তেলিয়ামুড়া প্রতিনিধি:
তেলিয়ামুড়ার হাওয়াইবাড়ি এলাকার ২৭ বছরের তরুণী গৃহবধূ রাখি সাহার রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা শহর। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা, মাঝখানে চিরতরে থেমে গেল একটি প্রাণ। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃতার মা, শোকস্তব্ধ গোটা পরিবার।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত কিছুদিন ধরে আগরতলা থেকে আগত চিকিৎসক ডঃ টি কে সরকারের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন রাখি সাহা। বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষার পর জানানো হয়, রোগীর ফুসফুসে জল জমেছে। আজ দুপুরে তাকে পুনরায় চিকিৎসকের তেলিয়ামুড়ার চেম্বারে আনা হয়। চিকিৎসক জানান, তিনি বিশেষ যন্ত্রপাতি এনেছেন এবং চেম্বারে ফুসফুস থেকে জল বের করে দিতে পারবেন। এই চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় ৩০০০ টাকা।
চিকিৎসাকালীন সিরিঞ্জের মাধ্যমে বুক থেকে তরল পদার্থ বের করা হয়। চিকিৎসা শেষে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই রাখির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরবর্তীতে তড়িঘড়ি করে তাকে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডঃ অনির্বাণ ভৌমিক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয় শহর জুড়ে। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন — এমন জটিল চিকিৎসা কেন একটি অপ্রস্তুত চেম্বারে করা হল? কেনই বা তাকে সরকারি হাসপাতালে রেফার করা হল না? অর্থের লোভেই কি এভাবে রোগীর জীবন নিয়ে খেলোয়া করা হল?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডঃ টি কে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই তেলিয়ামুড়ার ‘জনপ্রিয় মেডিকেল হল’-এ চেম্বারে বসে চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন। পূর্বেও তার বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ তুলেছিলেন। বেসরকারি এই ধরনের অবৈধ চিকিৎসা চেম্বার গুলির বিরুদ্ধে প্রশাসনের নজরদারি প্রায় অনুপস্থিত থাকায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
এদিন সন্ধ্যায় ঘটনার খবর পেয়ে তেলিয়ামুড়ার বিধায়িকা কল্যাণী সাহা রায় সরাসরি জনপ্রিয় মেডিকেল হলে পৌঁছান। তিনি মেডিকেল হলের কর্ণধার সুজিত বণিকের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিস্তারিত ঘটনার জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে পুলিশ সুজিত বণিককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বিধায়িকা কল্যাণী সাহা রায় সাংবাদিকদের বলেন,
“এই ধরনের ঘটনা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। যারা চিকিৎসা করেন তারা মানুষের কাছে ভগবানের মতো। কিন্তু তারা যদি গরিব ও সরল মানুষদের সঙ্গে ছলনা করেন, প্রতারণা করেন, তাহলে তা কখনোই বরদাস্ত করা হবে না। প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেবে।”
এ বিষয়ে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডঃ অনির্বাণ ভৌমিক বলেন,
“রোগীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফুসফুস থেকে জল বের করার চিকিৎসা চলছিল আগরতলার চিকিৎসক টি কে সরকারের অধীনে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই জানা যাবে।”
এই ঘটনা ফের একবার চিকিৎসা ব্যবস্থার অন্ধকার দিক ও নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি চিকিৎসা চেম্বার ব্যবসার বিপদজনক চিত্র তুলে ধরল। কে নেবে এই অকাল মৃত্যুর দায়? চিকিৎসকের অবৈধ সিদ্ধান্ত, নাকি প্রশাসনের উদাসীনতা? গোটা তেলিয়ামুড়া আজ উত্তর খুঁজছে সেই প্রশ্নের।
বর্তমানে মৃতদেহটি তেলিয়ামুড়া মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই প্রশাসন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু করেছে।