Sunday, October 20, 2024
বাড়িখবররাজ্য৪০ তম আগরতলা বইমেলার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন

৪০ তম আগরতলা বইমেলার বর্ণাঢ্য উদ্বোধন

হিংসা , অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বই পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে বললেন বিধানসভার অধ্যক্ষ,যুদ্ধ , হিংসা , অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রাস্তা বইয়ের মাধ্যমে তৈরি হয়ে থাকে । বইয়ের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটা মায়ের মতো । মায়ের ঋণ যেমন শোধ করা যায় না , তেমনি বইয়ের ঋণও শোধ করা যায় না । বিকালে হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে ৪০ তম আগরতলা বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী একথা বলেন । তিনি বলেন , আমরা যেমন দুর্গাপূজার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি তেমনি বইপিপাসুরা বইমেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন । নতুন বইয়ের গন্ধ এক অন্য অনুভূতি জাগিয়ে তোলে । আধুনিকতার ছোঁয়া সর্বত্র লাগলেও এই গন্ধ তার নিজস্বতা হারায়নি । তিনি বলেন , বইমেলায় কোনও ভেদাভেদ থাকে না । মুক্ত আকাশের নীচে সবাই ঘুরে বেড়ান , জ্ঞান অর্জন করেন । বইয়ের বয়স যাই হোক এই বই আমাদের হাজার বছর আগে পৌঁছে দেয় । এরিস্টটলের বই আজও আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক । তিনি বলেন , বইমেলায় যারাই আসবেন তারা খুঁজে নেবেন জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ । এই জ্ঞানের আলোকে অন্যদেরও আলোকিত করবেন । তবেই আসবে বইমেলার প্রকৃত স্বার্থকতা । তিনি বলেন , রাজ্যের বর্তমান সরকার সবাইকে সাথে নিয়ে চলতে চাইছে । বইমেলার উদ্বোধনী পর্বেও বিষয়টি ফুটে উঠেছে । অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এমপি কে এম খালিদ বলেন , বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আবেগের , ভালোবাসার , সৌভ্রাতৃত্বের । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরাবাসীর অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন , মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল তার ঋণ কোনোদিন শোধ করা সম্ভব নয় । ত্রিপুরার জনসংখ্যার চেয়ে বেশি শরণার্থীকে সে সময় এ রাজ্যের মানুষ আশ্রয় দিয়েছিল । তিনি বলেন , উভয় দেশের সংস্কৃতির মধ্যে এক অসাধারণ মিল রয়েছে । এই সংস্কৃতি , ঐতিহ্যের ধারাকে ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে আবদ্ধ রাখা যায় কিন্তু মৈত্রীর মেলবন্ধন থেকে দূরে রাখা যায় না । ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তার উল্লেখ করে তিনি বলেন , ভারতের বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে । এবিষয়ে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের ইতিবাচক ভূমিকার কথাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন । ৪০ তম আগরতলা বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী । তিনি ৪০ তম আগরতলা বইমেলার সাফল্য কামনা করে এই মেলার মাধ্যমে জ্ঞানের পরিধিকে আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান । তিনি বলেন , শুধুমাত্র জ্ঞানের পরিধি বিস্তার করা নিয়ে কাজ করে না তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর । মানুষের মধ্যে জ্ঞান আহরণের সচেতনতাও তৈরি করে । এতেই আমার ত্রিপুরা আমার গর্ব – র স্বার্থকতা আসবে । আগামীদিনে এই বইমেলাকে ঐতিহাসিক রূপ দেওয়া সম্ভব হবে । -২ – এর পাতায় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আরও বলেন , রাজ্যভিত্তিক বইমেলা ছাড়াও জেলাভিত্তিক বইমেলার আয়োজন করছে রাজ্য সরকার । ইতিমধ্যেই ঊনকোটি জেলা , উত্তর ত্রিপুরা জেলা , ধলাই জেলা ও খোয়াই জেলাতে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে । রাজ্যভিত্তিক বইমেলার পর পরই দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা , গোমতী জেলা ও সিপাহীজলা জেলায় বইমেলার আয়োজন করা হবে । জ্ঞানের পরিধি বিস্তার করার পাশাপাশি আগামীতে ত্রিপুরাকে আরও উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান রাখেন তিনি । অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া রাজ্যকে আরও স্বনির্ভর এবং সমৃদ্ধশালী করার আহ্বান রাখেন । এর পাশাপাশি অনুষ্ঠানে সমবায় মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল আগরতলা বইমেলার সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন । আলোচনায় অংশ নিয়ে আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী কে এম খালিদকে আগরতলা শহরবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন । তিনি বলেন , বইমেলা শুধু ক্রেতা বিক্রেতার মিলন নয় , এটা একটা ঐক্যের বন্ধন । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব পি কে গোয়েল বইমেলা আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন । তিনি বলেন , করোনা অতিমারীর মধ্যেও খুব কম সময়ের মধ্যে এই মেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে । শুধু আগরতলা বইমেলাই নয় , রাজ্যের আরও বিভিন্ন জেলায় সরকারিভাবে বইমেলার আয়োজন করা হচ্ছে । এদিন অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের বইমেলার স্মরণিকা ২০২২ এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক সাময়িকী ‘ গোমতী ২০২২ ’ – এর আবরণ উন্মোচন করেন উদ্বোধক , প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিগণ । উদ্বোধনী পর্বে অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক রেবতী মোহন দাস , বিধায়ক সুধাংশু দাস , তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস , আগরতলাস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন কার্যালয়ের ডেপুটি হাইকমিশনার আরিফ মহম্মদ । উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে এবারের বইমেলার থিম সঙের গীতিকার ককবরকে বিকাশ রায় দেববর্মা এবং বাংলায় মনোজ কুমার ঘোষ এবং বাংলা থিম সঙের সুরকার গুরু দীপন আচার্য সহ অন্যান্য শিল্পীদের সংবর্ধিত করেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী , বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী সহ অন্যান্য অতিথিগণ । উদ্বোধনী পর্ব শেষে অতিথিগণ বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন সহ মেলার অন্যান্য কিছু স্টল ঘুরে দেখেন । এবারের বইমেলায় কলকাতা , দিল্লি , বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতাগণ অংশগ্রহণ করেছেন । বইমেলায় এবার স্টলের সংখ্যা ১৬২ টি । বইমেলাকে কেন্দ্র করে কবি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২৬ থেকে ২৭ মার্চ এবং ১ থেকে ৩ এপ্রিল । উল্লেখ্য , হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত বইমেলায় আসা যাওয়ার সুবিধার্থে আগরতলার রাধানগর , চন্দ্রপুর ও রবীন্দ্র ভবনের সামনে থেকে প্রতিদিন সরকারিভাবে বিনামূল্যে ১০ টি বাস পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে ।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

one × one =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য