শনিবার আমরা বাঙালির পক্ষ থেকে এক সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়, এদিনের বৈঠকে মূলত বাঙালীদের ভাষা, কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করতে, বেকারদের সার্বিক কর্মসংস্থানের দাবীতে ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে আগামী ৯, ১০ই সেপ্টেম্বর রাজ্য কার্যালয় আগরতলায় মিছিল, গণঅবস্থানের যে কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত জানান দেন। এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে আমরা বাঙালি দলের সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল সংবাদমাধ্যমকে জানান স্বাধীনতার ৭৭ বৎসর অতিক্রান্ত। ত্রিপুরা ভারতভুক্তিরও ৭৫ বছর সমাপ্ত হওয়ার পথে। এখন সময় এসেছে স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও ত্রিপুরা ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে অর্ন্তভুক্তির লাভালাভ বিচারের। এই প্রশ্নে দেখায় যায়, ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে গিয়ে যে বাঙালী জাতি সবচেয়ে বেশী রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে অবিভক্ত ভারতের ভূমিপুত্র সেই বাঙালীজাতি স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে সবচেয়ে বেশী বঞ্চিত, শোষিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত। স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে জাতি দাঙ্গা ও দেশ ভাগজনিত কারণে বাঙালীরা যেমন ধন-মান, জীবন সম্পত্তি হারা হয়েছিল তেমনি দেশভাগের প্রতিশ্রুতি অর্থাৎ যখনি পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘু বাঙালী হিন্দুরা সীমানা অতিক্রম করবে তাদের স্বাগত জানানো হবে- তা জাতীয় নেতৃবৃন্দ রক্ষা করেনি। পরবর্তীকালে দেখা যায়, দেশভাগের বলি ৪৭ লক্ষ পঞ্জাবী উদ্বাস্তুদের জন্যে ভারত সরকার ৪৯৭ কোটি টাকা খরচ করে পঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লীর লাগোয়া অঞ্চলে পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করলেও ২ কোটি উদ্বাস্তু বাঙালীদের জন্যে খরচ করা হয় মাত্র ৯০ কোটি টাকা। আর পুনর্বাসনের নামে নির্বাসন দেওয়া হয় দণ্ডকারণ্য, ওড়িষ্যার কালাহান্ডি, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ও মরিচঝাঁপির মতো মনুষ্যবর্জিত গভীর জঙ্গল, মরুভূমিতে যেখানে খিদের জ্বালায় অথবা বনের হিংস্র জন্তু বেরিয়ে জানোয়ারের আক্রমনের মুখে পড়ে অনেকেরই প্রাণ বিসর্জন হয়। দেশভাগ তথা স্বাধীনতার বলি এখনো লক্ষ লক্ষ বাঙালী অসহায়ভাবে বিভিন্ন শিবিরে, দেশের বিভিন্ন শহরে রেললাইন বা ফুটপাথের ধারে মনুষ্যেত্তর জীবন যাপন করে চলেছে। উদ্বাস্তু বাঙালীরা অসম, ত্রিপুরা, উত্তরপূর্বাঞ্চল সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাঁচার তাগিদে যখন আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে তখন ত্রিপুরার মতো রাজ্যে জমিফেরৎ, জেলা পরিষদ আইন, অসমে বিদেশী বিতাড়নচুক্তি, ইনারলাইন পারমিট ইত্যাদি করে বাঙালীর ভূমির অধিকার থেকে সাংবিধানিক সব অধিকার হরণ করে ক্রমে বাঁচার শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান । তার পাশাপাশি সম্ভবতঃ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের পরই এনআরসি প্রয়োগ হবে।২০১৮-১৯ সালে অসমের বুকে এনআরসি প্রয়োগের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল যাতে প্রায় ২০ লক্ষ বাঙালীকে বিদেশী চিহ্নিত করা হয়েছিল এতদিনে অসম, ত্রিপুরাসহ দেশ জুড়েই তা চালু হতো। তাছাড়া বর্তমানে দেশজুড়ে বাঙালী বিরোধী ষড়যন্ত্রের নতুন সংযোজন হলো- ত্রিপুরা, অসম, পশ্চিমবঙ্গ সহ সমস্ত বাঙালী অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্যাংক, পোষ্টঅফিস, আদালত, হাসপাতাল, রেল, বিমান পরিষেবা সহ সমস্ত সরকারী-বেসরকারী লেবেল থেকে সরকারী নির্দেশনামা, বিজ্ঞপ্তি প্রচার, ঘোষণা বাংলার পরিবর্তে হিন্দি, ইংরেজী সঙ্গে অন্য ভারতীয় ভাষায় দেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় ভাষা হিসাবে ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের তালিকায় থাকবে কেন্দ্রীয় জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ধ্রুপদী ভাষা হিসাবে নির্বাচিত তামিল, তেলেগু, কানাড়া, মালয়ালম, ওড়িয়া, সংস্কৃত ও অহমিয়া ভাষার যে কোন একটি। কাজেই শিক্ষার মাধ্যম থেকে মাতৃভাষা বাংলা বাদ হওয়ার কারণে ত্রিপুরা তথা দেশের কোটি কোটি বাংলাভাষী ছাত্রছাত্রীর বিদ্যাচর্চা ও কর্মপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে বিরাট সমস্যার সৃষ্টি হবে বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাই এক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, বাংলাভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পেছনে রয়েছে এক সুগভীর রাজনৈতিক চক্রান্ত। তাই এই চক্রান্তের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল ও গনবস্থান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান।