কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এবং ইলেকট্রনিক ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রকের যৌথ উদ্যোগে গত ২৭ মার্চ, ২০২৩-এ নয়াদিল্লীস্থিত ইন্ডিয়া হ্যাবিটেট সেন্টারে ই-প্রকিউরমেন্টের ওপর আয়োজিত এক জাতীয় কর্মশালায় ত্রিপুরা রাজ্যকে ই-প্রকিউরমেন্ট বাস্তবায়নে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে সেরা পারফরমেন্সের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় এই সংবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গত ৫ বছরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে রাজ্যকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ দপ্তরের সৌভাগ্য যোজনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য রাজ্যকে পুরস্কৃত করা হয়। কৃষি, পঞ্চায়েত স্বশক্তিকরণের ক্ষেত্রেও সেরা পারফরমেন্সের শিরোপা অর্জন করেছে রাজ্য। অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ই-প্রকিউরমেন্টের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে। এক্ষেত্রে অর্থ দপ্তরের সচিব থেকে শুরু করে দপ্তরের আধিকারিকদের তিনি ধন্যবাদ জানান। একই সাথে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা:) মানিক সাহাও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মাকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার প্রশাসনে স্বচ্ছতার উপর জোর দিয়েছে। সেই উদ্যোগের অংশ হিসাবে রাজ্য সরকার ‘ডেলিগেশন অব ফিনান্সিয়াল রুলস অব ত্রিপুরা’-এ ২৫ হাজার টাকার উর্দ্ধে দ্রব্য এবং পরিষেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ই-প্রকিউরমেন্ট বাধ্যতামূলক করেছে। তিনি ই-প্রকিউরমেন্টের সুবিধাগুলি তুলে ধরে বলেন, ই-প্রকিউরমেন্টে সরকারী বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসে এবং বিক্রেতাদের জোট গঠনের সুযোগ থাকে না। ই- প্রকিউরমেন্ট সিস্টেম ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের কেনাবেচায় সাহায্য করে। সরকারী পণ্য এবং পরিষেবা বিক্রেতাগণের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। দরদাতাদের সমস্ত তথ্য গোপন থাকার ফলে প্রকৃত দর নির্ধারণ সম্ভব। ই-প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমে সরকারের খরচ কমানোর পাশাপাশি দেশের যেকোনো প্রান্তের বিক্রেতাগণ অংশগ্রহণ করতে পারেন। অর্থমন্ত্রী গত ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ এই তিন অর্থবছরে ই-প্রকিউরমেন্ট এবং জেম- এর মাধ্যমে টেন্ডার এবং অর্ডারের সংখ্যা এবং তার সাথে জড়িত অর্থের তথ্য পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ই-প্রকিউরমেন্ট পোর্টালের মাধ্যমে ৯৮ ১৫টি টেন্ডার করা হয়েছে। এতে অর্থের পরিমাণ ছিল ৭২৭১ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ২০২২-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেম-এর মাধ্যমে ৩০৯৫টি অর্ডার করা হয়েছে। এতে অর্থের পরিমাণ ছিল ১০২ কোটি টাকা। 2022-23 অর্থবছরে ই-প্রকিউরমেন্ট এবং জেমের মাধ্যমে বিডিং এবং টেন্ডারের মোট মূল্য ৭৩৭৩ কোটি টাকা। সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরা রাজ্যে অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারিদের নিয়মিত পেনশন ব্যতিত সমস্ত লেনদেন ই-পেমেন্ট বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকারের সফলতা কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল (সিএজি) অব ইন্ডিয়া-এর 2021-22 অর্থবছরের স্টেট ফিনান্স অডিট রিপোর্টে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি জানান, উল্লিখিত প্রতিবেদনে মোট লেনদেনের ৮০.১৩ শতাংশ ই-পেমেন্টের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি জানান, সিএজি রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সমস্ত ৬৪টি কন্ট্রোলিং অফিসার-ই প্রাপ্তি এবং ব্যয়ের ১০০ শতাংশ হিসাব এজি (এ & ই)-এর সাথে মিলিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজ্য সরকার বিচক্ষণতা ও অধিক মূলধনী ব্যয়ের সাথে আর্থিক ব্যবস্থাপনা খুব ভালভাবে পরিচালনা করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদেয় আর্থিক সুযোগ সুবিধা বাড়িয়েছে। যেমন কর্মচারি, পেনশন প্রাপক, ডিআরডব্লিও, অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী, আশা কর্মী, পার্ট টাইম কর্মী, পার্ট টাইম পাম্প অপারেটর ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রদেয় আর্থিক সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট মূলধনী ব্যয়ের পরিমাণ ২৩৭৪ কোটি টাকা যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৪২৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজ্যের বিভিন্ন নিজস্ব কর রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যানও তিনি তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থদপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে এবং অতিরিক্ত সচিব আকিঞ্চন সরকার উপস্থিত ছিলেন।