ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে গ্রামীণ স্তর থেকে গ্রামীণ মানুষের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রের সার্বিক উন্নয়ন। আজ সোনারতরী স্টেট গেস্ট হাউসে অনুষ্ঠিত পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সাধারণ সভা ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরভিত্তিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচির বাস্তবায়নের ও পরিকল্পনার পর্যালোচনা বৈঠকে পঞ্চায়েতমন্ত্রী কিশোর বর্মন একথা বলেন। তিনি জানান, নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমাদের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। ভারত সরকার বর্তমানে স্মার্ট পঞ্চায়েত গঠনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের রাজ্যেও এই স্মার্ট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য প্রথম ধাপে ১০০টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে স্মার্ট পঞ্চায়েতে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। পশ্চিম জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে এই স্মার্ট পঞ্চায়েতের আওতাভুক্ত করে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য সকলেরই সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি সবাইকেই স্মার্ট গ্রাম তৈরির কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আত্মনির্ভর ভারত নির্মাণ করতে গেলে আমাদের প্রত্যেকটি রাজ্যকে আত্মনির্ভর হতে হবে। আমাদের রাজ্যকে আত্মনির্ভর করতে গেলে রাজ্যের প্রতিটি গ্রামের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে আত্মনির্ভর করতে হবে। এতে একটি গ্রাম আত্মনির্ভর হবে। একটি জেলা ও একটি রাজ্য আত্মনির্ভর হবে। তাই আমাদের সেই লক্ষ্যেই গ্রামীণ উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলির দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা যাতে সহজে সঠিক সময়ে পৌঁছে সেদিকেও তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক মিনারাণী সরকার। সভায় সভাপতিত্ব করেন জিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল। এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যানগণ, বি.এ.সি. চেয়ারম্যানগণ, জিলা পরিষদের সদস্য সদস্যাগণ, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা ডা. বিশাল কুমার সহ জেলার বিভিন্ন ব্লকের বিডিওগণ এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের আধিকারিকগণ।
সভায় কৃষি দপ্তরের আধিকারিক জানান, চলতি বছরে পতিত জমি উদ্ধারে কৃষি দপ্তর বিশেষ নজর দিয়েছে এবং সেইসব জমিতে বিভিন্ন অর্থকরী ফসল চাষের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ কৃষকদের নিয়ে পতিত জমিকে কৃষিযোগ্য করার বিষয়ে সচেতনতামূলক সভাও করা হচ্ছে। শুখা মরশুমে জমিতে পর্যাপ্ত সেচের জলের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। হর্টিকালচার দপ্তরের প্রতিনিধি সভায় জানান, দপ্তর থেকে পশ্চিম জেলার বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে আদা, হলুদ, গোলমরিচ, লবঙ্গ, তেজপাতা, এলাচ, জিরা, ধনিয়া ইত্যাদি বিভিন্ন মশলা জাতীয় দ্রব্য সামগ্রী চাষের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মশলা বোর্ড ও বেসরকারি ফুড কোম্পানিগুলির সাথে যোগাযোগ করে মশলা জাতীয় দ্রব্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার চিন্তা ভাবনাও চলছে বলে হর্টিকালচার দপ্তরের প্রতিনিধি সভায় জানান। এছাড়া তিনি জানান, ফুলচাষের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষকে স্বনির্ভর করার কাজ চলছে। জাতীয় ভোজ্য তেল উৎপাদন মিশনে অয়েল পাম চাষের কাজও চলছে। এখন পর্যন্ত পশ্চিম জেলায় ৫৭৮.২৮ হেক্টর জমিতে অয়েল পামের চারা রোপণ করা হয়েছে। সভায় বিদ্যুৎ, প্রাণীসম্পদ বিকাশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল ও স্বাস্থ্য বিধান, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর, শিল্প, খাদ্য, গ্রামোন্নয়ন, মৎস্য, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা, তথ্য ও সংস্কৃতি ইত্যাদি দপ্তরের প্রতিনিধিগণও নিজ নিজ দপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে পর্যালোচনা করেন।



