খোয়াই প্রতিনিধি ১৮ ই অক্টোবর….. কথায় বলে অদম্য ইচ্ছা ও মনের শক্তি থাকলে একজন শিক্ষা গুরু ও কোন ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়ই বিভিন্ন প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো সম্ভব হয়। আর এমনই এক ঘটনা ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দেন এক প্রতিভাবান পশ্চিমা আদিবাসী জাতির এক রিক্সা চালক বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তি বানিয়ে খোয়াই মহাকুমাতে।আজ থেকে ১৬-১৭ বছর আগে খোয়াই মহকুমার বাগান বাজার এলাকায় বিশ্বকর্মা পূজার সময় সেখানকার এক মূর্তি বানানোর কারিগরকে একটি প্রশ্ন করেছিলেন যে মূর্তির গায়ে ধূর্তিটি এইভাবে না পড়িয়ে অন্যভাবে পড়ালে সুন্দর হতো এই কথা শুনে বিশ্বকর্মা মূর্তি তৈরির কারিগর শৈলেন তাঁতি অপমানিত করেন ।এই কারণে যে একজন পশ্চিমা আদিবাসি হয়ে সেই কারিগর কে জ্ঞান দিচ্ছে পশ্চিমা আদিবাসী হয়ে কি জানে মূর্তির কাজ সেই ভেবে ।শেষে সেখান থেকে অপমানিত হয়ে ফিরে এসে শৈলেন তাঁতি ঐদিন রাতেই ওনার রিসকা নিয়ে বাগান বাজার এলাকার নদীর পাড়ে শ্মশানঘাট সংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি তুলে মূর্তি তরীর কাজ শুরু করেন। কোন ধরনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষন ও কোন গুরুর বা ওস্তাদের সান্নিধ্য ছাড়াই।প্রথমে মূর্তি বানান ওই এলাকার স্বামীজি ক্লাবের এবং পরে মহিলা কমিটির দূর্গা পূজাতেও মূর্তি বানান।অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সেই মূর্তি আবার ২০২১ সালে প্রথম স্থান ও অধিকার করেন । গত ১৬ বছর ধরে মূর্তি তৈরীর কাজ করেছেন বর্তমানে খোয়াই জেলার কল্যাণপুর ব্লকের অন্তর্গত বাগানবাজার এলাকার বাসিন্দা শৈলেন তাঁতী। মূলত পেশায় তিনি একজন দিন মজুর রিক্সা চালক। যখন যেই কাজ পান সেই কাজ করে সংসারের ভরণপোষণ করেন। এই ধরনের দিনমজুরি কাজ করে উনার একমাত্র ছেলে কে কলেজে লেখাপড়া করাছেন। এই সমস্ত বিষয়গুলি বলার পিছনে মূলত কারণ শৈলেন তাঁতি বাগানবাজার এলাকার এক মূর্তির কারিগর এর কাছে মূর্তি বানানোর একটি কথাকে নিয়ে অপমানিত হয়ে মূর্তি তৈরীর কাজ শুরু করেছিলেন দীর্ঘ বছর মূর্তি তৈরি করলেও খোয়াইবাসীকে তাক লাগিয়ে ছিলেন ২০২০ /২১ সালে খোয়াই জেলার অন্তর্গত কল্যানপুর এলাকার বাঘা যতীন ক্লাব এর মূর্তি তৈরি করে, খোয়াই জেলার মধ্যে মা দুর্গার মূর্তি বানিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন। যদিও চলতি বছর খোয়াই লালটিলা স্কুল এর মাঠে উত্তর রাম চন্দ্র ঘাট সার্বজনীন দূর্গা উৎসব উদযাপন করা হয়েছে সেখানে মূর্তি তৈরি করার কাজ পেয়েছে শৈলেন তাঁতী সেই সুবাদে ক্লাবের কমকর্তা রূপক ঘোষ ও চিন্তন দেব কে অভিনন্দন উনাকে কাজ দেওয়ার জন্য এছাড়া তিনি এও জানান ১৫ লক্ষ টাকার বাজেটে এত বড় পূজাতে শৈলেন তাঁতিকে পুজোর মূর্তি তৈরি করার কাজ দেওয়াতে। এছাড়া একজন জনজাতি হিসেবে প্রতিমা তৈরি করে এই বিষয়টিকে নিয়ে অনেক কথাও শুনতে হয়েছে শৈলেন তাঁতিকে শুধু তাই না বাগানবাজার এলাকার লোক উনার বিষয়ে অনেক কুৎসাও রটিয়েছে মূর্তি বানানোর কাজকে নিয়ে। এবং শেষে সব কিছুকে ছাপিয়ে তিনি উত্তর রামচন্দ্র ঘাটের মূর্তি বানানোর অর্ডার নিয়ে বিগত এক মাস ধরে দিন-রাত খেটে চলেছে ।আর তাতে করে শৈলেন তাঁতীর পরিশ্রমের ফল আস্তে আস্তে ফুটে উঠছে উনার হাত দিয়ে যা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবে না কেউ যে একজন পশ্চিমা আদিবাসী হয়ে কোন প্রশিক্ষণ ছাড়া এবং কোন শিক্ষা গুরুর কৃপা ও সান্নিধ্য ছাড়াই যে একটা মানুষ সূক্ষ্ম ও সুচারু ভাবে মূর্তি বানানোর কাজে এত নিপুন হতে পারে।তাইতো তিনি মূর্তি বানানোর জন্য পারিশ্রমিক মূল্য হিসেবে এক লক্ষ 60 হাজার টাকা নিচ্ছেনআর নেওয়ার পেছনে কারণ রয়েছে। খোয়াইয়ের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন জনগণের ধারণা দুর্গা প্রতিমা তৈরি প্রাক প্রাথমিক অবস্থাতে পরিলক্ষিত হয় যে আশা করা যাচ্ছে ভালো একটা অবস্থা তৈরি হতে পারে মূর্তিকে কেন্দ্র করে। শৈলেন তাতির মত প্রতিভাবান শিল্পীরা রাজ্যের বিভিন্ন আনাচে কানাচে অবেহেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তাদেরকে তুলে আনা দরকার। শৈলেন তাতির মত প্রতিভান শিল্পীদেরকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব আমাদের সমাজ গ্রহণ করলে, শৈলেন তাঁতীরা রিস্কা চালিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হতো না। এসব কারণে অনেক প্রতিভাবান শিল্পিরা একটু যত্ন ও দেখ ভালের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কালের গ্রাসে যা কখনোই হতে দেওয়া ঠিক না।