Thursday, December 4, 2025
বাড়িখবরশীর্ষ সংবাদত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পরিষদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় মাধ্যমিকে খোয়াই জেলা থেকে যুগ্ম সপ্তম খোয়াই...

ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পরিষদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় মাধ্যমিকে খোয়াই জেলা থেকে যুগ্ম সপ্তম খোয়াই গণকি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের ছাত্র বিপ্লব দেবনাথ, তার প্রাপ্ত নম্বর 489,

কথায় বলে মনের ইচ্ছা শক্তি যদি প্রবল থাকে তাহলে যে কোনো বাধা-বিপত্ত ও দারিদ্রতাকে পিছনে ফেলে নিজে লক্ষে যে পৌঁছানো যায় এরই এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বিপ্লব দেবনাথ। মাধ্যমিক পরীক্ষায় চলতি বছরে যুগ্মভাবে সপ্তম স্থানাধিকারী হন খোয়াই জেলা থেকে। খোয়াই গণকি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর মাধ্যমিকে 489 নম্বর সহ প্রতিটি বিষয়ে লেটার মার্ক্স পেয়ে সপ্তম স্থান পান। এই খবরে মহকুমা শহ জেলাবাসী ব্যাপক খুশি। খোয়াই তবলা বাড়ি এলাকার মধ্যগনকি গ্রাম পঞ্চায়েতের 2 নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত বীরেন্দ্রনাথের তৃতীয় ছেলে বিপুল দেবনাথ। যে নাকি খোয়াই গনকি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয় থেকে চলতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় লিখিত পাঁচশত নম্বরের মধ্যে যুগ্মভাবে 489 নম্বর পেয়ে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। শতকরা নম্বর ছিল 97.8%। এক সাক্ষাতে বিপুল দেবনাথ এর মা প্রণতি দেবনাথ বলেন অনেক দারিদ্রতার মধ্যে দিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করিয়েছেন। ছোট ক্লাস থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র ছিল সে বিপুলের বয়স যখন সাড়ে পাঁচ কি ছয় বছর তখন তার পিতা বীরেন্দ্র দেবনাথ যিনি একজন দিনমজুর ছিলেন হঠাৎ ই পক্ষাঘাতে উনার মৃত্যু হয়। আর এই ঘটনায় পরিবারের মাথায় বাজ পড়ে। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই রয়েছে পিতার রোজগার এই সংসার চলত , ঘরের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারিয়ে সবাই দিশেহারা। তখন বাধ্য হয়ে প্রণতি দেবনাথ দিনমজুরের কাজে নেমে পড়েন পাশাপাশি বিপুলের বড় ভাইও ছিল খুব মেধাবী ছাত্র কিন্তু অভাবের তাড়নায় সেও লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সংসারের হাল ধরতে দিনমজুরের কাজে লেগে পড়ে। এরপরও যেন তাদের সংসারের অভাব কিছুতেই মিঠছেনা দেখে তখন বাধ্য হয়ে বিপুলের মেজ ভাইও দিনমজুরের কাজে লেগে যায় সংসারের হাল ধরতে। অন্যদিকে তাদের ছোট ভাই বিপুল মেধাবী ছাত্র দেখে বাড়ির সবাই ঠিক করে সবাই দিনমজুরের কাজ করবে অন্যদিকে বিপুল তার পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। বিপুলকে উচ্চ শিক্ষা দেওয়ার জন্য দিনমজুরের কাজ করতে গিয়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির ফলে তাদের মা প্রণতি দেবনাথ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই দেখে বিপুলের বড় দুই ভাই শক্ত হাতে সংসারের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। এত অভাব অনটনের মধ্যে দিও বিপুল তার ভাইদের উৎসাহে তার লেখাপড়া চালিয়ে যায়। বিপুলের মেধাকে লক্ষ্য তার স্কুলের স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত মল্লিক নাকি বিপুল কে উৎসাহিত করার পাশাপাশি নানাভাবে শিক্ষার মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন স্কুলে বলে জানান বিপুল। এছাড়া বিপুল চারজন গৃহ শিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেছে সেই চারজন গৃহশিক্ষক রাও বিপুল কে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করেছেন। তাদের সাহায্য ও সহযোগিতার কারণেই এত দারিদ্রতার মধ্যেও বিপুল দেবনাথ আজ মাধ্যমিকে প্রথম দশ জনের মধ্যে একজন যুগ্মভাবে সপ্তম স্থানাধিকারী। বিপুল এর ফলাফলে তার পরিবারের লোক সহ তবলা বাড়ি এলাকার জনগণ ও ব্যাপক খুশি। পাশাপাশি বিপুলের মা প্রণতি দেবনাথ বলেন এত দারিদ্রতার মধ্যে থেকেও যে, ছেলে এমন ফলাফল করেছে তাতে তিনি খুবই খুশি উনার কষ্টের ফল পেয়েছেন, প্রণতি দেবনাথ এও বলেন তাদের কষ্টের মান রেখেছে ছোট ছেলে বিপুল। এই বিষয়ে গণকি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা বিপুল দেবনাথের শিক্ষক সুজিত মল্লিক এক সাক্ষাতে বলেন উনার স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র বিপুল দেবনাথ ছিল খুবই মেধাবী ছাত্র এর পাশাপাশি নম্র ও ভদ্র সভাবের। সর্বদা স্কুলের শিক্ষকদের দেখানো পথে চলে এসেছে। খোয়াই জেলা থেকে এই স্কুলের ছাত্র বিপুল দেবনাথ মাধ্যমিক পরীক্ষায় যুগ্মভাবে সপ্তম স্থান পাওয়ার কারণে স্কুলের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছে। সাক্ষাতে বিপুল দেবনাথ বলেন সে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইছে অন্যদিকে বিপুলের মা ছেলের ইচ্ছে কে মান্যতা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ছেলেকে পড়াতে ইচ্ছুক। তবে এত দারিদ্রতার মধ্যে পারবেন কিনা তা ঠিক জানেন না তাই তিনি সংবাদ মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে সরকারের কাছে আর্জি জানাচ্ছেন যাতে করে প্রণতি দেবীর মেধাবী ছেলে বিপুল দেবনাথ কে লেখা পড়ার ক্ষেত্রে সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় অদূর ভবিষ্যতে আরো ভালো ফলাফল করার লক্ষ্যে। যাতে করে অভাবের তাড়নায় বিপ্লবকে লেখাপড়া ছেড়ে অন্যান্য ভাই দের মতন দিন মজুরের কাজে যেতে না হয়। সেই বিষয়ে একটু দৃষ্টি দিয়ে দেখার জন্য বিনম্রভাবে আবেদন করছেন বিপুলের মা রাজ্য সরকারের কাছে। এছাড়া এ বছর ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পরিষদের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে খোয়াই মহাকুমার কয়েকটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভাল ফলাফল করেছে যদিও তাদের কোন রেঙ্ক নেই প্রথম 10 জনের মধ্যে তবুও আশানুরূপ ভাল ফলাফল করেছে। মাধ্যমিকে খোয়াই দ্বাদশ শ্রেণী বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে যারা এরা হলো ভূমিকা দে ওর প্রাপ্ত নম্বর 481, অর্চিতা চক্রবর্তী 480 নম্বর,, ভূমিকা দে নামে আরেক ছাত্রী ওর প্রাপ্ত নম্বর 476, বর্ষা দাস 473,, শ্রীপর্ণা সেন 471 নম্বর,, মোনালিসা শুক্ল বৈদ্য 465 নম্বর একই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণীর ফলাফলে কলা বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে মনীষা বণিক প্রাপ্ত নম্বর 474,,, মনিকা দে 470,, মনিকা পাল 467,, পিয়া সাহা 463 এবং বিজ্ঞান বিভাগে একজন সুমনা নাথ প্রাপ্ত নম্বর 463,, এছাড়া মাধ্যমিকে জাম্বুরা দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় থেকে স্বপন দেবনাথ 486 নম্বর। এছাড়া খোয়াই সরকারি দ্বাদশ শ্রেণি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে শুভম পাল 473 নম্বর, একই স্কুলের দা দেশের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে শুভম পাল 446 নম্বর,, কলা বিভাগ থেকে অমিক দেবনাথ 447 নম্বর, সৈকত নাথ 444 নম্বর, এক কথায় খোয়াই জেলার মধ্যে মাধ্যমিকে বিপুল দেবনাথ ছাড়া অন্যান্য স্কুলে কোন রেঙ্ক না থাকলেও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে মহাকুমার স্কুলগুলিতে ফলাফল ভালো বলে জানান শিক্ষকরা।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

1 × four =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য