রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কৃষি, পর্যটন, বন এবং সৌরশক্তি ব্যবহার এই ৪টি বিষয়কে রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য আত্মনির্ভর ত্রিপুরা, স্বয়ম্ভর ত্রিপুরা গঠন করা। রাজ্য সরকার ঘরে ঘরে রোজগার পৌঁছে দিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে। তাতে সাফল্য এসেছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৪০০ টাকা। আজ বাধারঘাটে কৃষি দপ্তরের প্রজেনি অর্চার্ডে দু’দিনব্যাপী রাজ্যভিত্তিক কমলা উৎসব এবং সেন্টার ফর ফ্লোরিকালচার অ্যান্ড ল্যান্ডস্কেপের উদ্বোধন করে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, অনেক আগে জম্পুই পাহাড়ে উৎপাদিত কমলাকে কেন্দ্র করে কমলা উৎসবের আয়োজন করা হতো। পরবর্তী সময়ে সেখানে কমলার উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় কমলা উৎসব উদযাপন বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে রাজ্যে কমলার উৎপাদন বাড়ছে। তাই নতুন করে কমলা উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্যুইন প্রজাতির আনারস, গন্ধরাজ লেবু, কমলা, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি জনপ্রিয় ফল আমাদের রাজ্যেই উৎপাদিত হচ্ছে। এসব ফলের চাহিদা দেশে-বিদেশেও বাড়ছে। এজন্য কৃষকদের বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানানো উচিত। কৃষকগণের জন্যই আমরা বিভিন্ন ফলের ও ফসলের স্বাদ গ্রহণ করতে পারছি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের আগে রাজ্যে প্রায় ৩ হাজার ৮৪৬ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হতো। উৎপাদন হতো প্রায় ১৬ হাজার ৫৩৮ মেট্রিকটন। গতবছর পর্যন্ত রাজ্যে ৫ হাজার ৬২০ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ করা হচ্ছে। উৎপাদন বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৩২৮ মেট্রিকটন। হেক্টর পিছু উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ৫০০ কেজি হয়েছে। বর্তমানে বড়মুড়া, আঠারোমুড়া, শাখান পাহাড়ে কমলাচাষ হচ্ছে। কমলা চাষের এলাকা আরও বাড়ানোর জন্য চেষ্টা চলছে। জম্পুইপাহাড়েও নতুন করে কমলা চাষ বাড়ানোর জন্য উন্নত প্রজাতির কমলা গাছের চারা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই ২২৮ হেক্টর পুরোনো কমলা গাছের বাগান নতুন করে করার জন্য হেক্টর প্রতি ২০ হাজার টাকা করে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী জানান, শুধু ফল চাষেই নয়, ফুল চাষেও রাজ্য আগের তুলনায় অনেক উন্নতি করেছে। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি জানান, ২০১৭ সাল নাগাদ রাজ্যে ফুলের চাহিদা ছিলো প্রায় ১ হাজার ১৭০ মেট্রিকটন।
বর্তমানে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ হাজার ৭০৪ মেট্রিকটনে দাঁড়িয়েছে। আগে ফুলের চাহিদার মাত্র ৩৫ শতাংশ রাজ্যে উৎপাদিত হতো। বর্তমানে চাহিদার প্রায় ৭৯ শতাংশ ফুল রাজ্যেই উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষি বিজ্ঞানীদের বলেছেন গবেষণাগারে কাজ করার পাশাপাশি কৃষি জমিতেও যেতে হবে। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে হবে তাদের কি প্রয়োজন। বর্তমানে সেভাবেই কাজ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের বিশেষ সম্মান দেখিয়েছেন। আমাদের রাজ্যেও কৃষকদের কল্যাণে বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করা হচ্ছে। কমলাচাষিদের কল্যাণেও রাজ্য সরকার সর্বদা পাশে থাকবে।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন বিধায়ক মিনারাণী সরকার। তিনি কমলা উৎসবের সাফল্য কামনা করেন এবং উৎসবে সামিল হতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় বলেন, বর্তমানে বড়মুড়া, কিল্লা, জম্পুইজলা প্রভৃতি স্থানে কমলা চাষ হচ্ছে। রাজ্য সরকার কমলাচাষিদের উন্নত প্রজাতির কমলা গাছের চারা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কৃষকদের আত্মনির্ভর করতে কমলা চাষের এলাকা আরও বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা দীপক দাস। তিনি বলেন, রাজ্যের ৩২টি কৃষি মহকুমা থেকে ১০০-এরও বেশি কমলাচাষি কমলা এবং অন্যান্য ফল নিয়ে এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা ফণীভূষণ জমাতিয়া। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কমলাচাষিদের প্রতিনিধি মৃণাল কলই।



