Friday, December 27, 2024
বাড়িখবরশীর্ষ সংবাদসাড়া জাগিয়ে শেষ হলো সুর পঞ্চম জাতীয় নাট্য উৎসব

সাড়া জাগিয়ে শেষ হলো সুর পঞ্চম জাতীয় নাট্য উৎসব

রাজ্যের সুপরিচিত সাংস্কৃতিক সংস্থা সুর পঞ্চম আয়োজন করেছিল জাতীয় নাট্য উৎসবের। ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ২ নং প্রেক্ষাগৃহে চার দিনব্যাপী এই নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। ১০ তারিখ এই নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রীয় নাট্য বিদ্যালয়, ত্রিপুরার শাখার অধিকর্তা বিপ্লব বড় কাকুতি। অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য দয়াল কৃষ্ণ নাথ, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত মূকাভিনয় শিল্পী মইনুল হক, পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব আশীষ দাস। প্রত্যেক অতিথি তাদের বক্তব্যে এই নাট্য উৎসব আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এই ধরনের আয়োজন এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরার মোট সাতটি দল এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রথম দিন মঞ্চস্থ হয় আয়োজক সংস্থার নাটক ” কুরুক্ষেত্রের হোক সমাপন” রচনা পার্থ মজুমদার নির্দেশনায় ছিলেন পীযুষ কান্তি রায় ও পার্থ মজুমদার। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু হবার আগের দিনের ঘটনা এবং যুদ্ধের সমাপ্তি দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাটকের নির্মাণ। অবজ্ঞা, অমর্যাদা, ভালোবাসা না পেয়ে এই যুদ্ধে কর্ণের ভূমিকা উঠে আসে এই নাটকে। জাক জমকপূর্ণ মঞ্চ, নাটকের বিন্যাস, অভিনয় দর্শকের মনে গভীর দাগ রেখে যায়।
দ্বিতীয় সন্ধ্যায় প্রথম নাটক ছিল পশ্চিমবঙ্গের গোবরডাঙ্গা নকশা নাট্য দলের নাটক “ইয়েস” । ভূমি সুতা দাসের নির্দেশনায় এবং একক অভিনয়ের মাধ্যমে বর্তমান সমাজের একটি রুক্ষ, কঠিন বাস্তব কে তুলে ধরা হয়েছে এই নাটকে। অদম্য জেদকে নির্ভর করে একটি মেয়ে কিভাবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠেছে, তথাকথিত ভদ্র সমাজের বিভিন্ন ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে তা এই নাটকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ভূমি সুতা দাসের অভিনয় আজ কেন সারা ভারতবর্ষে চর্চিত তা বুঝিয়ে দিয়েছেন এই নাটকে মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় নাটক ছিল আসামের লখিনপুরের অভিনব থিয়েটার নাট্যদলের নাটক “করোয়া সচ”. । কুশল ডেকার রচনা এবং দয়াল কৃষ্ণ নাথের নির্দেশনায় এই নাটক দর্শকের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়। আসামের লোকসংস্কৃতি অঙ্কীয় ভাবনা অবলম্বনে এই নাটকটি তৈরি করা হয়েছে। একজন শিল্পীর যন্ত্রণা, রাজনৈতিক শক্তির দ্বারা শিল্পীদের অনৈতিকভাবে ব্যবহার এবং সঠিক মর্যাদা না দেওয়া এই নাটকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। শিল্পীদের অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা এই নাটককে অন্য মাত্রা প্রদান করেছে।
তৃতীয় সন্ধ্যায় প্রথম নাটক ছিল শিলচরের আজকের প্রজন্ম নাট্য দলের নাটক ” দ্য অ্যামেজিং গার্ল” । তরুণ প্রতিভাবান নির্দেশক সায়ন বিশ্বাসের নির্দেশনায় এবং বিপ্লব দাসের নাট্যরূপে হেলেন কেলারের জীবনী উঠে আসে এই নাটকে। অভিনয়, মঞ্চ, আবহ এবং মঞ্চে সত্যি অর্থে বৃষ্টি নামানো এবং জলের কলের ব্যবহার এই নাটককে অতি উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়। আগরতলার নাট্যমোদী দর্শক দীর্ঘকাল মনে রাখবেন এই নাটকটিকে। দ্বিতীয় পরিবেশনা ছিল আসামের মাইম একাডেমীর নির্দেশক মূকাভিনয় সম্রাট সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী মইনুল হকের মুকাভিনয়। মুকাভিনয় শিল্পকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায় এবং নির্বাক হয়েও দর্শকদের কিভাবে মোহিত করে রাখা যায় উনার পরিবেশনায় দর্শকরা তা অনুভব করতে পেরেছেন।
চতুর্থ সন্ধ্যায় প্রথম নাটক ছিল আগরতলার কলাভূমি নাট্য দলের নাটক ” অন্তর দহন” । বিদ্যুৎ জিৎ চক্রবর্তী রচনা ও নির্দেশনায় এই নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। আগরতলার তরুণ শিল্পী উত্তম দাস এবং স্নিগ্ধা সরকারের পাশাপাশি অন্যান্যদের অভিনয় দক্ষতা ছিল এই নাটকে দেখার মত।
চতুর্থ দিনের শেষ নাটক ছিল পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ডক্টর দেবেশ ঠাকুরের রচনা ও নির্দেশনায় নাটক “তৃনাদপি”। চৈতন্যদেবের জীবনের উপর কীর্তন আঙ্গিকের একটি নাটক এই “তৃণাদপি”।
প্রতিদিন প্রায় প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ দর্শক বেশ কিছু উঁচু মানের নাটকের স্বাদ আস্বাদন করতে পেরেছেন এই জাতীয় নাট্য উৎসবে। আগামীর প্রত্যাশা জাগিয়ে 13 নভেম্বর চার দিনব্যাপী এই জাতীয় নাট্য উৎসবের সমাপ্তি হয়।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

16 − two =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য