খোয়াই প্রতিনিধি ১২ ই অক্টোবর…….বাঙ্গালীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব হল দুর্গাপূজা,যা মাত্র আর কয়েকদিন পর হতে চলেছে। আর এই পূজা কে কেন্দ্র করে বাঙ্গালীদের মধ্যে এক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়।একটা সময় ছিল পূজা মানেই ঢেং কুর কুর বাদ্দি বাজে এর মানে ঢাক না থাকলে কিসের পূজো তা মনে হতো।শুধু দুর্গাপূজা কেন বাঙ্গালীদের এমন অনেক পূজা-পার্বণ রয়েছে যেখানে ঢাকের বাদ্দি না বাজলে পুজো বলেই মনে হয় না।পুজো মানেই ঢাক,আর এই ঢাকের বাদ্দিতে শরীরে দোলা লাগেনি এমন মানুষ হয়তো খুবই কম পাওয়া যাবে।কিন্তু বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান প্রযুক্তির দ্বারা তৈরি আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের কারণে বাঙ্গালীদের বিভিন্ন পূজা পার্বণে ঢাকি বাদকদের কদর বর্তমান সময়ে নেই বললেই চলে।যার ফলে দেখা যাচ্ছে বিগত কয়েক দশক ধরে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের কারণে বাঙালিদের বিভিন্ন পূজা পার্বণে ঢাকি বাদকরা তাদের সেই কদর হারিয়ে ফেলেছে বা নেই বললেই চলে।যার ফলে ঢাকি সম্প্রদায় তাদের এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে গিয়ে এবং নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে।এই বিষয়ে খোয়াই মহাকুমার কয়েকজন ঢাকি বাদকদের সাথে কথা বললে ওরা জানান বর্তমান সময়ে তারা কি পরিস্থিতিতে রয়েছেন বিশেষ করে দুর্গাপূজার প্রাক মুহূর্তে।এই বিষয়ে ঢাকি বাদক পরিমল ঋষি দাসের সাথে কথা বললে উনি জানান বর্তমান সময়ে ঢাকীদের কদর নেই বললেই চলে।বর্তমান সময়ে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের কারণে বিভিন্ন পুজা পার্বণে তাদেরকে কেউ ডাকে না বা ভাড়া করে নেয় না।সবাই বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড সিস্টেম এবং বক্স নিয়েব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।যার ফলে ঢাকি বাদকরা বর্তমান সময়ে তাদের সেই পেশা নিয়ে বে কায়দায় রয়েছে।বিশেষ করে দুর্গাপূজাতে অনেক ক্লাব তাদেরকে আগের মত পুজোর দিনগুলিতে ঢাক বাজানোর জন্য ডাকে না।তবে ঢাকি বাদক পরিমল ঋষি দাস এও বলেন হাতে গুনা কয়েকটি ক্লাব রয়েছে যারা তাদের পুজোতে ঢাক বাজানোর জন্য ডেকে পাঠায় সেই পুরনো প্রথা হিসেবে।এরপরও বেশিরভাগ ঢাক ঢোল বাদকরা আজও অবহেলিত আধুনিকতার কাছে।ঢাকি বাদক পরিমল ঋষি দাস জানান বর্তমান সময়ে ৩০ থেকে ৪০ জন ঢাকি বাদক রয়েছে খোয়াইতে যাদের বর্তমান সময়ে অবস্থা খুবই খারাপ এক কথায় হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসা সেই পুরনো সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে গিয়ে বর্তমান যুগে ঢাকি বাদকদের অস্তিত্ব শংকটাপণ্য।তাই ঢাকি পরিমল ঋষি দাস বলেন বিভিন্ন পুজা পার্বণে যদি সেই ঢাকিদের ভাড়া নেওয়া হয় তাহলে এরাও কিছু পয়সা পাবে তাতে তাদের সংসার চালাতে কিছুটা সাহায্য হবে এবং এই সংস্কৃতিটাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।নয়তো বা একদিন এই সংস্কৃতিটাই হারিয়ে যাবে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের কারণে।এ বিষয়ে আরো জানতে একজন ঢাক প্রস্তুতকারক বিভীষণ ঋষি দাস এর সাথেও কথা বলা হয় যে পূজার মরশুমে বিশেষ করে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কি পরিমান ঢাক বানান বা তৈরি করেন।এই প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই ঢাক প্রস্তুতকারী বিভীষণ ঋষি দাস বলেন আগের মতো আর বর্তমানে সে রকম কাজ পান না।বিভিন্ন আধুনিক সাউন্ড বক্সের কারনের ঢাক বানানোর কাজ বর্তমান সময়ে নেই বললেই চলে।উনি এও বলেন একটা সময় ছিল এই দুর্গাপূজা আসলেই নতুন ঢাক বা অন্যান্য ঢাক গুলিকে সারাইয়ের কাজ করতে গিয়ে দিনরাত এক করেও কাজ শেষ করতে পারতেন না।সেই জায়গায় দাড়িয়ে বর্তমান তাদের হাতে তেমন কোন কাজ নেই বললেই চলে।অতীত দিনের ষোল আনা কাজের মধ্যে চার আনা কাজ পান বর্তমান সময়ে।আধুনিক সাউন্ড বক্সের কারনে তাদের হাত থেকে বারো আনা কাজ চলে গেছে।যার ফলে বর্তমানে অস্তিত্বের লড়াইয়ের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঢাকি বাদক ও ঢাক প্রস্তুত কারকরা।ঢাক প্রস্তুতকারক বিভীষণ ঋষি দাস বলেন আমাদের সমাজের বিভিন্ন পূজা পার্বণে আদি বাদ্য যন্ত্র হলো ঢাক ঢোল যা সর্বদা পূজাতে ব্যবহার হত। কিন্তু বর্তমান সময়ের যুগের সাথে তাল মিলি সবাই আধুনিক সাউন্ড বক্স নিয়ে ব্যস্ত থাকে,তাতে করে বর্তমান সময়ে ঢাকিদের কদর কমে গেছে।আর বর্তমান সময়ে এই ঢাক সংস্কৃতিটার কদর নেই বললেই চলে যার ফলে চাহিদা ও নেই ,আর চাহিদা না থাকার ফলে বর্তমান সময়ে কাজও কম পান।এখানে সর্বশেষ একটি কথা বলতে হয় এখানে ঢাকি বাদক এবং ঢাক প্রস্তুত কারকদের কথায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে যে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম ও বক্সের কারণে বর্তমান সময়ে ঢাক ও ঢাকি বাদকদের অস্তিত্ব সংকটের মুখে।বিভিন্ন পূজা পারবনে যদি ঢাকিদের না আনা হয় তাহলে একদিন ঢাক সংস্কৃতিটাই সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।