রাজ্যের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে রাজ্য সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে। সরকারের আন্তরিকতায় কোনও ঘাটতি নেই। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে রাজ্যের সর্বত্র চালু রয়েছে কর্মযজ্ঞ। আজ রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক রঞ্জিত দাসের আনা একটি দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের দুর্গম অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুফল পৌঁছে দিতে অভিনব প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। সকল অংশের মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার সুনির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, কুলাই, উদয়পুর এবং শান্তিরবাজার এই তিনটি জেলা হাসপাতালে তিনটি ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে। এছাড়া ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টারের নির্মাণ কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনটি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারকে মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে। এগুলি হচ্ছে পানিসাগর, কুমারঘাট এবং করবুক হাসপাতাল। ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আপগ্রেডেশনের কাজ এগিয়ে চলেছে। ঊনকোটি জেলা হাসপাতাল চত্বরে মেডিক্যাল স্টোর নির্মাণ এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এছাড়া গন্ডাছড়া মহকুমা হাসপাতালেরও আপগ্রেডেশনের জন্য নির্মাণ কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, জনজাতি এলাকার উন্নয়নের অংশ হিসেবে ২০ শয্যাবিশিষ্ট লংতরাইভ্যালি উপবিভাগীয় হাসপাতাল ভবনের সম্প্রসারণের কাজ প্রায় শেষের পথে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ন্যাশনাল হেলথ মিশনের অধীনে গোমতী জেলা হাসপাতাল, উত্তর জেলা হাসপাতাল, দক্ষিণ জেলা হাসপাতাল এবং ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে ৬টি মর্চুয়ারির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি জানান, সুবর্ণ জয়ন্তী ত্রিপুরা নির্মাণ যোজনা প্রকল্পের অধীনে কাঞ্চনপুর মহকুমা হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ১৬টি স্টাফ কোয়ার্টার ভবন এবং অমরপুর মহকুমা হাসপাতাল কমপ্লেক্সে ১৬টি স্টাফ কোয়ার্টার ভবন নির্মাণের কাজ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি জানান, আইজিএম, জিবিপি হাসপাতাল, দক্ষিণ জেলা হাসপাতাল, উত্তর জেলা হাসপাতাল, খোয়াই জেলা হাসপাতাল এবং ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে মাতৃত্বকালীন আইসিইউ কার্যকর করা হবে। ইমারজেন্সি কোভিড রেসপন্স প্ল্যান্ট (ইসিআরপি-২) এর অধীনে সমস্ত জেলা হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক কেয়ার ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, জেলা ও মহকুমা হাসপাতালের জন্য ১৬টি ইউএসজি মেশিন এবং ২২টি এক্সরে মেশিন কেনা হয়েছে। গোমতী ও ধলাই জেলা হাসপাতালে কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট চালু করা হবে। রাজ্যের জনগণের স্বার্থে আগরতলা গভর্ণমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং আইজিএম হাসপাতাল ছাড়াও প্রত্যেকটি জেলা হাসপাতালে ডায়ালাইসিস পরিষেবা এবং সিটি স্ক্যান পরিষেবা চালু রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশের জবাবে আরও বলেন, মেলাঘর মহকুমা হাসপাতালকে ফার্স্ট রেফারেল ইউনিট হিসাবে আপগ্রেডেশন করা হচ্ছে। তেলিয়ামুড়া, অমরপুর, সাব্রুম, কাঞ্চনপুর, গন্ডাছড়া এবং ছৈলেংটা মহকুমা হাসপাতালকে ফার্স্ট রেফারেল ইউনিট হিসাবে কার্যকারি করার জন্য ভারত সরকারের অনুমোদন পাওয়া গেছে। তিনি জানান, আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ এবং আইজিএম হাসপাতাল সহ প্রত্যেকটি জেলা হাসপাতালে ফার্স্ট রেফারেল ইউনিট চালু রয়েছে। তাছাড়া মেলাঘর, বিলোনীয়া, বিশালগড়, কমলপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং খেরেংবার কমিউনিটি হেলথ সেন্টারকে ফার্স্ট রেফারেল ইউনিট হিসেবে চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক পরিষেবা চালু করা হয়েছে। তাছাড়া পর্যায়ক্রমে সমস্ত মহকুমা হাসপাতালে এটি পরিষেবা শুরু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চিকিৎসকরা। তাদের হারানো মনোবল ফিরে পেয়েছেন। এখন জটিল অস্ত্রোপচার রাজ্যেই সম্ভবপর হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীরা নিরন্তর প্রয়াস জারি রেখেছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহকুমা হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালগুলিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও অন্যান্য চিকিৎসক পোস্টিং দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা সুষ্ঠুভাবে প্রদানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নার্স পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী যেমন ফার্মাসিস্ট, লেবোরেটরি টেকনিশিয়ান, রেডিওগ্রাফার, অপথালমিক অ্যাসিসটেন্ট, ইসিজি টেকনিশিয়ান ও মাল্টিপারপাস ওয়ার্কার পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।