রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ও নাগরিকদের সুরক্ষায় পুলিশকে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শারদ উৎসবের দিনগুলি শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আজ রাজ্য পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা জানান। উল্লেখ্য, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আজ রাজ্য পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে এক পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। সভায় মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ড পি কে চক্রবর্তী, বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার ও রাজ্যের পদস্থ পুলিশ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।
পর্যালোচনা সভার পর রাজ্য পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা জানান, শারদ উৎসবের দিনগুলি শান্তিপূর্ণ রাখতে রাজ্য সরকার সচেষ্ট। পুজোর চাঁদা নিয়ে জোর জুলুম বরদাস্ত করা হবে না। এই বিষয়ে ইতিমধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের পর্যালোচনা সভার মূল উদ্দেশ্যই ছিল রাজ্যের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা। এই বিষয়ে আধিকারিকগণের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ আধিকারিকগণ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশি ব্যবস্থায় অন্যতম স্তন্ত হল রাজ্যের থানাগুলি। থানায় গিয়ে নাগরিকগণ যাতে তাদের অভিযোগ বা সমস্যার কথা বলতে পারেন সে বিষয়ে পুলিশ আধিকারিকদের সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে কোন নাগরিক যেন থানায় গিয়ে নিজেকে অসহায় মনে না করেন সেই বিষয়েও নজর দিতে হবে। কোন নাগরিক থানায় এলে তার প্রতি মানবিক ব্যবহার করতে হবে। পুলিশের প্রয়াস কর্মসূচি অব্যাহত রাখা এবং আইনি বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার নেশা ও মাদকের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের উপর জোড় দিয়েছেন। রাজ্যের পুলিশ ও নেশার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিচের দিক থেকে রাজ্যের স্থান তৃতীয়। নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্তকরণ এবং নেশা সামগ্রী নষ্ট করার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরা অন্যতম স্থানে রয়েছে। আজকের সভায় এই কর্মসূচি আরও জোরদার করার জন্য পুলিশ আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও নিয়ম মাফিক পুলিশের টহলদারি ও মনিটরিং এর উপরও জোর দিতে বলা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, ত্রিপুরা পুলিশের ১৫০ বছরের ইতিহাস রয়েছে। ত্রিপুরা পুলিশ রাজ্যের গর্ব। সারা দেশে এর সুনাম রয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ত্রিপুরা পুলিশ উল্লেখযোগ্য কাজ করে চলছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যে যেই দায়িত্বে রয়েছেন সেই দায়িত্ব স্বচ্ছতার সাথে সম্পাদন করতে হবে। বর্তমান রাজ্য সরকারও স্বচ্ছতার মধ্যদিয়ে চলছে। মানুষ এটাকেই মনে রাখবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের সভায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ট্রাফিক সমস্যা সমাধানেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন বলেন, আজকের পর্যালোচনা সভায় অপরাধ দমন, আইন শৃঙ্খলার পরিস্থিতি, সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় এসমস্ত ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কোন ধরণের আপোষ করা হবেনা। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার উপরও সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের অপরাধ সংক্রান্ত তথ্যের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরায় সবচেয়ে বেশী নেশা সামগ্রী ধবংস এবং বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক আরও জানান, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় বিভিন্ন ধরণের অপরাধ প্রতিনিয়ত কমছে। অসামাজিক কার্যকলাপ দমনের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাচ্ছে ত্রিপুরা পুলিশ।