উন্নত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বইমেলার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । বইমেলার মধ্য দিয়ে সমাজে স্নিগ্ধতা ও সৌহার্দ্যতা আসে । বইমেলা তাকে আরও সুদৃঢ় করে তোলে । আর্থিক ব্যবস্থার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থাও হয় তাতে । আজ সন্ধ্যায় হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে আয়োজিত ৪০ তম আগরতলা বইমেলার সম্মাপনা জ্ঞাপন ও সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব । অনুষ্ঠানে তিনি বলেন , ভারতীয় সংস্কৃতি ভারতের আত্মা । বইমেলার মধ্য দিয়ে আমাদের ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি বিকশিত হয় । বইমেলা প্রাঙ্গণে পন্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় মঞ্চে আয়োজিত বইমেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন , বইমেলায় সংস্কৃতি তখনই থাকবে যখন রাষ্ট্র স্বমহিমায় থাকবে । সংস্কৃতি এই মাটিতেই রয়েছে । এই মাটিকেই আমাদের ধরে রাখতে হবে । তিনি বলেন , সংস্কৃতির বিকাশে সরকার যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছে । ৪০ তম আগরতলা বইমেলা সফলভাবে আয়োজন করার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর প্রশংসাও করেন তিনি ৷ তিনি বলেন , তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর শিল্পকলা ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এবারের বাজেটেও তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের জন্য আগের তুলনায় অধিক বরাদ্দ রাখা হয়েছে । অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন , রাজ্য বাজেটে প্রতিবার আর্থিক বরাদ্দ সরকার বৃদ্ধি করে চলেছে । পূর্বতন সরকারের ৫ টি বাজেটে বৃদ্ধি হয়েছিল ৪ হাজার কোটি টাকার উপর । আর বর্তমান সরকারের ৫ টি বাজেটে বৃদ্ধি হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার উপর । এটাই প্রমাণ করে ত্রিপুরার অর্থনীতি দ্রুত এগিয়ে চলেছে । আগামী ২৫ বছরে ত্রিপুরা কোথায় যাবে সেই রূপরেখাও ইতিমধ্যেই নিরূপণ করা হয়েছে । ছেলেমেয়েরাও তাদের ভবিষ্যৎ গড়তে অনেকটাই সুবিধা পাবে । কারণ তাদের সামনেও আগামী ২৫ বছরের রূপরেখা চলে এসেছে । এখন ত্রিপুরার যুবদের মধ্যে স্বরোজগারী মানসিকতা তৈরি হয়েছে । এই চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে তারা নিজেরা আর্থিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জনের রাস্তা খুঁজে পেয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী আলোচনাকালে বলেন , দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মানুষের জন্য কাজ করছেন । মন কি বাত অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রীর মুখে বার বার ত্রিপুরার নাম উঠে এসেছে । ত্রিপুরার কাঁঠাল কিংবা আপেল কুলের মাধ্যমে স্বরোজগারী ভাবনার কথা বলেছেন তিনি । এই প্রসঙ্গে ত্রিপুরা থেকে তিনজন পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ার কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী । মুখ্যমন্ত্রীর কথায় , কাজ করার মানসিকতা থাকতে হয় । সেই সঙ্গে কমিটমেন্ট থাকতে হয় । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ত্রিপুরার প্রায় ৬ লক্ষ পরিবারের কাছে বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করেছেন । বিনামূল্যে গণবন্টন আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে । ২ – এর পাতায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমবায় মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল বলেন , ত্রিপুরার মধ্যে বইমেলা জনপ্রিয়তা অর্জন করছে । দিন দিন এই মেলার আরও উন্নতি এবং সমৃদ্ধি হবে । ৪০ তম আগরতলা বইমেলার সম্মাননা জ্ঞাপন ও সমাপ্তি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী । তিনি বলেন , বইমেলা শহর থেকে দূরে হলেও আগরতলা বইমেলার জনপ্রিয়তায় কোনও ভাটা পড়েনি । জ্ঞানের যেমন কোনও পরিধি নেই তেমনি দূরত্ব কখনও জ্ঞান আহরণে বাধা হতে পারে না । তার প্রমাণ গত বছর বইমেলায় ১ কোটি ৭ লক্ষ টাকার বই বিক্রি হয়েছিল । এবার প্রথম ১১ দিনেই বই বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার । ১২ তম দিনে অর্থাৎ শেষ দিনেও বিক্রির পরিমাণ আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে । গতবারের রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে এবারের বইমেলা । মানুষের মধ্যে জ্ঞানের পরিধিকে আরও ছড়িয়ে দিতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে । এজন্য জেলায় জেলায় বইমেলা আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে সরকার । ইতিমধ্যেই উত্তর জেলা , ঊনকোটি জেলা , ধলাই জেলা ও খোয়াই জেলাতে বইমেলা করা হয়েছে । বাকি জেলাগুলিতে ক্রমান্বয়ে বইমেলার আয়োজন করা হবে । আগামীদিনেও এই বইমেলাকে যাতে আরও সফল করে তোলা যায় এজন্য সহযোগিতা কামনা করেছেন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী । বইমেলার সমাপ্তি অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস । তিনি বলেন , এবছর বইমেলায় ১৬০ টির অধিক স্টল অংশ নিয়েছে । আগামীদিনে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে । পাশাপাশি বইমেলা আয়োজনের সাথে যুক্ত প্রতিটি সাবকমিটি ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেছেন তিনি । অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা দেব ( সরকার ) , আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার , ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা , তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্রা , বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশন কার্যালয়ের সহকারি হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ , ত্রিপুরা পাবলিশার্স গিল্ডের সম্পাদক শুভব্রত দেব , দি অল ত্রিপুরা বুক সেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী , পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক রাখাল মজুমদার প্রমুখ ।