স্বৈরাচারী বিজেপি সরকারকে হটাতে শুক্রবার দুপুরে সিপিআইএম খোয়াই বিভাগীয় যুব সংগঠন এবং উপজাতি যুব সংগঠনের ডাকে খোয়াই শ্রীনাথ বিদ্যানিকেতন মাঠে প্রকাশ জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকার, এছাড়া এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী তথা উপজাতি গণ মুক্তি পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঘোর দেববর্মা, সিপিএম খোয়াই জেলা কমিটির সম্পাদক রঞ্জিত দেববর্মা ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন রাজ্য কমিটির সভাপতি পলাশ ভৌমিক, যুব ফেডারেশনের জেলা সম্পাদিকা মল্লিকা শীল, উপজাতি যুব ফেডারেশনের খোয়াই জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য বীরেশ দেববর্মা খোয়াই বিধানসভার বিধায়ক শ্রীনির্মল বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা। উল্লেখ্য গত 2018 বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএম দলের পরাজয়ের পর ২০২৩ এর নির্বাচনকে সামনে রেখে সিপিএম দলের পক্ষ থেকে এই প্রথম খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রে প্রকাশ্য নির্বাচনী জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এখানে উল্লেখ্য গত প্রায় পাঁচ বছরের ভিতর খোয়াই বিধানসভা এলাকায় সিপিএম দলের পক্ষ থেকে কোন ধরনের প্রকাশ্য জনসমাবেশ সংঘটিত করতে পারিনি দলের উদ্যোগে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রের সব কয়টি রাজনৈতিক দল আদা জল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার লক্ষ্যে। এতে করে কোন রাজনৈতিক দলই তাদের জমি ছাড়তে নারাজ এটা বুঝতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হচ্ছে না। খোয়াইতে শাসকদলকে বাদ দিলে বিরোধীদল গুলির মধ্যে সিপিআইএমের প্রচার অভিযান এবং জনসংযোগ সব থেকে বেশি। শুক্রবার সিপিএম দলের প্রকাশ্য জনসমাবেশ কে কেন্দ্র করে সিপিআইএম খোয়াই বিভাগীয় যুবক সংগঠনের উদ্যোগে খোয়াই মহকুমা এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত করা হয়। তারমধ্যে ঘরোয়া সভা বাজারসভা পথসভা বিভিন্ন কর্মসূচি করা হয়। এই বিভিন্ন কর্মসূচি গুলির সুফল কিন্তু আজ পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রর বিভিন্ন এলাকা থেকে ভালো সংখ্যক কর্মী সমর্থকের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয় এই জনসমাবেশে। এই জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা ত্রিপুরা বিধানসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা শ্রী মানিক সরকার উনার দীর্ঘ আলোচনা তিনি বর্তমান শাসক দলের বিভিন্ন কাজ কর্মের দীর্ঘ সমালোচনা করেন। উনার আলোচনাতে তিনি তুলে ধরেন বর্তমান রাজ্য সরকার যে কাজকর্ম গুলি করছেন সেগুলি জনহিতকর নয় যেমন ২০১৮এর নির্বাচনের সময় বিজেপি দল মিথ্যা ও বুজরুকি ও জুমলা কথার উপর ভর করেই ক্ষমতা দখল করেছে। তবে তাদের এই বুজরকি আর জুমলা ২০২৩ সালে নির্বাচনে প্রতিফলিত করতে পারবে না বা তাদের রুটি ভিজবে না। পাঁচ বছরের বিজিপি শাসনকালে দুইজন মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্য চালাতে হয় এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে এদের ভিতর অনেক দুর্বলতা রয়েছে শুধু রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নয় খুদ দুর্বলতা প্রধানমন্ত্রীর ও রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মানিক সরকার। আর ই দুর্বলতার কারণেই প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের ওপর হামলা হুজ্জতি করা হচ্ছে। তাই নির্বাচন কমিশনকে কাজে লাগিয়ে বাঁকা পথে আবার ক্ষমতায় আসতে চাইছে বিজিপি সরকার কিন্তু এ হতে দেওয়া যায় না। এর জন্য একটি বড় অংশের জনগণকে এবং তাদের আত্মরক্ষার্থে একত্রিত হয়ে সরকার পাল্টানোর চিন্তা করতে হবে। এর জন্য একজোট হয়ে সবাইকে মাঠে নামতে হবে। এছাড়া তিনি এও বলেন রাজ্যের পরিস্থিতি বর্তমানে যে জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা নিয়ে রাজ্যের মানুষ খুবই চিন্তিত। বেকার যুবক যুবতীদের কোন ধরনের কর্মসংস্থান নেই । বেকারদের এবং কর্মচারীদের কথা চিন্তা করতে পারে একমাত্র বামফ্রন্ট সরকার শুধু তাই না রাজ্য শিক্ষা স্বাস্থ্য,পানীয় জল শিল্প বিদ্যুৎ রাস্তাঘাট যানবাহন সবকিছুরই পরিপূর্ণতা প্রদান করতে পারবে একমাত্র বামফ্রন্ট সরকার । আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলবার চেষ্টা করেন রাজ্যে বর্তমান সময়ে গণতন্ত্র বিপন্ন এ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে রাজ্যে জনগণের সরকার গঠনের প্রয়োজন, তাই তিনি ছাত্র যুবকদের উদ্দেশ্যে বলবার চেষ্টা করেন আত্মরক্ষার তাগিদে এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করার তাগিদে শক্ত হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া এই জনসমাবেশে বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস প্রাক্তন মন্ত্রী অঘোর দেববর্মা জন সমাবেশে বক্তব্য প্রদান করেন। সমাবেশে ভালো সংখ্যক উপজাতি অংশের মা বোনদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। জনসমাবেশে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বক্তব্য শুনে খোয়াই এর বুদ্ধিজীবী মহল এবং রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য ছিল এইযে স্বৈরাচারী শাসনকে উচ্ছেদ করতে মানিক সরকার যে দীর্ঘ বক্তৃতা প্রদান করেন তাতে সরকারের দুর্নাম করলেও তথ্য মূলক তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরতে পারেননি অথচ এই বামফ্রন্ট সরকারই গত পাঁচ বছর ধরে বিজিপি সরকারের সমালোচনা করে আসছিলেন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ে। অথচ রাত পোহালেই ২০০৩ সালের বিধানসভা নির্বাচন নির্বাচনকে সামনে রেখে খোয়াইতে প্রথম জন সমাবেশ করলেও মানিক সরকারের কাছে আরো সুযোগ ছিল বিজেপি সরকারের প্রত্যেকটি ভুল কাজের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে জনসমক্ষে তুলে ধরা যাতে করে তারা যেই জিনিসটা চাইছিলেন নির্বাচনের লড়াই করতে গিয়ে সেই জিনিসটা জনসমক্ষে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠতে পারতো। কিন্তু তিনি তা করতে পারেননি বলে মন্তব্য। তবে এই ধরনের সুযোগ মানিক সরকার কি আগামী দিন খোয়াইতে পাবেন কিনা বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন। কারণ জনসমাবেশে আসা দলীয়কর্মী সমর্থক সহ ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রোতাগণ মুখিয়ে ছিলেন মানিক সরকারের কাছ থেকে আরো কিছু ভালো শোনার জন্য কিন্তু তাদের সেই ভালো কথা গুলি সোনার বিষয়টা অধরাই রয়ে গেল বলে মনে করেন অনেকেই।