প্রবীণ নাগরিকদের অভিজ্ঞতাকে সমাজের ভালোর জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন বললেন মুখ্যমন্ত্রী প্রবীণ নাগরিকরা হলেন সমাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি । তাদেরকে অবহেলা না করে তাদের অভিজ্ঞতাকে সমাজের ভালোর জন্য কাজে লাগানো প্রয়োজন । তবেই সমাজ ব্যবস্থা আরও সুন্দর ও সুদৃঢ় হতে পারবে । নরসিংগড়স্থিত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রমের নতুন ভবনের দ্বারোদঘাটন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন । সমাজের অন্তিম ব্যক্তি ও প্রবীণদের অধিকার সুনিশ্চিতিকরণে প্রধান্যের ভিত্তিতে কাজ করছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার । প্রবীণ নাগরিকরা যেন , কোনো ভাবেই অবহেলিত না হন , সেই লক্ষ্যে গুচ্ছ পরিকল্পনা রূপায়িত হচ্ছে । এই লক্ষ্যে আরও গতি সঞ্চার করতে ভারত সরকারের আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রকের বিল্ডিং মেটেরিয়ালস এন্ড টেকনোলজি প্রমোসন কাউন্সিলের মাধ্যমে ডেমোনেস্ট্রেটিভ হাউজিং প্রজেক্টের অন্তর্গত নির্মিত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রমের নতুন ভবনের প্রকল্পের অন্তর্গত উদ্ভাবনীমূলক ও সবুজ প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব । মুখ্যমন্ত্রীর দিশানির্দেশনায় দ্রুততার সাথে রাজ্যে উদ্ভাবনি মূলক ও সবুজ প্রযুক্তি সম্পন্ন বৃদ্ধ আবাসনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় । প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করলেন মুখ্যমন্ত্রী । একটা সময়ে বৃদ্ধ আবাস মানেই , ভিন্ন দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হতো । কিন্তু বর্তমানে কোনোরকমে দিন যাপনের নূন্যতম ব্যবস্থা নয় , বরং এই আবাসনটি অত্যাধুনিক উদ্ভাবনী মূলক ও সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নত পরিষেবা সম্পন্ন । নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়ে , এক রাশ হাঁসি মুখে মুখ্যমন্ত্রীকে স্নেহের আলিঙ্গনে জড়ালেন আবাসিকরা । একে একে মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে অকপটে তুলে ধরেন মনের কথা । মুখ্যমন্ত্রীও তাদের কথা শুনলেন । জানালেন , এই উন্নতমানের পরিষেবায় তারা খুশি । এরজন্য প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান । এদিন আবাসনের প্রবীণদের সাথে মাধ্যাহ্ন আহারও গ্রহণ করেন । মুখ্যমন্ত্রী । অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন , প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সমাজের অন্তিম ব্যক্তি ও প্রবীণ নাগরিকদের নিকট সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পৌছানোর লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছে । প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগের ফলেই লাইট হাউজ প্রকল্পে রাজ্যে গরিবদের জন্য এক হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , ধনী – গরিব ও শ্রমিক মালিকদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে কোনও রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । দেখা গেছে বিগত দিনে রাজ্যে ধনী – গরিব ও শ্রমিক – মালিকদের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করা হয়েছিল । এই পশ্চাদমুখী মানসিকতার কারণেই রাজ্য অনেক পিছিয়ে পড়েছিল । বর্তমান রাজ্য সরকার এই ভেদাভেদ দূর করে রাজ্যকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । ফলে রাজ্যের কৃষকদের গড় মাথাপিছু আয় যেমন বেড়েছে , তেমনি প্রধামন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রকৃত সুবিধাভোগীরাও ঘর পাচ্ছেন । শুধু তাই নয় রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির সুফল এখন প্রকৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে যাচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , উত্তর – পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর একটা বিশেষ আন্তরিক মনোভাব রয়েছে । প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক উদ্যোগের ফলেই ত্রিপুরায় প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নয়নের গতি পেয়েছে । রাজ্যের উৎপাদিত কাঁঠাল , আনারস , এলাচি লেবু বর্তমানে দেশের গন্ডি পার হয়ে জার্মানী , দুবাই’র মতো দেশে পৌঁছে যাচ্ছে । তাতে আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন রাজ্যের কৃষকগণ । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , মহাত্মাগান্ধী মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রমের নতুন ভবন নির্মাণে আধুনিক গ্রীণ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে যা ভূমিকম্প নিরোধক । রাজ্যে এই প্রথম ভবন নির্মানে এধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে । তিনি বলেন , বর্তমান রাজ্য সরকার নিয়ম , নীতি , নিষ্ঠার মনোভাব নিয়ে কাজ করছে । রাজ্য সরকার গরিবদের যেমন ঘর প্রদান করছে , পাশাপাশি অন্ত্যোদয় পরিবারগুলিকে অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার জন্যও দুই হাজার টাকার সহায়তা প্রদান করছে । অনুষ্ঠানে সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন , প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে কাজ করা রাজ্য সরকারের অন্যতম দায়িত্ব । রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই গরিব ও প্রবীন নাগরিকরা আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ নিতে পারছেন । দূর্গাপূজার আগেই বৃদ্ধভাতা সহ অন্যান্য সামাজিক ভাতা দুই হাজার টাকা করার উদ্যোগ নিয়েছে দপ্তর । এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়তে সরকারের পাশে সবাইকে থাকার আহ্বান জানান সমাজ কল্যাণমন্ত্রী । স্বাগত ভাষনে সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং বলেন , মহাত্মগান্ধী মেমোরিয়াল বৃদ্ধাশ্রমের নতুন ভবনটি নির্মানে আধুনিক গ্রীণ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে । ফলে কম সময়ের মধ্যেই ভবনটির নির্মান কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে । ১০৩৮.৭৪ বর্গমিটার এলাকা বিশিষ্ট এই ভবনটি নির্মানে ৬ কোটি ৮২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে । সচিব শ্রী সিং আরোও বলেন , বর্তমানে রাজ্যে ৪ টি বৃদ্ধাশ্রম রয়েছে । এরমধ্যে ১ টি সরকার পরিচালিত এবং অবশিষ্ট ৩ টি এন জি ও দ্বারা পরিচালিত । রাজ্যের খোয়াই ও অমরপুরে আরও ২ টি নতুন বৃদ্ধাশ্রম স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন । অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক কৃষ্ণধন দাস , নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল ।



