বাহাত্তর ঘন্টার মধ্যে ফের আরেকটি মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার, এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনা কৈলাসহরের মুর্তিছড়া গ্রামে। গত শুক্রবার কৈলাসহরের ছনতৈল গ্রামে একটি মৃতদেহ উদ্ধারের পর রোববার দুপুরে কৈলাসহরের মুর্তিছড়া চা বাগান সংলগ্ন সমরুরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতের সাত নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত বীরবল বাউরীর বাড়ির পুকুরে এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। রোববার দুপুরে বীরবল বাউরীর লোকজন পুকুরে স্নান করতে গিয়ে দেখে পুকুরের জলে এক মৃতদেহ ভাসছে। মৃতদেহ দেখে চিৎকার চেচামেচি শুরু হলে বাড়ির মানুষ সহ গ্রামের অন্যান্য মানুষরা ভিড় জমায়। খবর দেওয়া হয় কৈলাসহর মহিলা থানায়। খবর পেয়ে ডেপুটি মাজিস্ট্রেট মংগল দেববর্মা সহ কৈলাসহর মহিলা থানার পুলিশ অফিসার প্রতিভা সিনহার নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ এবং টি.এস.আর ঘটনাস্থলে হাজির হয়। প্রথমদিকে মৃতদেহের মুখ পুকুরের জলের নীচে থাকায় গ্রামের কেউ মৃতদহকে চিনতে পারেনি। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গ্রামের মানুষের সাহায্য নিয়ে মৃতদেহকে জল থেকে তোলে আনার পর গ্রামের সবাই মৃতদেহকে চিনতে পারে। বীরবল বাউরীর বাড়ির দুইশো মিটার দূরে মুর্তিছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন নং ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত শ্রীরাম ঘাটোয়ালের বাড়ি। মৃতদেহ জল থেকে তোলে আনার পর শ্রীরাম ঘাটোয়াল এবং উনার ছেলে কমল ঘাটোয়াল মৃতদেহটি দেখে চিনতে পারে। কমল ঘাটোয়াল সংবাদ প্রতিনিধিদের জানায় যে, মৃতদেহটি উনার মা কল্যানী ঘাটোয়ালের। মা কল্যানী ঘাটোয়াল কিছুটা মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। প্রায় সময়ই কল্যানী ঘাটোয়াল বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন এবং বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিন চার দিন পর বাড়িতে ফিরতেন। কমল ঘাটোয়াল আরও জানায় যে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কল্যানী ঘাটোয়াল বাড়ি থেকে বেরিয়ে সরকারি ন্যায্য মূল্যের দোকানে গিয়ে জিনিস ক্রয় করে সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে জিনিস রেখে ফের কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। পরের দিন শুক্রবার সকালে বীরবল বাউরীর বাড়ির লোকজন কমল ঘাটোয়ালকে জানায় যে, কল্যানী ঘাটোয়াল উনাদের বাড়িতে ছিলেন। বীরবল বাউরী উনাদের নিকট আত্মীয় বলেও জানান। তাই, কমল ঘাটোয়াল ভেবেছেন, কয়েক দিন থাকার পর মা বাড়িতে ফিরে আসবে। কিন্তু রোববার মার মৃতদেহ উদ্ধারের পরও বীরবল বাউরীর বাড়ির লোকজনের উপর কোনো ধরনের অভিযোগ করেন নি কমল ঘাটোয়াল কিংবা শ্রীরাম ঘাটোয়াল। কারণ, কমল জানান যে, মা মানসিক অবসাদগ্রস্ত থাকায় এর আগেও নিজ বাড়িতে কয়েকবার পুকুরের জলে পড়ে গিয়েছিলেন। মৃতদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে কৈলাসহর মহিলা থানার পুলিশ অফিসার প্রতিভা সিনহা জানান যে, পঞ্চাশ বছরের কল্যানী ঘাটোয়াল বাড়িতে ছিলো না এমন কোনো অভিযোগ থানায় করা হয়নি। মৃতদেহ উদ্ধারের পর মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ করা হয় নি। মৃত কল্যানী ঘাটোয়াল জলে পড়ে কিংবা মার্ডার করা হয়েছে কিনা প্রাথমিকভাবে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না বলে পুলিশ অফিসার প্রতিভা সিনহা জানান। তবে, এই মৃত্যুর পর গ্রামে কিছু গুঞ্জন শোনা যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে কল্যানী ঘাটোয়াল বাড়িতে না থাকায় কেন কল্যানীর পরিবার খোঁজ খবর করলো না? কিংবা থানায় অভিযোগ করা হলো না কেন? তাছাড়া, কমল ঘাটোয়াল যাই বলুক না কেনো, বীরবল বাউরীর বাড়ির লোকজন বলেছে যে, মৃত কল্যানী ঘাটোয়াল গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উনাদের বাড়িতে যাবার পর শুক্রবার সকালেই চলে গেছেন। তাহলে কমল ঘাটোয়াল কিভাবে বললো, শুক্রবার কল্যানী ঘাটোয়াল বীরবল বাউরীর বাড়িতে ছিলো? তাছাড়া, বীরবল বাউরীর বাড়ির মানুষজন কল্যানী ঘাটোয়ালকে উনাদের বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই চলে যাবার জন্য অনুরোধ করলে কল্যানী ঘাটোয়াল নিজ বাড়িতে যাবার জন্য রাজি হয়নি। কারন, নিজ বাড়িতে গেলে ছেলে কমল ঘাটোয়াল মারধোর করবে বলেও জানিয়েছিলো। যাইহোক, পুলিশ এই ঘটনায় কি ভুমিকা পালন করে এটাই এখন দেখার বিষয়। কারন মৃত কল্যানী ঘাটোয়ালের স্বামী শ্রীরাম ঘাটোয়াল এবং ছেলে কমল ঘাটোয়ালের কোনো অভিযোগ নেই কিংবা কল্যানী ঘাটোয়াল মৃত্যুর কারন জানার জন্য পুলিশের কাছে কোনো ধরনের অভিযোগ করতে রাজি নন।



