Sunday, August 3, 2025
বাড়িখবররাজ্যগ্রাম ত্রিপুরার অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে স্বসহায়ক দলগুলি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করছে:...

গ্রাম ত্রিপুরার অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে স্বসহায়ক দলগুলি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করছে: মুখ্যমন্ত্রী

উন্নয়নের নিরিখে পিছিয়ে থাকা মানুষের কল্যাণে পরিচালিত কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পরিকল্পনাগুলোর একশ শতাংশ সফলতা অর্জন করাই হল বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য। মানুষের আর্থসামাজিক সহ রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণতার দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরের সর্বস্তরের আধিকারিকদের সম্মিলিত প্রয়াস জরুরী। এক্ষেত্রে মনিটরিং ব্যবস্থাকেও আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। আজ প্রজ্ঞাভবনে রাজ্যভিত্তিক ‘সম্পূর্ণতা অভিযান সম্মান সমারোহ’ কর্মসূচির উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বোতাম টিপে ‘মুখ্যমন্ত্রী নবদিশা অভিযান’ এবং স্ব-সহায়ক দলের মহিলা কিষান দিদিদের জন্য ৮০টি ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং ক্লাস্টারের সূচনা করেন। গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নবদিশা অভিযান কর্মসূচির মাধ্যমে যে সমস্ত প্রান্তিক পরিবারের সদস্যারা এখনো স্ব-সহায়ক দলের আওতায় আসেনি এরকম রাজ্যের ১৬টি ব্লকের ১০ হাজার পরিবারের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সহায়তা করা হবে। এরজন্য ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ৫০ কোটি টাকা। বর্তমানে রাজ্যে ৫৩,৯৫১টি স্ব-সহায়ক দল রয়েছে। যাতে ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার মহিলা যুক্ত রয়েছেন। গ্রাম ত্রিপুরার অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় করতে এসব স্ব-সহায়ক দল বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করছে। এছাড়া ‘তৃপ্তি’ কর্মসূচিতে ধলাই জেলার গঙ্গানগর এবং উত্তর জেলার দশদা ব্লকের ৪ হাজার দরিদ্র পরিবারের উন্নতির পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। তাছাড়া ৮০টি ইন্টিগ্রেটেড ফার্মিং ক্লাস্টারের মাধ্যমে রাজ্যের ৮টি জেলার যে সকল মহিলা স্ব-সহায়ক দলের সদস্যারা কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জীবিকা অর্জনের সাথে যুক্ত তাদের সহায়তা করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যয় হবে ৩২ কোটি টাকা।

অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণতা অভিযান সম্মান সমারোহ আয়োজনের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নীতি আয়োগের নীতি নির্দেশিকায় দেশের ১১২টি অ্যাসপিরেশনাল জেলা এবং ৫০০টি অ্যাসপিরেশনাল ব্লকে এই সম্পূর্ণতা অভিযান করা হয়। ৪ জুলাই, ২০২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ এই ৩ মাসব্যাপী কর্মসূচি চালু ছিল। রাজ্যের একমাত্র অ্যাসপিরেশনাল জেলা ধলাই এবং ৩ টি অ্যাসপিরেশনাল ব্লক যথাক্রমে ধলাই জেলার গঙ্গানগর ও উত্তর ত্রিপুরা জেলার দশদা এবং দামছড়ায় এই কর্মসূচি রূপায়িত হয়েছিল। ব্লকস্তরে এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য ছিল ঐ সমস্ত অঞ্চলের মানুষের ৬টি মূল সূচক যথাক্রমে গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাসের মধ্যে নিবন্ধিত মহিলাদের শতকরা হার, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন পরীক্ষা করা ব্যক্তিদের শতকরা হার, পুষ্টি গ্রহণকারী মহিলাদের শতকরা হার, সয়েল হেলথ কার্ড ও রিভলবিং ফান্ড প্রাপক স্ব-সহায়ক দলের শতকরা হার নির্ণয়ের পূর্ণ সফলতা অর্জন করা। তাছাড়া জেলাস্তরেও গর্ভধারণের প্রথম ৩ মাসের মধ্যে নিবন্ধিত মহিলাদের শতকরা হার, পুষ্টি গ্রহণকারী মহিলাদের শতকরা হার, ৯ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের টিকাকরণের শতকরা হার, সয়েল হেলথ কার্ড প্রদানের হার, বিদ্যুতের ব্যবস্থা সম্বলিত মাধ্যমিকস্তরের বিদ্যালয়ের হার এবং শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার ১ মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদানকারী বিদ্যালয়ের শতকরা হার নির্ণয়ে সফলতা লাভ করা। এই কর্মসূচি রূপায়নে নোডাল দপ্তর ছিল গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। সহায়তায় ছিল স্বাস্থ্য, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা, কৃষি, শিক্ষা, ত্রিপুরা গ্রামীণ আজীবিকা মিশন প্রভৃতি দপ্তর।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সম্পূর্ণতা অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক চাঁদনী চন্দ্রন ও ঐ জেলার প্রাক্তন জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন, ধলাই জেলার জেলাশাসক বিবেক এইচ. বি. এবং জেলার প্রাক্তন জেলাশাসক সাজু বাহিদ এ. সহ গঙ্গনগর, দশদা এবং দামছড়া ব্লকের বিডিও ও বিভিন্নস্তরের আধিকারিকদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অ্যাপিরেশনাল ব্লক কর্মসূচি চালু করার উদ্দেশ্য ছিল দেশের একেবারে অনগ্রসর ব্লক এলাকায় বাসবাসকারী নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানের গুণগত পরিবর্তন সাধন করা। এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং সামাজিক উন্নয়নের উপর। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে জাতি ও জনজাতিদের মধ্যে আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে সবাইকেই এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে জনজাতি সমাজপতিদের ভাতা ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করেছে। আগামীদিনে জনজাতিদের বিভিন্ন সাব-ট্রাইবের সমাজ প্রধান কিংবা সমাজপতিদেরও এই ধরণের ভাতার আওতায় আনার চিন্তা ভাবনা করছে সরকার।

অনুষ্ঠানে আলোচনায় অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের সব ধরণের কর্মসূচি রাজ্যে সাফল্যের সঙ্গে রূপায়ণ করা হচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৭৪৭ জন লাখপতি দিদি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করেন প্রায় ১ লক্ষ ৭ হাজার লাখপতি দিদি। আর ৫ লক্ষ ১০ লক্ষ টাকা আয় করেন ১ হাজার ১২৯ জন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব এল টি ডার্লং, ত্রিপুরা গ্রামীণ আজীবিকা মিশনের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তড়িৎকান্তি চাকমা এবং গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব কুন্তল দাস। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রজ্ঞাভবনেই মহিলা স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর উৎপাদিত সামগ্রীর ৭টি প্রদর্শনী ও বিক্রয়কেন্দ্র নিয়ে ‘আকাঙ্খা হাটের’ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সম্পূর্ণতা অভিযান নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক, বিডিও সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক, স্ব-সহায়ক দলের সদস্যাগণ উপস্থিত ছিলেন।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

ten + two =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য