আগর রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বনজ অর্থকরী সম্পদ । রাজ্যে আগর বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কদমতলায় আগর ট্রেড সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে বন দপ্তর । আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক কে এস শেঠি একথা জানান । সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি আরও জানান , রাজ্যে বন ও বণ্যপ্রাণীর সুরক্ষায় বন দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করছে । এরমধ্যে রয়েছে সিপাহীজলা চিড়িয়াখানার সংস্কার , পতিছড়িতে বাইসন কনজারভেশন রিজার্ভ স্থাপন , বকাফা , পেঁচারথল এবং সিপাহীজলাতে ৩ টি অ্যানিমেল রেসকিউ সেন্টার স্থাপন , মুঙ্গিয়াকামীতে এলিফেন্ট ক্যাম্প স্থাপন , রোয়া মুঙ্গিয়াকামী এবং খোয়াইয়ে ন্যাচার ইন্টারপ্রেটেশন সেন্টার স্থাপন , হাতিপাড়াস্থিত অক্সিজেন পার্কে আর্ট অর্কেডেরিয়াম স্থাপন । তিনি জানান , নগর এলাকার সবুজায়ন ও জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় বন দপ্তর নগর বন যোজনা কর্মসূচি রূপায়ণ করছে । এই প্রকল্পে আগরতলা পুরনিগম এলাকায় এবং শালবাগান এলাকায় গাছের চারা লাগানো হয়েছে । এছাড়াও এই প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ধর্মনগর , কুমারঘাট , তেলিয়ামুড়া এবং উদয়পুরে ৪ টি নগর বনের উদ্বোধন করা হয়েছে । প্রতিটি নগর বনের জন্য ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে । সাংবাদিক সম্মেলনে বন দপ্তরের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন , রাজ্যের বনজ সম্পদকে কেন্দ্র করে রাজস্ব আয়ের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে । বনদপ্তর সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে । তিনি বলেন , রাজ্যে মোট বনাঞ্চল রয়েছে ৭৭২১.৫২ বর্গকিমি যা রাজ্যের মোট ভৌগোলিক আয়তনের ৭৩.৬৪ শতাংশ । রাজ্যে বর্তমানে ৮ টি ফরেস্ট ডিস্ট্রিক্ট , ১৭ টি ফরেস্ট সাব ডিভিশন , ৪ টি অভয়ারণ্য , ৫৯ টি ফরেস্ট রেঞ্জ এবং ২৮৩ টি ফরেস্ট বিটস রয়েছে । প্রধান মুখ্য বনসংরক্ষক জানান , রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন ক্যাম্পা , এনএপি , রেগা ইত্যাদি প্রকল্পের অর্থানুকূল্যে প্রতিবছরই বন দপ্তর বনায়নের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে । তিনি তথ্য সহকারে জানান , ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাজ্যে ৮৮৮৯.৭১ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছিল । ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জুলাই মাস পর্যন্ত ৯৫৬৩.৫ হেক্টর বনায়ন করা হয়েছে । সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান , নার্সারী কর্মসূচিতে দপ্তর ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৫৩ লক্ষের উপর চারা উৎপাদন করেছিল এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জুলাই মাস পর্যন্ত সাড়ে ৬ লক্ষ চারা উৎপাদন করা হয়েছে । এছাড়া দপ্তর ইচ্ছুক সুবিধাভোগীদের মাধ্যমে নার্সারি তৈরি করে চারা উৎপাদনের কর্মসূচি রূপায়ণ করছে । ২০২১-২২ অর্থবর্ষে দপ্তর ২২৫ জন সুবিধাভোগীর মাধ্যমে মোট ৬ লক্ষ ৩৪ হাজার চারা উৎপাদন করেছে । এছাড়াও ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ২ লক্ষ চারা উৎপাদন করা হয়েছে । সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান , রাজ্যের জনগণের জলের প্রয়োজন মেটাতে , সেচ , ভূগর্ভস্থ জলের পুনরুদ্ধার , ভূমিক্ষয় রোধ এবং মাছ চাষের সহায়তার লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে চেকড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে । ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাজ্যে ৪২১ টি চেকড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে । ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আরও ৬২৭ টি চেকড্যাম নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে দপ্তর । প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান , রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বৃক্ষরোপণের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে স্কুল নার্সারি যোজনায় নির্বাচিত প্রতিটি বিদ্যালয়ে ১,০০০ টি করে চারা রোপণের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়কে ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে । প্রধান মুখ্য বন সংরক্ষক জানান , মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় ২০২১-২২ অর্থবর্ষে যোগ্য সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৯ লক্ষ ২৮ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে । এছাড়াও এই প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের জুলাই মাস পর্যন্ত সুবিধাভোগীদের মধ্যে ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে । তিনি জানান , বন দপ্তরের কর্মী , সাধারণ জনগণ , অন্যান্য দপ্তরের কর্মী , জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য , বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে গণ বৃক্ষরোপণ অভিযানের অঙ্গ হিসেবে মাত্র ২ মিনিটে ৪৮ হাজার ৫৭৬ টি চারা রোপণ করা হয়েছিল । ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের ২৮ জুন , ২০২২ গণ বৃক্ষরোপণ অভিযানের মাধ্যমে ৫ মিনিটে ১ লক্ষ ২ হাজার ২৩০ টি চারা রোপণ করা হয়েছে । তিনি জানান , আজাদি কা অমৃত মহোৎসব পালনের অঙ্গ হিসেবে বন দপ্তর র্যালি , ফটো প্রদর্শনী এবং বিভিন্ন ওয়াইল্ড লাইফ ফেস্টিভেলের আয়োজন করেছে । সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও সিসিএফ কে শশীকুমার উপস্থিত ছিলেন ।



