Friday, October 18, 2024
বাড়িখবরলাইফ স্টাইলস্বামী পূর্ণাত্মানন্দের জীবনী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো

স্বামী পূর্ণাত্মানন্দের জীবনী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো

. কিচ্ছু করার নেই ;
“তাঁর” ইচ্ছা ছাড়া কিছু হয় না ?

.

” স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছিলাম, খবরের কাগজে নামও বেরিয়েছিল। বাবা বলেছিলেন: তুমি কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হবে। সেইভাবেই বাবা দাদার সাথে আমাকে কলকাতায় পাঠানোর ব‍্যবস্হা করলেন। সেই প্রথম আসছি কলকাতা।

আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে সাঁইথিয়া নামে বীরভূম জেলার এক ছোট্ট মফস্বল শহরে এসে ট্রেন ধরতে হবে, সময় সকাল ৯:৪৫ মি: ; কিন্তু স্টেশনে পৌঁছলাম ৯:৫০ মি: । মিস করলাম ট্রেন,ভাবছি কি করব ?
মামা (হেডমাষ্টার ছিলেন) আমাকে বলেছিলেন, সাঁইথিয়ায় একটি নতুন কলেজ শুরু হয়েছে —— অভেদানন্দ মহাবিদ‍্যালয় । শ্রীরামকৃষ্ণ পার্ষদ স্বামী অভেদানন্দের শিষ‍্য স্বামী সত‍্যানন্দজীর প্রেরণায় গুরুর নামে তাঁর শিষ‍্য স্বামী কৃষ্ণানন্দজীর চেষ্টায় এই কলেজটি শুরু হয়। প্রসঙ্গত: কাগজে নাম দেখে ঐ কলেজের প্রিন্সিপ‍্যাল আমার স্কুলের হেডমাষ্টার (মামা) কে একটি চিঠি দিয়ে বলেছিলেন, ‘ঐ ছেলেটাকে আমাদের চাই’ ! ট্রেন যেহেতু আরো এক ঘন্টা পরে, তাই দাদাকে ভয়ে ভয়ে বললাম: দাদা, এখানেই তো ঐ কলেজটা, চল না একবার দেখে আসি। ‘অনিচ্ছা’ সত্ত্বেও বাবার হুকুম না শুনেই ঐ কলেজে যাওয়া, দূর থেকেই দেখছি কলেজ বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে। কলেজে ঢুকতে যাব, একজন সন্ন‍্যাসী এসে #খপ করে আমার হাতটি ধরলেন # !!

এই প্রথম গেরুয়া ধুতি পাঞ্জাবী পরা সাধু দেখলাম! সন্ন‍্যাসী বললেন: এই, ‘তুই না ঐ ছেলেটা, খবরের কাগজে যার নাম বেরিয়েছে?’
আমি বললাম: ‘হ‍্যাঁ’ !
‘চ-ল’ বলে আমাকে টেনে নিয়ে চললেন ……
সোজা ভর্তি করে বলে দিলেন, অমুক তারিখ থেকে ক্লাস শুরু হবে ….. ভর্তি হয়ে গেলাম সাঁইথিয়া অভেদানন্দ কলেজে । অলক্ষ‍্যে “তিনি” হাসছিলেন, কারণ ঐ #খপ করে ধরা থেকেই শুরু হল পরবর্তী জীবন ।

যখন কলেজে এলাম তখন জানলাম, ঐ #খপ করে হাত ধরা সন্ন‍্যাসীটিই স্বামী কৃষ্ণানন্দ মহারাজ ——– ডা: কে. ডি. রায় —— ফিজিক্স এর বিখ‍্যাত প্রফেসর, কলেজের ফাউন্ডার প্রিন্সিপ‍্যাল। কি যে স্নেহ পেয়েছি, বুঝিয়ে বলতে পারব না। প্রথম জীবনে সন্ন‍্যাসীর প্রেম, সে যে কী ভয়ঙ্কর তা ক্রমে টের পেয়েছি। ওঁরাই আমার জীবনকে পরে নিয়ণ্ত্রণ করবেন । কলেজে পরীক্ষায় ফল ভাল করলাম, খবরের কাগজে আবার নাম বের হল। বর্ধমান বিশ্ববিদ‍্যালয়ে দ্বিতীয় হলাম। কেষ্টদা —- স্বামী কৃষ্ণানন্দ বা ডা: কে.ডি.রায়কে আমরা ‘কেষ্টদা’ বলে ডাকতাম। তিনি বললেন : ‘দেখ, আমার ইচ্ছা তুই নরেন্দ্রপুরে ভর্তি হ। আমার শরীরটা ভাল নেই, নইলে আমি নিজে স্বামী লোকেশ্বরানন্দের কাছে নিয়ে গিয়ে তোকে ভর্তি করে দিতাম। কিন্তু তোর সঙ্গে ধ‍্যান( স্বামী ধ‍্যানানন্দ) যাবে। ও বরানগরে আমাদের মঠে থাকবে।’
আমি তখনো নরেন্দ্রপুর বা লোকেশ্বরানন্দ কারোর নাম শুনিইনি। অথচ এই দুটি নাম গেঁথে যাবে আমার জীবনের সাথে পরবর্তী কালে ……
বাবা চেয়েছিলেন ভর্তি হই প্রেসিডেন্সীতে, তখন নকশাল আন্দোলন চলছে। ভর্তিও হলাম, কিন্তু আমার এক জ্ঞাতি কাকা প্রেসিডেন্সীতে কেমিষ্ট্রির বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। তিনি বললেন, এখানে একেবারেই পড়াশোনা হয় না, তুই বরং নরেন্দ্রপুরে ভর্তি হয়ে যা। কেষ্টদাও বলেছিলেন, আবার কাকাও বললেন।

আমি গেলাম কাঁচের মন্দিরে। কেষ্টদা বলে দিয়েছিলেন, তাই ধ‍্যানদা (স্বামী ধ‍্যানানন্দ) আমাকে নরেন্দ্রপুরে নিয়ে গেলেন। অনেক বছর আগের কথা …… ভর্তি হলাম নরেন্দ্রপুরে, ক্রমে সান্নিধ‍্যে এলাম স্বামী লোকেশ্বরানন্দজীর । সেখান থেকেই আজ এখানে। কিন্তু আমার জীবনের ঐ অধ‍্যায়টি যদি না থাকত, এঁরা যদি না থাকতেন ,আমি রামকৃষ্ণ মিশনেই আসতে পারতাম না। কোথায় যে ভেসে যেতাম, কি হতো কে জানে ……..
আমার মনে পড়ে, সেই যখন প্রার্থনা হতো সাঁইথিয়ার কলেজের হোষ্টেলে, ভোর বেলায় আরতির গান, থাকতেন এই ধ‍্যান দা, কেষ্ট দা রা ….. হত স্বামী সত‍্যানন্দ রচিত , ‘জীবনপদ্মে স্পন্দিত হোক রামকৃষ্ণ-সারদা নাম’ এই গান। যখনই এই গানটি শুনি, তখনই মনের মধ‍্যে শিহরণ হয়, নষ্টালজিয়ায় আক্রান্ত হই ….. সে এক আবেগময় অনুভূতি, ফেলে আসা দিনগুলির প্রতি ভালবাসা ……………. “

শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন না, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া জগতে কিচ্ছু হয় না, এমনকি গাছের পাতাটিও নড়ে না। এটা আমি বিশ্বাস করি।

“আমি” ? ,
“আমি” কে বলুন তো ??

আমি-ই স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ ……..

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

18 + 13 =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য