নিষিদ্ধ ড্রাগস ও নেশা দ্রব্যের অশুভ সংস্পর্শ ব্যক্তিকেই নয় , একটি পরিবারকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করে । যুব সম্প্রদায়কে শিরাপথে নেশা গ্রহণ থেকে বিরত রাখার মধ্য দিয়ে এইচআইভি ও মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত রাখতে মায়েদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে । আজ আগরতলা টাউনহলে অল ত্রিপুরা এনজিও এসটি বোর্ডিং ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের চতুর্থ প্রতিষ্ঠা দিবস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , নিষিদ্ধ নেশা বাণিজ্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা ও এর ব্যবহার হ্রাসের লক্ষ্যে প্রাধান্যের ভিত্তিতে কাজ করছে সরকার । আগরতলা ও উত্তর জেলায় নেশা মুক্তি কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । ভাবি প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যেন নষ্ট না হয় এবং যুব সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধশালী ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার সংকল্পবদ্ধভাবে কাজ করছে । শিরাপথে নেশাদ্রব্য ব্যবহারের ফলে যুব সম্প্রদায়ের এইচ আই ভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । মাদককারবারীরা জনজাতি এলাকা , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন জায়গাগুলিকে বাছাই করে নেশা বাণিজ্যের প্রসার করছিলো । প্রশাসনিকভাবে তা অনেকটাই বোধ করা সম্ভব হয়েছে । মায়েদের এই ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়া আবশ্যক । মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন , প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক দৃষ্টি ও রাজ্য সরকারের সদর্থক পদক্ষেপের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রের পাশাপাশি জনজাতিদের আর্থসামাজিক জীবনমানের বিকাশে গতি এসেছে । ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে গৃহীত পরিকল্পনার সুফল সুনিশ্চিতকরণে এনজিওগুলির কাজকর্মে আরও গতি সঞ্চার করা প্রয়োজন । জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার সার্বিক বিকাশে বিগতদিনের অনীহা থেকে পরিত্রাণের জন্য এবং উপেক্ষিত ক্ষেত্রগুলির সার্বিক বিকাশে গতি সঞ্চারিত হয়েছে । অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবা , অবকাঠামোগত বিকাশ , একলব্য বিদ্যালয় , ইউপিএসসি প্রবেশিকায় অংশগ্রহণের উপযোগী প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত সাফল্য , সিবিএসই শিক্ষা গ্রহণ , পরিশ্রুত পানীয় জল সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই সফল বাস্তবায়ন হচ্ছে । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , উন্নয়নের সমবিকেন্দ্রীকরণে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে সরকার । উন্নয়নের প্রশ্নে উপেক্ষিত অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করে কাজ চলছে । গন্ডাতুইসার মতো অঞ্চলে বদলিকে একটা সময়ে শাস্তিমূলক হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও বর্তমানে ডুম্বুর সহ গোটা অঞ্চলের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে গৃহীত গুচ্ছ পরিকল্পনা সফল বাস্তবায়িত হচ্ছে । অত্যাধুনিক লগ হাট সহ ডুম্বুরের পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে । তার পাশাপাশি প্রান্তিক এলাকাগুলি পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যেও বিভিন্ন উন্নয়ন এসেছে । শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি । মুখ্যমন্ত্রী বলেন , সরকারের চালিকা শক্তি কর্মচারিদের উৎসাহিত করলেই যে সাফল্য আসে , তার একের পর এক নজির স্থাপিত হচ্ছে রাজ্যে । রাজ্যের ৪৫ শতাংশ জায়গায় পরিশ্রুত পানীয়জলের সংযোগ ইতিমধ্যেই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে । রাজ্য সরকার দ্বারা প্রস্তুত আগামী ২৫ বছরের রূপরেখা ভাবি প্রজন্মের সঠিক জীবন জীবিকা নির্বাচনে অগ্রণী ভূমিকা নেবে । অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া বলেন , জনজাতি অংশের মানুষের আর্থসামাজিক জীবনমান উন্নয়ন সরকারের প্রাধান্যের ক্ষেত্র । জনজাতি অংশের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে গুচ্ছ পরিকল্পনা রাজ্যব্যাপী সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে । যার অন্যতম নিদর্শন একলব্য বিদ্যালয় । বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা সুনিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এবং শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নে গতি এসেছে । এক্ষেত্রে এনজিওগুলিরও গুরুত্ব অপরিসীম । তিনি আরও বলেন , উন্নয়নের অসমতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ চলছে । বিকাশের অসম বন্টনের দ্বারা কোনও অঞ্চলেরই সার্বিক বিকাশ সম্ভব নয় । প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে লক্ষ্যপথে অবিচলতা নিশ্চিত সাফল্যের পথ প্রশস্ত করে । অন্যের সমালোচনা থেকে বিরত থেকে একাগ্রতা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যক্তি সত্ত্বার বিকাশ দ্বারা সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ নির্মাণের আহ্বান রাখেন তিনি । সরকারি সুযোগ সুবিধা এবং পরিষেবার সুফল দ্রুততার সঙ্গে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কর্মচারিদের আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি । তিনি বলেন , ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ করে জনজাতি পড়ুয়াদের কাছে সমস্ত ধরনের সুযোগ সম্প্রসারণে রাজ্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে । নেশামুক্ত রাজ্য নির্মাণের লক্ষ্যে সর্বাঙ্গীন সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী । এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অল ত্রিপুরা এনজিও এসটি বোর্ডিং ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উপদেষ্টা সুকুমার দেববর্মা , সভাপতি তপতী কলই প্রমুখ ।