বর্তমানে রাজ্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র কমিউনিটি হেলথ সেন্টার সহ জেলা হাসপাতালগুলিতে উন্নতমানের পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। এরফলে চিকিৎসা পরিষেবারও উন্নতি হচ্ছে। আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি ও আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী আজ প্রজ্ঞাভবনে জাতীয় স্বেচ্ছা রক্তদান দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভারতের ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের জনক হিসেবে পরিচিত ডা জয়গোপাল জলির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।
রক্তদান শিবিরে মুখ্যমন্ত্রী রক্তদাতাদের সাথে মতবিনিময় করেন ও তাদের উৎসাহিত করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, আয়ুষ্মান ভারত একটি বিশ্বাসের নাম।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর্থিকভাবে দুর্বল অংশের মানুষের কল্যাণে দেশব্যাপী আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চালু করেছেন। এই যোজনার সফল ৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। রাজ্যের ১৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৩৬৪ জন সুবিধাভোগী এই যোজনার আওতায় এসেছেন। রাজ্যের বাদবাকী জনসাধারণের স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রাজ্যে চীফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা- ২০২৩ প্রকল্পটির সূচনা হয়েছে। এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৩ হাজার ৬২টি পরিবারের মোট ৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ৭০৯ জন সুবিধাভোগীকে আয়ুষ্মান কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। ১২ হাজারেরও বেশী রোগী বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। এই প্রকল্পে ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকারও অধিক দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ইউনির্ভাসেল হেলথ কভারেজ নিশ্চিত করায় এই প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশনের অন্যতম বিষয় হলো আয়ুষ্মান ভারত হেলথ অ্যাকাউন্ট নম্বর বা আভা নম্বর। এই ১৪ সংখ্যার আভা নম্বরের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেকটি নাগরিককে নিজের স্বাস্থ্য সম্বন্ধিত তথ্য ডিজিটালি সংরক্ষণ এবং প্রয়োজন অনুসারে সেই তথ্য ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। এই আইডি থাকলে হাসপাতালের লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে না। পাশাপাশি নিজের ল্যাব অথবা টেস্ট রিপোর্টও সহজেই এই আইডি’র মাধ্যমে পেতে পারেন। রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২১ লক্ষ ৫১ হাজার ৯৪৯টি আভা আইডি ইস্যু করা হয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ৭০ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল প্রবীন নাগরিকদের স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার বিষয়টির কথাও উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর দেশের সুরক্ষা এবং অর্থনৈতিক বিকাশে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। অ্যাক্ট ইষ্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নেও তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব-আরোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের প্রধান শর্তই হচ্ছে শান্তি। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পদক্ষেপের ফলে বর্তমানে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে শান্তির পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যকে অষ্টলক্ষ্মী নামে অবহিত করেছেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতের ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের জনক হিসাবে পরিচিত চিকিৎসক ডা. জয়গোপাল জলির জন্মদিবসকে জাতীয় স্বেচ্ছা রক্তদান দিবস হিসাবে পালন করা হয়। মুমুর্ষ রোগীর জীবন বাঁচাতে রক্তদানের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, রাজ্যে বর্তমানে রক্তদান জনজাগরণের রূপ নিয়েছে। রাজ্যের জনগণ বিশেষ করে মহিলারাও স্বতস্ফূর্তভাবে রক্তদানে এগিয়ে আসছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্য বলেন, ত্রিপুরা ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজের আওতায় এসেছে। দেশে খুব কম রাজ্যই এধরণের সুবিধা রয়েছে। সামাজিক এবং আর্থিকভাবে দুর্বল অংশের মানুষের কল্যাণে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনাটি দেশে চালু করা হয়। রাজ্যের প্রাথমিক, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিতে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত। অনুষ্ঠানে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য শাখার মিশন ডাইরেক্টর ড. সমিত রায় চৌধুরী, মেডিক্যাল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচ পি শর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চীফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা-২০২৩ এবং জাতীয় স্বেচ্ছা রক্তদান দিবসের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে চিকিৎসা পরিসেবায় আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার অন্তর্গত স্টেট হাসপাতাল ক্যাটাগরিতে অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওন্যাল ক্যান্সার সেন্টার, জেলা হাসপাতাল ক্যাটাগরিতে ধলাই জেলা হাসপাতাল, মহকুমা হাসপাতাল ক্যাটাগরিতে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতাল, কমিউনিটি হেলথ ক্যাটাগরিতে মনুবাজার রুরাল হাসপাতাল এবং প্রাইমারি হেলথ সেন্টার ক্যাটাগরিতে রূপাইছড়ি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সেরা হাসপাতালের শিরোপা পেয়েছে। চীফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা-২০২৩ এ সর্বাধিক আয়ুষ্মান কার্ড জেনারেশনের জন্য সেরা জেলা হিসেবে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়াও আয়ুষ্মান ভারত ডিজিট্যাল মিশনের অধীনে সর্বাধিক স্ক্যান ও শেয়ার ক্যাটাগরিতে পানিসাগর মহকুমা হাসপাতাল এবং হেলথ রেকর্ড সংযোগের ক্ষেত্রে সেরা বেসরকারি সুবিধা প্রদানকারী হিসেবে টেরেসা ডায়গোনোস্টিক সেন্টার পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়াও আভা জেনারেশনে সেরা দপ্তর হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ত্রিপুরা পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ সংশ্লিষ্টদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘স্বাস্থ্য সংবাদ’র আবরন উন্মোচন করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবির আয়োজকদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জাতীয় স্বেচ্ছা রক্তদান দিবস উপলক্ষ্যে রাজ্যের রক্ত সংঞ্চালন পর্ষদের সদস্য সচিব ডাঃ বিশ্বজিৎ দেববর্মা অনুষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ করান।