অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগণের কল্যাণে রাজ্য সরকার বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। বিগতদিনে যারা নানাভাবে বঞ্চিত ছিলেন তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশাপাশি সার্বিক মানোন্নয়নও করা হচ্ছে। রাজ্য সরকার এসসি, এসটি, ওবিসি, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সহ সকলকে নিয়েই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। আজ আইজিএম হাসপাতাল সংলগ্ন হরিজন কলোনীতে নবনির্মিত হরিজন আবাসনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আদর্শকে সামনে রেখেই সব শ্রেণীর মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এতদিন ধরে বঞ্চিত সাফাই কর্মীদের সত্যিকারের মূল্যায়ন করার কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী। বিগতদিনে রাজ্য সরকার গরিবদের জন্য শুধু মায়াকান্নাই করেছে। বর্তমান সরকারের সময়কালে রাজ্যের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারি কর্মচারিদের ডিএ প্রদান সহ নানা প্রকল্পের সুবিধা লাভের জন্য আন্দোলন করতে হয় না। বিনা আন্দোলনেই সকলের সমস্যা সমাধানে রাজ্য সরকার যথেষ্ট আন্তরিক।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাফাই কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের পারিবারিক আয় সীমিত থাকায় তাদের পক্ষে নিজের উদ্যোগে বসতবাড়ি নির্মাণ করা খুব কষ্টকর। তাই সাফাই কর্মীদের সাশ্রয়ী ও নিরাপদ আবাসন, সম্মানজনকভাবে জীবনযাপন, স্বাস্থ্য ও স্বাচ্ছন্দ্যের উন্নতি, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন সহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যেই এই কোয়ার্টার কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়েছে। এই কোয়ার্টার নির্মাণের জন্য সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তপশিলি জাতি সম্প্রদায়ের জনগণের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নে রাজ্য সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী অনুসূচিত জাতি অভ্যুদয় যোজনায় (পিএম-অজয়) ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ২১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ২৪৬৮ জন সুবিধাভোগীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বাবু জগজীবন রাম ছাত্রাবাস যোজনায় ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৩টি ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে ১টি ছাত্রীনিবাস নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি ২টি ছাত্রাবাসের নির্মাণ কাজ এবছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তপশিলি জাতি সম্প্রদায়ের জনগণের রোজগার সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ১ হাজার ৯২০ জনকে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্পে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে ৭ হাজার ৮২৭ জন ছাত্রছাত্রীকে ড. বি আর আম্বেদকর মেরিট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম থেকে দশম স্থান অর্জনকারী ৯ জন তপশিলি জাতি অংশের ছাত্রছাত্রীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়েছে। তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে গত বছর ৮৭২ জন ছাত্রছাত্রীকে বোর্ডিং হাউস স্টাইপেন্ড প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও তপশিলি জাতিভুক্ত ১৫৩ জন সুবিধাভোগীকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট নিগমগুলি থেকে মোট ৪ কোটি ৫১ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ক্রীড়া সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করছে। কিন্তু বিগতদিনে চাকরি প্রদান সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিয়ম লক্ষ্য করেছে রাজ্যবাসী। বর্তমান রাজ্য সরকার মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে স্বসহায়ক দলগুলিকে নানাভাবে সহযোগিতা প্রদান করছে।অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার বলেন, স্পেশাল ডেভেলপমেন্ট স্কিম প্রকল্পে এই কোয়ার্টারটি নির্মাণ করা হয়েছে। এরজন্য ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে ১ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে স্পেশাল ডেভেলপমেন্ট স্কিম থেকে এবং ১ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে হাড়কো থেকে ঋণের মাধ্যমে। এই কোয়ার্টার কমপ্লেক্সটি নির্মাণের ফলে ৯ জন সাফাই কর্মচারির পরিবার উপকৃত হয়েছেন। এই আবাসনের প্রতিটিতে রয়েছে দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর এবং শৌচালয়। এছাড়াও প্রতিটি কোয়ার্টারে পানীয়জল ও বিদ্যুতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র মণিকা দাস দত্ত, পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক ড. বিশাল কুমার, তপশিলি জাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা অসীম সাহা প্রমুখ।