অকালবোধন হিসেবে বাসন্তী মায়ের পূজা হয়ে থাকে এই চৈত্র মাসে তাই ভক্তগণ বাসন্তী মায়ের আরাধনা বসন্তকালে হয়ে থাকে। এ বছর বাসন্তী মায়ের পূজা শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ শে মার্চ থেকে। বাসন্তী মায়ের পূজাকে কেন্দ্র করে খোয়াইয়ের লাল ছড়া কুমোর পাড়া গুলিতে প্রতিমা তরীর কাজে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা। মৃত শিল্পীদের প্রতিমা তরীর কাজ প্রায় শেষের পথে মৃৎশিল্পীদের প্রতিমা তরীর শেষ করার পর শেষ তুলি টান দিতে ব্যস্ত সবাই। এই বিষয়ে প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলললে প্রতিমা শিল্পীরা জানান বর্তমানে অকালবোধন হিসেবে বাসন্তী মায়ের পূজা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আগেকার মতন বাসন্তী মায়ের প্রতিমা তৈরী করার অর্ডার তেমন আসে না আজকাল হাতে গুনা দু একটি প্রতিমা ছাড়া। যদিও খোয়াই মহকুমার বিভিন্ন এলাকাতে কিছু কিছু বোনদি পরিবার এখনো এই প্রথা হিসেবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে দেবী বাসন্তী মায়ের পূজা করে আসছেন। তাছাড়া কিছু কিছু এলাকায় এখনো বারওয়ারি পূজা করে থাকেন তার মধ্যে খোয়াইয়ের উল্লেখযোগ্য পূজা গুলি হল খোয়াই শিঙ্গি ছড়া আচার্জী পাড়ার পূজা, খোয়াই বনকর এলাকার ভোলা গিরি আশ্রমের বাসন্তী পূজাটি খোয়াই শহরের মধ্যে জাঁকজমক ভাবে হয়ে আসছে বিগত ২ দশক ধরে। তারমধ্যে খোয়াই ভোলাগিরি আশ্রমের পুজোতে অষ্টমীর দিন কুমারী পূজাও করা হয় প্রতিবছর। এই দিনটির জন্য খোয়াইর ধর্মপ্রাণ মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন প্রচুর পরিমাণ ধর্মপ্রাণ মানুষ সেদিন ভোলাগিরি আশ্রমে সমবেত হন কুমারী মায়ের পূজা দেখতে এবং কুমারী মাকে প্রণাম করতে। এই বাসন্তী মায়ের পূজা কে কেন্দ্র করে মৃৎশিল্পীদের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তারা বলবার চেষ্টা করেন দশরথ পুত্র রাজা রাম চন্দ্র রাবণকে বধ করার জন্য এই চৈত্র মাসে বাসন্তী মায়ের আরাধনা করেছিলেন তাই এই পূজা কে অকাল বোধন হিসাবে বাসন্তী পূজার নামকরণ হয়ে ছিল আর আশ্বিন মাসে যে পূজা করা হয় সেটা সেটা নাকি রাক্ষস রাজ রাবণ করেছিলেন। যদিও বর্তমান সময়ে আশ্বিন মাসেই বেশিরভাগ দুর্গাদেবীর পূজা করা হয় বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব হিসেবে যদিও এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পণ্ডিতদের বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তাছাড়া এই পূজা চলাকালী অষ্টমীর দিনে অষ্টমী স্নান মেলা অনুষ্ঠিত হয় খোয়াই সোনাতলা এলাকার খোয়াই নদীর পাড়ে পাশাপাশি সেখানে একটি মেলাও হয়ে থাকে। সেই অষ্টমি স্নানে বেশ জাঁকজমক ভাবে পুনার্থীরা এই অষ্টমীর মহলগ্নে খোয়াই নদীর জলে স্নান করে পূর্ণ অর্জন করেন।এছাড়া বিভিন্ন দোকানিরা তাদের প্রসারি সাজিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করেন। একজন অভিজ্ঞ পুরোহিতের সঙ্গে এই বাসন্তী পূজার বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে পুরোহিত মশাই বলেন বসন্তকালে দেবীর যে পূজা করা হয় সেটা শ্রী রামচন্দ্র করেছিল আর শরৎকালে যে পূজাটা হয় সেটা রাবণ করেছিল যদিও তিনি বলবার চেষ্টা করেন এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আছে তারপরও মায়ের পূজা সেটা বসন্তকালই হোক আর শরৎকালে হোক খোয়াইয়ের ধর্মপ্রাণ মানুষ এই বাসন্তী মায়ের পূজা কে কেন্দ্র করে বিশেষ করে বিভিন্ন পূজা কমিটিগুলো এবং বারোয়ারি পূজা গুলি নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে পূজা করা হয়ে খাকে। তবে দেখা গেছে কলিযুগের কালের প্রভাবে এই বসন্তকালে বাসন্তী মায়ের পুজো দিন দিন লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু মন্দিরের কমিটিরা এই পুজোকে ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বারওয়ারি পূজা গুলি আজ প্রায় বন্ধের পথে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যে সব প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন মন্দিরের কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তারা বাসন্তী মায়ের আরাধনায় ব্রতি হয়েছেন তাদের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন খোয়াইয়ের আপামোর ভক্তবৃন্দরা।