প্রতিবেশী রাজ্যগুলির জন্য উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে এলো, মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, কলকাতা। মাস চারেক আগের কথা, ত্রিপুরার সিপাহীজলা এলাকার বাসিন্দা ৪৪ বছর বয়সী রঞ্জিত বাবু দেখাতে যান কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে ডা: কুণাল সরকারের কাছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হিমশিম খাচ্ছিলেন সংসার সামলাতে। জীবনের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ডাঃ কুণাল সরকার, ডাঃ দীপাঞ্জন চ্যাটার্জী, ডাঃ সৌম্যাজিত ঘোষ নানা পরীক্ষার পর বলেন হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা হৃদয় প্রতিস্থাপন একমাত্র আশার আলো দেখাতে পারে। সঙ্গে ছিলেন তার একমাত্র সন্তান। তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন যে হ্যাঁ, বাবার হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট আমরা করাবো। তারপর রঞ্জিত রায় বাবুর নাম নথিভুক্ত করা হল ROTTO এবং NOTTO পোর্টালে। তারপর অপেক্ষা উপযুক্ত ডোনর-হার্ট এর। ২৯শে ডিসেম্বর, মেডিকা হাসপাতালের নিউরো আই.সি.ইউ. তে চিকিৎসাধীন বর্ধমান জেলার ৫১ বছর বয়সী হিরন্ময় ঘোষাল কে ব্রেনডেথ ঘোষণা করা হয়। তিনি ২৮সে ডিসেম্বর কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে ভর্তি হন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ নিয়ে। চিকিৎসায় তেমন কোনো সাড়া মেলেনি, অবশেষে ২৯ তারিখে তাঁকে ব্রেনডেথ ঘোষণা করা হয়। প্রিয়জনের এই কঠিন ও নির্মম অবস্থাকে মেনে নিয়ে তাঁর পরিবার এগিয়ে আসেন অর্গান ডোনেশন এর মহানুভবতা নিয়ে ২৯ তারিখ রাতেই যোগাযোগ করা হয় রঞ্জিত বাবুর ছেলের সাথে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও ওনারা প্রস্তুত হয়ে গেলেন। পরের দিন ৩০ তারিখ সকালের বিমানে কলকাতায় পৌঁছন। সরাসরি ওনাকে ভর্তি করা হয় কার্ডিয়াক আই সি ইউ তে। সেই দিনই একসাথে পাশাপাশি দুটো থিয়েটারে চলতে থাকে অর্গ্যান ডোনেশন আর হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট-এর অপারেশন। কলকাতা তথা পশ্চিম বাংলার মধ্যে নজির গড়ে সব থেকে বেশি অর্গান ডোনেশন হলো মেডিকা হাসপাতালে। ঘোষাল বাবু বেচেঁ থাকবেন ৬ জন মানুষের মধ্যে। তাঁর হৃদয় পেলেন ত্রিপুরার রঞ্জিত বাবু, যার প্রতিস্থাপন হলো মেডিকা হাসপাতালে। দুটো কিডনী আরো দুজন, ফুসফুস নিয়ে গেলেন চেন্নাই এর এক বেসরকারী হাসপাতাল, লিভার আর কর্নিয়া দিয়ে তিনি নতুন করে বেচেঁ আছেন আরো পাঁচজন মানুষের শরীরে। কলকাতা সাক্ষী থাকলো মরণোত্তর অঙ্গদানে আরো এক নজিরবিহীন ঘটনার।