং ছামনুতে অগ্নি নির্বাপক কেন্দ্রের স্থায়ী ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ৫৩টি ওয়াটার টেন্ডার কেনা হয়েছে। ২০টি লাইট অপারেশন্যাল ভেহিক্যালও কেনা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাণীরবাজার, ঋষ্যমুখ, করবুক, কিল্লা, ছৈলেংটা, ফটিকরায়, টাকারজলা, পেঁচারথল এবং তেলিয়ামুড়ায় ফায়ার স্টেশনগুলিতে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।
তাছাড়া অমরপুর, ধর্মনগর ও উদয়পুরের অগ্নিনির্বাপক কেন্দ্রগুলির এবং উদয়পুরের ডিভিশন্যাল ফায়ার অফিসের পুনঃনির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি যোজনায় ২,৭৭,৯৭০ জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৪২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। রাজ্যের ১৪ লক্ষ ১৪ হাজার কৃষক প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতাভুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৬৮৫টি কিষাণ ক্রেডিট কার্ড কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী জানান, ২০১৮-১৯ থেকে গত মরশুম পর্যন্ত রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে ২ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কেনা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছর থেকে কৃষকদের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত ১,৯১,২৯০টি সয়েল হেলথ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। ৫২টি গ্রামীণ বাজারের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১২৭ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার বিদ্যালয় শিক্ষা ক্ষেত্রকে গুণগতভাবে অধিকতর সমৃদ্ধশালী করে তুলতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নিপুন ত্রিপুরা প্রকল্পে শিশুদের আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে ৪,২২৭টি বিদ্যালয়ে নিপুন কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। ১৮১টি বিদ্যালয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইসিটি, ৯৫টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাসরুম, ১৪০টি বিদ্যালয়ে টিংকারিং ল্যাব, ১০২টি বিদ্যালয়ে দক্ষতা, শিক্ষা বা স্কিল অ্যাডুকেশন, ১৮০টি বিদ্যালয়ে পার্সন্যাল অ্যাডাপটিভ লার্নিং ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ৭৫টি বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ, ৯২টি বিদ্যালয়ে শৌচাগার এবং ২৩টি বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কোয়ার্টার নির্মাণের কাজ চলছে। চলতি অর্থবছরে ৩৭৮টি বিদ্যালয়ে ১৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে টিএলএম পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র আবাসিক বিদ্যালয় প্রকল্পে ১৬টি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। ঊনকোটি জেলার কাঞ্চনবাড়িতে একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, সিপাহীজলার দয়ারাম এলাকায় একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, টাকারজলাতে একটি কমিউনিট হেলথ সেন্টার, ধলাইয়ে ৮২ মাইল এলাকায় নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দক্ষিণ ত্রিপুরার নিহার নগরে একটি নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। রাজ্য সরকার আগরতলায় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথালমোলজি বা টার্শিয়ারি আই কেয়ার হাসপাতাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতালে ২০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষ ওয়ার্ড স্থাপনের জন্য ওএনজিসি ৩৪ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে এবং এই ওয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্যের সব জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের
সরকারি আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবেই এই কাজের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৮টি জেলাভিত্তিক নেশামুক্তি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।
অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমি ধুসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য প্রতি পরিবার পিছু অতিরিক্ত ১০ কেজি চাল বিনামূল্যে ২ মাসের জন্য রেশনের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। ১৮ হাজার মেট্রিক টন ফোর্টিফায়েড চাল বিতরণে রাজ্য সরকারের ৭০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এনএফএসএ উপভোক্তাদের জন্য বিনামূল্যে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করা হয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ৫২৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষকদের কল্যানে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, জনজাতি অংশের মানুষের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য রাজ্য সরকারের নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। চিফ মিনিস্টার্স রাবার মিশনের আওতায় ২৩ হাজার ১৭৭ হেক্টর রাবার বাগিচা তৈরীর মাধ্যমে ২৮,১৪৯টি পরিবার লাভবান হয়েছে। ৩৩, ১৬৫ জন জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের বোর্ডিং হাউজ স্টাইপেন্ড প্রদান করা হয়েছে। ৩৩,৪৯৩ জন ছাত্রছাত্রীকে মাধ্যমিক পরবর্তী স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে। নবম ও দশম শ্রেণির ১১,৫৩৪ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রাক মাধ্যমিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়েছে। মেধা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ৬,৮৬২ জন জনজাতি অংশের ছাত্রছাত্রীকে। ধরতি আভা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযানে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ও জীবিকা নির্বাহ ইত্যাদি বিষয়ে যে ত্রুটিগুলি রয়েছে সেগুলি সমাধানে এই মিশন আগামী ৫ বছর রাজ্যের ৩৯২টি ভিলেজে কাজ করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান অর্থ বছরে রাজ্য সরকার ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদকে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ১৬৯ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা প্রদান করেছে। রাজ্য সরকার তপশিলি জাতি গোষ্ঠীর জনসাধারণের সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে তপশিলি জাতি ভুক্ত ১৭,৩০২ জন ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীকে প্রাক মাধ্যমিক স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। ৬৭৮৪ জন ছাত্রছাত্রীকে ড. বি আর আম্বেদকর মেধা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনুসুচিত জাতি অভ্যুদ্বয় যোজনায় তপশিলিজাতি অধ্যুষিত গ্রামে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পোল্ট্রি শেল্টার, সোলার স্ট্রিট লাইট, জলের ট্যাংক, পাকা ড্রেন, ইট বিছানো রাস্তা, বক্স কালভার্ট, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণ, পানীয়জলের ব্যবস্থা সম্প্রসারণ প্রভৃতি।
অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বিধানসভায় বলেন, চলতি অর্থবছরে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অধীনে ২২,০০২টি গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ১৪৬ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা। পিএম জনমন প্রকল্পে পিভিপিজি-দের জন্য ৮২২১টি ঘরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ৮২১৬টি ঘর নির্মাণ শেষ হয়েছে। ব্যয় হয়েছে ২২১ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। চলতি অর্থ বছরে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এমজিএন রেগায় ১১১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ কোটি ৪১ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যে ৬৮২টি অমৃত সরোবর খননের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১২৬৬৩ জন গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারভুক্ত মহিলাকে স্বসহায়ক দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ২২১টি ভিলেজ অর্গানাইজেশন এবং ২০টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হচ্ছে নিরাপদ পানীয়জল সরবরাহ করা। জলজীবন মিশন চালু হওয়ার আগে রাজ্যে মাত্র ২৪৫০২টি অর্থাৎ ৩.৩ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে পানীয়জল সরবরাহের জন্য নল সংযোগ ছিল। জলজীবন মিশন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৬ লক্ষ ১৬ হাজার ১২২টি অর্থাৎ ৮২.০৬ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
গত ৫ বছরে এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩,২২১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। অর্থমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সমস্ত মহকুমা সদরগুলিকে ২ লেন বিশিষ্ট সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এবছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৪টি আরসিসি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। ১৮০ কিলোমিটার সড়কের মানোন্নয়নের কাজ ১,৫৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কে মেরামতির কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫টি আরসিসি সেতুর নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। ২৮৫ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করা হবে এবং ১,৭৫০ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতিতে রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০৩ কোটি টাকা। রাজ্যে ২৪,৬০০ গৃহে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারত সরকারের পিএম জনমন প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষভাবে দুর্বল জনজাতি গোষ্ঠীর ১১৬৯২টি গৃহে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। শক্তিশালী ও কার্যকর বিদ্যুৎ সংযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে নর্থ ইষ্টার্ন রিজিওন্যাল পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট নামে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে। পিএম ডিভাইন প্রকল্পে প্রত্যন্ত ও পার্বত্য এলাকায় বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সোলার মাইক্রোগ্রিড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য স্থান সনাক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৭৪টি ক্লাস্টারে ৯২৫৩টি পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে। পিএম কুসুম যোজনায় ৪৩৩২টি সৌরশক্তি পরিচালিত পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। আরও ৪ হাজার সৌরশক্তি পরিচালিত পাম্প স্থাপনের কাজ চলছে।
অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, আমাদের রাজ্য সবার জন্য ঘর এই লক্ষ্যে চ্যাম্পিয়ান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর) এর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৭০,১৭২টি গৃহ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। স্বচ্ছভারত মিশনে (শহর) ২০টি পৌর এলাকায় ২৩,৮২৩টি ব্যক্তিগত পারিবারিক শৌচাগার এবং ১,২৯৫টি গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬টি কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ সুবিধাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশের মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। ছবিমুড়াতে ১০টি লগহাট নির্মাণ করা হয়েছে। লগহাটগুলি অবিলম্বে চালু করা হবে। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ৫১টি লগহাট নির্মাণ করা হয়েছে। আগরতলার কৃষ্ণসাগর দীঘিতে লেজার এবং লাইট এন্ড সাউন্ড শো ব্যবস্থা তৈরী করা হয়েছে। উদয়পুরের বনদোয়ারে ৫১ শক্তিপীঠের প্রতিরূপ স্থাপন করা হবে। এই কাজের জন্য ৯৭ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। উজ্জয়ন্ত প্রাসাদে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্মকান্ড যেমন জেট স্কি, কয়াকিং, ওয়াটার রোলার, প্যাডেল বোটস, শিকারা বোট প্রভৃতি চালু করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি তার সংরক্ষণ, বিকাশ ও বিস্তারের লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। রাজ্যের মিশ্র সংস্কৃতির প্রচার, প্রসার এবং দেশের অন্যান্য রাজ্যের নাগরিকদের সাথে সৌভ্রাতৃত্ববোধ রক্ষা ও তার বিকাশের জন্য রাজ্য সরকার আসাম, রাজস্থান, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও নয়াদিল্লিতে সাংস্কৃতিক দল পাঠিয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি, রাজস্ব, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশ, শিল্প ও বাণিজ্য, দক্ষতা বিকাশ, পরিবহণ, সমবায় প্রভৃতি দপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন।