তেলিয়ামুড়া প্রতিনিধি :-
রাজ্যের ইতিহাসে পাতায় এক ভয়াবহ বিভীষিকাময় কলঙ্কিত অধ্যায় ছিল সেই দিনগুলো! ১৯৯০ সালের ৮ই জুলাই! রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস জোট সরকার! নৃসংসভাবে খুন করা হয়েছিল কংগ্রেস কর্মীদের! কি হয়েছিল সেদিন? কারা করেছিল কংগ্রেস কর্মীদের হত্যা? বাম-কংগ্রেসের এই জোট কি মেনে নেবে স্ব-জন হারানো সেই পরিবারগুলি। আজকে এই বিশেষ প্রতিবেদন– রাজ্যের প্রকৃত ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় অধ্যায় ছিল ১৯৯০ সালের ৮ই জুলাই দিনটি। তখন সরকারি ও প্রশাসনিক দায় দায়িত্বের ভার সামলাচ্ছিল রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস জোট সরকার। সেই সময় ১৯৯০ সালে ৮ই জুলাই রবিবার সকালে ঘটে গিয়েছিল নিশংস হত্যাকাণ্ড। কি হয়েছিল সেদিন সকালে? তেলিয়ামুড়া মহকুমার ৭ জন প্রথম সারির কংগ্রেস কর্মীর তাজা প্রান নৃশংসভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেস কর্মী শান্তি সাহা, শীতল সাহা, বাদল দেব, মুকুন্দ দেবনাথ, তপন দেবরায়, মেথিও মলসম, দিলীপ ঘোষ এবং আশুতোষ দত্ত -দের নিশংসভাবে গুলি করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করেছিল কংগ্রেস সিপিআইএমের ঘাতক বাহিনী। ঘটনার প্রায় ৩৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সু-বিচারের আজও পায়নি হত্যা হওয়া সেই সিপিআইএম কংগ্রেস কর্মীদের পরিবার।
সেই কংগ্রেস জোট সরকারের আমল থেকে ৩৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কংগ্রেস দল পারেনি আজও নিশংসভাবে খুন হওয়া সেই কংগ্রেস কর্মীদের পরিবারকে সুবিচার পাইয়ে দিতে। হত্যাকারীরা আজও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে খোলা আকাশের নিচে। রাজ্যে ইতিহাসে কালো অধ্যায় বলে পরিচিত সেই ২৫ বছরের বাম শাসন। ১৯৯০ সালে এ.ডি.সি কাউন্সিল নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে কী কংগ্রেসের একাংশ নেতৃত্ব এবং সিপিএমের মধ্যে কি তবে গোপন কোনো বোঝা পড়া রয়েছিল? আর এর ফলেই কি কংগ্রেস কর্মীদের নিশংস হত্যাকাণ্ডের সুবিচার পেল না তাদের আত্মীয় পরিজনেরা? আবারো বলে রাখা ভালো, বিভীষিকাময় সালটা ছিল ১৯৯০ সাল, দিন ৮ ই জুলাই। রাজ্যে তখন জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী সুধির মজুমদার। তখন রাজ্যে স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে তৎসময় শাসক কংগ্রেস এবং বিরোধী দল সিপিআইএম নির্বাচনী ময়দানে ছিল। তৎসময়ে শাসক দল কংগ্রেসের তেলিয়ামুড়া ব্লক কংগ্রেস দলের সাধারণ সম্পাদক শান্তি সাহার নেতৃত্বে শীতল সাহা, বাদল দেব রা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে তেলিয়ামুড়া শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার রাঙ্খল পাড়াস্থিত সর্দুকরকরী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গিয়েছিল। সেই সময় সেখানে উপস্থিত কংগ্রেস কর্মীদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে বন্দুক, টাক্কাল, বল্লম সহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালায় সিপিআইএম দল আশ্রিত ঘাতক বাহিনী সব সিপিআইএমের দুষ্কৃতীরা। এমনটাই অভিযোগ করেন খুন হওয়া সেই কংগ্রেস কর্মীদের দলীয় সহকর্মী তথা বিগত দিনের কংগ্রেস নেতা তথা বর্তমানে বিজেপি তেলিয়ামুড়া মন্ডল সহ-সভাপতি মধুসূদন রায়। ১৯৮৮ সাল থেকে ৯৩ সালে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতিকারীদের হাতে আহত নিহত হয়েছে বহু জন। তেলিয়ামুড়া অম্পি চৌহমনী পুরাতন হাসপাতাল এর সামনে আজও বিভীষিকাময় ঘটনার সাক্ষী। সেই সময় চলছিল কংগ্রেস জোট আমলের সরকারের ১৯৯০ সাল। প্রতিদিনই কোথা না কোথাও সন্ত্রাসের ঘটনা কম ছিল না। দুপুর তখন দুই টা। হঠাৎ করে তেলিয়ামুড়া শহরে দেখা দেয় উত্তেজনা পরিস্থিতি । দূর দূরান্ত থেকে আসা তেলিয়ামুড়া বাজারের মানুষজনরা নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে লেগে পড়েছে। যে যেদিকে পায় সেদিকে আত্মগোপন করে বাজারে আসা মানুষজনরা।দোকানের দরজা বন্ধ করে অনেকে পালিয়ে গেছে আবার অনেকে দোকানের মধ্যেই দরজা বন্ধ করে ছিল। সেই সময় সিপিআইএম কর্মী দিলীপ ঘোষ অমপি চৌহমনী স্হিত পুরাতন তেলিয়ামুড়া গ্রামীণ হাসপাতালের কাছে নিজের হোটেলের দরজা বন্ধ করে বসেছিল। খানিকের মধ্যেই দোকানের দরজা ভেঙ্গে কংগ্রেসের আশ্রিত দুষ্কৃতিকারীরা হামলা করে দিলীপ ঘোষের উপর। দিলীপ ঘোষ সেই সময় নিজের প্রাণ বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের কাছ থেকে ছুটে তেলিয়ামুড়া গ্রামীণ হাসপাতালে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীদের পিছু ধাওয়ায় হাসপাতালে প্রস্রতি কক্ষে ঢুকেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি নিজের জীবন। হাসপাতালে প্রস্রতি কক্ষে প্রবেশ করে দুষ্কৃতিকারীরা হাসপাতালের অপারেশনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করে দিলীপ ঘোষকে। এই সময়ে সিপিআইএম লালি দুষ্কৃতীদের দ্বারা পাতলা বাড়ি স্হিত নিজ বাড়িতে রাতের অন্ধকারে খুন হয়েছিল তৎসময়ের ব্লক কংগ্রেস সম্পাদক আশুতোষ দত্ত। ১৯৯১ সালে সিপিআইএম জেল ভরো আন্দোলনের মিছিলে বর্তমান সিপিআইএম কার্যালয়ের সামনে কংগ্রেসের লালিত দুষ্কৃতিকারীদের মারে খুন হয়েছিল সিপিআইএম কর্মী নীতিশ পাল। ১৯ ৭৯ সালে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন এন এস ইউ আই কর্মী তথা সারদাময়ী বিদ্যাপীঠ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রিতা চৌধুরীকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সিপিআইএম পরিচালিত দুষ্কৃতিকারীরা। রিতা চৌধুরীকে মহারানীপুর এলাকার জঙ্গলে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে। এই ঘটনার এখন পর্যন্ত কোন তথ্য প্রমান সংগ্রহ করতে পারেনি পুলিশ। আরো জানা যায়,,,, সিপিআইএম আশ্রিত ঘাতক বাহিনী গুলি করে, টাক্কাল দিয়ে কুপিয়ে এবং বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নিশংস ভাবে কংগ্রেস কর্মীদের হত্যা করেছিল। সে সময় ছিল রাজ্যে স্ব-শাসিত জেলা পরিষদের নির্বাচন। আর সেই সময় সিপিআইএমের ভয়াবহতার এবং নিশংসতার শিকার হয়ে খুন হতে হয়েছিল তৎকালীন রাজ্যে ক্ষমতাসীন শাসক দল কংগ্রেসের বহু নেতাকর্মীদের। তেলিয়ামুড়া মহকুমার উত্তর মহারানীপুরে সিপিআইএমের ঘাতক বাহিনী খুন করেছিল কংগ্রেস কর্মী মুকুন্দ দেবনাথ ও তপন দেবরায় কে। খুন করা হয়েছিল ৭ মাইল ভিলেজ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মেথিও মলসম কে, খুন করা হয়েছিল ব্লক কংগ্রেস সদস্য আশুতোষ দত্তকে। সিপিআইএম দল ছিল সেই সময় মুখ্য বিরোধী ভূমিকায়। অভিযোগ, জাতি উপজাতির মধ্যে দাঙ্গা তৈরি করার উদ্দেশ্যে এই নিশংস হত্যা লীলা চালানো হয়েছিল। কংগ্রেস দলের বরিষ্ঠ কর্মী সূত্রে খবর,, সেই সময় থেকেই কংগ্রেসের একাংশ নেতৃত্বরা সিপিআইএম -এর সঙ্গে মৈতালি সম্পর্ক গড়েছিল, ফলে কংগ্রেস কর্মীদের খুন কাণ্ডে জড়িত সিপিআইএমের সেই দুষ্কৃতিকারীদের পুলিশ ধরতে পারিনি। সেদিনের সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি চক্ষু ধারণ করেছিলেন খুন হওয়া সেই কংগ্রেস কর্মীদের দলীয় সহকর্মী তথা বিগত দিনের কংগ্রেস নেতা মধুসূদন রায়। যখন এই নিশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার খবর তেলিয়ামুড়া এলাকায় ছড়িয়ে পরে, তখন কান্নার রোলে ভেঙে পড়েন তৎসময়ের বহু একনিষ্ঠ কংগ্রেস কর্মী সমর্থকরা। অবশেষে কংগ্রেস কর্মী শান্তি সাহা, শীতল সাহা, বাদল দেব এই তিনজনের মৃতদেহ নিয়ে আসা হয় তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে এবং সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দশমিঘাট এলাকায় সেখানেই নৃশংসভাবে খুন হওয়া তিনজনকে দাহ করা হয়েছিল বলে জানান। বানানো হয়েছিল ইট বালি সিমেন্টের শহীদ বেদী। বর্তমানে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে তিনজনের সেই সমাধিস্থল এমনটাই অভিযোগ শোকাহত পরিবার মহলে। বছরে একবার সেই কংগ্রেস কর্মীদের সমাধিস্থলে এসে শ্রদ্ধা জানানোর প্রয়োজন টুকুও বোধ করে না কংগ্রেস দল।তবে তৎসময়ের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সিপিআইএম আমলে খুন অপহরণ করা হয়েছিল ২৯ কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায়। ২০০৩ সালের বিধানসভার নির্বাচনের গণনা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে খুন করা হয়েছে মধ্য কৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বালুছড়া এলাকায় কংগ্রেসের কর্মচারী নেতা ব্রজেন্দ্র দাস ও কংগ্রেসের বুথ প্রেসিডেন্ট নিরঞ্জন পাল কে। চাকমা ঘাট এলাকা থেকে সিপিআইএম আমলে নিখোঁজ হয়েছিল কংগ্রেস নেতা অশ্বিনী দেবনাথ।যার খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। তবে প্রশ্ন একটা থেকেই যায়, যে কংগ্রেস দলের হয়ে কংগ্রেসের প্রচার অভিযান চালিয়েছিল তারাই সিপিআইএম আমলে খুন হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না একাংশ কংগ্রেস কর্মীরা। আবার কংগ্রেস জোট আমলে হামলা ও খুনের ঘটনা সিপিআইএম কর্মীদের তাও মেনে নিচ্ছে না একাংশ সিপিআইএম কর্মীরা। রাজনৈতিক তথ্য বিজ্ঞ প্রবীণ মহলের অভিমত,,,, বিগত দিনে সিপিআইএম দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে যে সকল একনিষ্ঠ কংগ্রেস কর্মীরা নিজেদের জীবন বলিদান দিয়েছেন। তাদের সেই বলিদান কি ছিল বৃথা। এমন প্রশ্ন উঠাটা স্বাভাবিক,,,, কারণ, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস কর্মীদের সেই আত্মবলিদান কে বৃথা করে, কংগ্রেস কর্মীদের হত্যাকারী সেই সিপিআইএমের সঙ্গে এ রাজ্যে জোট করেছে কংগ্রেস দল। এটা কি মেনে নিতে পারবে এ রাজ্যবাসী, এটা কি মেনে নিতে পারবে খুন হওয়া সেই কংগ্রেস কর্মীদের পরিবারগুলো? সেই সিপিআইএম -এর বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের জীবনটুকু পর্যন্ত বলিদান দিয়ে দিয়েছিল শান্তি, শীতল, বাদলের মত বহু কংগ্রেস কর্মীরা। আর সেই সিপিআইএমের সঙ্গেই কংগ্রেস দলের জোট। ছি ছি ছি! তবে বহলাই বাহুল্য, কিছু স্বার্থান্বেষী কংগ্রেস নেতাদের ক্ষমতার লোভের কাছে আজ হার মেনে গেল সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজের জীবন বলিদান দেওয়া শান্তি, শীতল, বাদলের মত হওয়া বহু কংগ্রেস কর্মীরা। বাম কংগ্রেসের এই অনৈতিক জোটের শেষ পরিণতি মোটেও ভালো হবে না বলে মনে করছে রাজনৈতিক তথ্য বিজ্ঞ প্রবীণ মহল।