সঙ্গীত শিল্পী, সুরকার, গীতিকার শচীন দেববর্মণ এখনও আমাদের হৃদয় জুড়ে রয়েছেন। শচীন দেববর্মণের জীবনকে পাথেয় করে রাজ্যের নতুন সঙ্গীত প্রতিভার বিকাশ ঘটুক। আজ সন্ধ্যায় আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণ জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শচীন দেববর্মণ রাজপাট ছেড়ে সাধারণ মানুষ হিসেবে সবার সঙ্গে মিশতে পারতেন। তিনি আমাদের দেশ এবং বিশ্ববাসীর কাছে ত্রিপুরাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন যে এখানেও সঙ্গীত চর্চা হয়।
উল্লেখ্য, এবছর মরণোত্তর শচীন দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে প্রয়াত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী রতন কুমার সেনগুপ্তকে। অনুষ্ঠানে প্রয়াত রতন কুমার সেনগুপ্তের সহধর্মিনী শিপ্রা সিংহ সেনগুপ্তের হাতে মরণোত্তর শচীন দেববর্মণ স্মৃতি পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আরও বলেন, সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনের কথা বলা যায়। স্বাধীনতা সংগ্রামে সঙ্গীত আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদেরও উদ্বুদ্ধ করেছিল। শচীন দেববর্মণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের আরও ভালোভাবে জানতে হবে কত পরিশ্রম করে শচীন দেববর্মণ ভারতবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের এই জায়গাটি ছিল শচীন দেববর্মণের পরিবারের। তিনি এই জায়গাটি দান করে গেছেন।
অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার বলেন, শচীন দেববর্মণ নামটি আমাদের কাছে গর্বের, অহংকারের। তিনি সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে ত্রিপুরাকে সারা বিশ্বে পরিচিতি দিয়েছেন। তাঁর গান, তাঁর সুর এখনও সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। শচীন দেববর্মণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, শচীন দেববর্মণের গান, সুর, সঙ্গীত পরিচালনা এখনও আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভাশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রায় ১০০ বাংলা ও হিন্দি সিনেমার গানে সুর দিয়েছেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, শচীন দেববর্মণ ছিলেন সঙ্গীত সাধক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিগণ শচীন দেববর্মণের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উপস্থাপনায় শচীন দেববর্মণের জীবনী বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর আয়োজিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রাজ্যের অন্যান্য মহকুমাগুলিতেও আজ তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণের জন্মজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে অতিথিগণ সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তাছাড়াও অনুষ্ঠানগুলিতে অতিথিগণ কুমার শচীন দেববর্মণের সঙ্গীত জীবন নিয়ে আলোচনা করেন। তেলিয়ামুড়া মহকুমার চিত্রাঙ্গদা কলাকেন্দ্রে সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তেলিয়ামুড়া পুরপরিষদের চেয়ারপার্সন রূপক সরকার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহকুমাভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নীহারেন্দু বিকাশ দত্ত। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরিষ্ঠ তথ্য আধিকারিক মিঠন দত্ত। মহকুমায় শচীন দেববর্মণের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়াও অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতে শচীন দেববর্মণের জীবনী নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
জিরানীয়া মহকুমায় সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খামারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মধ্য দেবেন্দ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রাণু দাস। শচীন দেববর্মণের জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমীর দাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বরিষ্ঠ তথ্য আধিকারিক গৌতম দাস। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা শচীন দেববর্মণের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে।
মোহনপুর মহকুমায় মোহনপুর পুরপরিষদের সাংস্কৃতিক হলে সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণের জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুরপরিষদের চেয়ারপার্সন অনিতা দেবনাথ, ভাইস চেয়ারপার্সন শংকর দেব, মহকুমা শাসক সুভাষ দত্ত, পুরপরিষদের ডেপুটি সিইও ধীরপদ দেবনাথ, বরিষ্ঠ তথ্য আধিকারিক অশোক দেববর্মা প্রমুখ।
সোনামুড়া মহকুমায় সোনামুড়া টাউনহলে সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন সারদা চক্রবর্তী, নগর পঞ্চায়তের কাউন্সিলারগণ, বরিষ্ঠ তথা আধিকারিক তুহিন আইচ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মহকুমার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীগণ সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
করবুক মহকুমার পাঞ্জিহাম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সুর সম্রাট কুমার শচীন দেববর্মণের জন্মন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন করবুক বিএসির চেয়ারম্যান প্রণব কুমার ত্রিপুরা। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠান শেষে বসে আঁকো প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।