মানবিকতার পাশাপাশি যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলায় রাজ্যে অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী বাহিনীর স্বেচ্ছাসেবকরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের আত্মত্যাগের নিদর্শন হিসেবেই সারা দেশে প্রতিবছর ৬ ডিসেম্বর অসামরিক প্রতিরক্ষা এবং গৃহরক্ষী দিবস উদযাপন করা হয়। রাজ্যেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী দিবস পালন করা হয়। আজ অরুন্ধতীনগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবছর আমরা ৬১তম সর্বভারতীয় অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী দিবস হিসাবে পালন করছি। ভারতে ১৯৬৮ সালে অসামরিক প্রতিরক্ষা আইনী মর্যাদা পেলেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ত্রিপুরায় অসামরিক প্রতিরক্ষা বিষয়টি স্বীকৃতি পায়। ২০২১ সাল পর্যন্ত অসামরিক প্রতিরক্ষা শুধুমাত্র আগরতলা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে সিভিল ডিফেন্স আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এই আইনকে সংশোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আগে অসামরিক প্রতিরক্ষা পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০১৯ সালে এটি রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তর ও পরবর্তীতে ২০২০ সালে রাজস্ব দপ্তরের কাছে স্থানান্তরিত হয়। ত্রাণ পূর্নবাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের অধিকর্তাকে রাজ্যের অসামরিক প্রতিরক্ষা অধিকর্তার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ২০০০ জন প্রশিক্ষিত অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য নোডাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সেন্ট্রাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং জেলা পর্যায়ে চিহ্নিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে অগ্নি ও জরুরী পরিষেবা দপ্তর অসামরিক প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজ্যে আগামীদিনে অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের কাছে পৌঁছবে। অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবকদের সক্রিয় সহযোগিতা নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের উৎসাহিত করার জন্য রাজ্য সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদেরকে স্বাভাবিক এবং দুর্যোগ উভয় পরিস্থিতিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহার করা হবে। অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবকদের মতো রাজ্যের সমস্ত জেলায় আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবকদের মত আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকরাও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমাজের জন্য সংঘবদ্ধ শক্তি। বর্তমানে রাজ্যে ১ হাজার প্রশিক্ষিত আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে গৃহরক্ষী বাহিনীর সদস্য রয়েছেন ৪৬০ জন, যার মধ্যে ৪০ জন মহিলা গৃহরক্ষী। এই গৃহরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োজিত রয়েছেন এবং সততা ও নিষ্ঠার সাথে কর্তব্য পালন করছেন। এই কর্তব্য পালন করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত ১০ জন গৃহ। রক্ষী দেশের সেবায় আত্মবলিদান করেছেন। গৃহরক্ষীদের কর্তব্যনিষ্ঠা, কর্তব্যপরায়ণতা ও আর্থিক সমস্যার কথা বিচার করে রাজ্য সরকার ২০২২ সাল থেকে তাদের মাসিক বেতনক্রম বৃদ্ধি করে ১৯ হাজার ১৪০ টাকা করেছে। তাছাড়া পেনশনের টাকা বৃদ্ধি করে মাসিক ৭৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। এছাড়া ৩ হাজার ৮৯৫ টাকা পোশাক ভাতা প্রদানের ব্যবস্থাও কার্যকর করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবকরা, গৃহরক্ষী এবং উর্দি পরিহিত কর্মীরা সারা বছর ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত। শুধু তাই নয় অসামরিক প্রতিরক্ষা এবং আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকগণও এখন নিয়মিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্য, জনসচেতনতা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের অন্যান্য কার্যক্রমে নিযুক্ত রয়েছেন। জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার মত কার্যকলাপের জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের জেলা, রাজা এবং জাতীয়স্তরেও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতিতে আমাদের অসামরিক প্রতিরক্ষা এবং আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবকরা নিরলস কাজ করেছেন। এরজন্য আমরা গর্ববোধ করি। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। অসামরিক প্রতিরক্ষা ও গৃহরক্ষী দিবস উপলক্ষ্যে রাজ্যবাসীর প্রতি দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং রাজ্যের রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নুর শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করে শুনান পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক সুভাষ চন্দ্র সাহা। অনুষ্ঠানে টি এস আর, হোমগার্ড, সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের জওয়ানরা কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। অনুষ্ঠান শেষে এস ডি আর এফ, হোমগার্ড, সিভিল ডিফেন্স এবং ফায়ার সার্ভিসের জওয়ানরা বিপর্যয় মোকাবিলার উপর মহড়া প্রদর্শন করেন।