রাজ্য সরকার কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ২০২২-২৩ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সক্রিয় সহযোগিতায় এই লক্ষ্য পূরণে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আজ সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় একথা জানান। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে এখন পর্যন্ত নিবন্ধিকৃত কৃষকের সংখ্যা ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ২৬৫ জন। বাকীদেরও এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্তির প্রক্রিয়া চলছে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে সুবিধাভোগী কৃষকদের ৪৯৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে সচিব জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার সমস্ত কৃষক, বর্গাদার, ভাগচাষীদের কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণ দেওয়ার প্রয়াস নিয়েছে। এই লক্ষ্যে রাজ্যের সমস্ত পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিগুলিতে বিশেষ কেসিসি সেচুরেশন ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত সাড়ে চার বছরে (২০১৮-১৯ থেকে সেপ্টেম্বর, ২০২২) রাজ্যে ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৬১৩ জন কৃষককে ১ হাজার ৩৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০২০-২১ থেকে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা রূপায়ণের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনায় প্রতি কানি জমি মাত্র ১০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে রাজ্যের ধান চাষীরা বীমা করার সুযোগ পাচ্ছেন। রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থে বর্তমান সরকার অধিকাংশ ধান চাষিদের এই বীমার আওতায় আনতে রাজ্য বাজেট থেকে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ সালে মোট ১১ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা সহায়তা ও সাবসিডি হিসাবে প্রদান করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে বিগত ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত মোট ৮ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৬৯ জন কৃষককে বীমার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৮-১৯ থেকে 2021-22 পর্যন্ত মোট ৮০ হাজার ৫৪১ জন কৃষককে ৫ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়া হয়েছে।সাংবাদিক সম্মেলনে সচিব জানান, রাজ্য সরকারের প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান সর্বাত্মকভাবে সফল করতে রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যেই দপ্তরের ওয়েবসাইট ও প্রতিঘরে সুশাসনের ডেসবোর্ড-এ দপ্তর সংক্রান্ত জনকল্যাণমুখী তথ্যাবলী সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রতিনিয়ত আপলোড করা হচ্ছে। তিনি জানান, গোমতী জেলার টেপানিয়া ব্লকে রাজ্যের প্রথম সম্পূর্ণভাবে মহিলা পরিচালিত ৩৮তম কৃষি মহকুমার শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্য সরকার কৃষি সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহিলাদের স্বশক্তিকরণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে চলছে। সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব জানান, সরকার ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, জোলাইবাড়ি, বি সি নগর, পোয়াংবাড়ি, নলছড় ও বামুটিয়া ব্লকে আরও ৫টি নতুন কৃষি মহকুমা এবং জম্পুইহিলে একটি নতুন হর্টি মহকুমা চালু করা হবে। তিনি জানান, বিগত বছরগুলির তুলনায় বর্তমান বছরের এখন পর্যন্ত সারা রাজ্যে ১৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তা সত্ত্বেও রাজ্যের ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ধান রোপনের কাজ শেষ হয়েছে যা কিনা আমন ধান চাষ হয় এমন জমির প্রায় ৯৭ শতাংশ। তিনি জানান, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ক্ষতিগ্রস্থ সমস্ত কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা এবং এস ডি আর এফ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এরমধ্যে ৪ হাজার ৭২৪ জন কৃষক প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতাধীন রয়েছেন, যা রাজ্যে ২০২০-২১ থেকে ‘মুখ্যমন্ত্রী ফসলবীমা যোজনা’ নামে রূপায়িত হয়ে আসছে এবং এই যোজনায় কৃষকরা মোট ৮৩ লক্ষ ৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়ে গেছেন। তিনি জানান, বাকী ৪১ হাজার ৫৮১ জন কৃষককে এস ডি আর এফ প্রকল্প থেকে ৭ কোটি ৪ লক্ষ ৫৮১ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ রাজ্য সরকার গ্রহণ করেছেন। তিনি জানান, সম্প্রতি রাজ্যের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরে ৬৩ জনকে নতুন কৃষি আধিকারিক পদে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে।



