রাজ্যে গত কয়েকবছরে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ত্রিপুরায় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে নতুন নতুন সম্ভাবনাগুলিকে গ্রহণ করতে হবে। রাজ্য সরকার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। গতকাল নারিকেলকুঞ্জে দু’দিনব্যাপী ইউনিটি প্রোমো ফেস্ট-২০২৫’র উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী নারিকেলকুঞ্জ রিসোর্টের পাশে ৬৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা শিশু উদ্যানেরও উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সমগ্র ত্রিপুরা রাজ্যই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। সবুজ বনানী, উঁচু নীচু পাহাড়, ঝর্ণা, নদী মিলেমিশে রাজ্যকে মনোরম করে তুলেছে। এখানকার জলবায়ুও মনোরম। এছাড়া রাজ্যে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আমবাসা, গন্ডাছড়া, শান্তিরবাজার সড়কটি জাতীয় সড়কে উন্নীত হলে ডম্বুর পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের আশা যাওয়া করতে আরও সুবিধা হবে। মুখ্যমন্ত্রী কাশ্মীর ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, পর্যটকরা সেখানে গেলে ভ্রমণের স্মৃতিকে ধারণ করে রাখতে সেখানকার মানুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ছবি তোলেন। আমাদের রাজ্যেও পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে জাতি-জনজাতি অংশের মানুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ছবি তোলার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশে হোম স্টে’র সুবিধা আরও বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেন। রাজ্যে পর্যটন শিল্পের বিকাশের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন সব অংশের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজ্যের পর্যটন শিল্প আরও বিকশিত হবে।
অনুষ্ঠানে পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, আমাদের রাজ্যেই অনেক সুন্দর সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে এবং পর্যটকদের উপযুক্ত পরিষেবা দিতে পারলে আরও বেশি পর্যটক রাজ্যে আসবেন। রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবে রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো ও পরিষেবার উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে। তিনি বলেন, গতবছর ডম্বুর জলাশয়ের আশেপাশে ৯টি হোম স্টে পরিষেবার অনুমোদন দিয়েছিল পর্যটন দপ্তর। গত ১ বছরে প্রায় ১৫০টি হোম স্টে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে। তাতে বোঝা যায় রাজ্যে পর্যটক আসার সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে সিকিমের পরেই রয়েছে রাজ্যের স্থান। পর্যটক আগমনের ক্ষেত্রে ত্রিপুরাকে প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রইস্যাবাড়ি ব্লক পরামর্শদাতা কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার জমাতিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিধায়ক নন্দিতা রিয়াং দেববর্মা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধলাই জিলা পরিষদের সভাধিপতি সুস্মিতা দাস, বিধায়ক রঞ্জিত দাস, বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা, এমডিসি ভূমিকানন্দ রিয়াং, ডম্বুরনগর বিএসি’র চেয়ারম্যান প্রেমসাধন ত্রিপুরা, ধলাই জেলার জেলাশাসক বিবেক এইচ বি, ধলাই জেলার পুলিশ সুপার মিহিরলাল দাস, গন্ডাতুইসা মহকুমার মহকুমা শাসক জয়চন্দ্র রিয়াং প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর মুখ্যমন্ত্রী এবং অতিথিগণ আকাশ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন। আয়োজন করা হয় ফ্যাশন শো-এর। রাজ্যের জাতি-জনজাতি অংশের মানুষের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও অলঙ্কার পড়ে যুবক-যুবতীরা ফ্যাশন শোতে অংশ নেন। সারা রাতব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।



