রাজ্যে জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ক্যুইন আনারসের চাহিদা বিশ্বের বাজারে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট একটি সময়ের পরিবর্তে বছরব্যাপী আনারসের চাষ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্টেগার্ড প্ল্যান্টিংয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আজ প্রজ্ঞাভবনে পঞ্চম সি.আই আই, ত্রিপুরা আনারস উৎসবের উদ্বোধন করে কৃষি ও কৃষক কল্যাণমন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা বলেন। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি-এর উদ্যোগে এবং রাজ্য সরকারের উদ্যান দপ্তরের সহযোগিতায় এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসব উপলক্ষ্যে ন্যারামেক, এফ.পি.ও. সহ বিভিন্ন সংস্থার আনারসের উৎপাদিত বিভিন্ন সামগ্রীর প্রদর্শনী স্টল খোলা হয়। কৃষিমন্ত্রী প্রদর্শনী স্টল পরিদর্শন করেন এবং কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বর্তমানে ৫৮ হাজার ৪৯১ হেক্টর এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করা হয়। এরমধ্যে ১১ হেক্টরেরও বেশি জমিতে কিউ এবং ক্যুইন প্রজাতির আনারস চাষ করা হচ্ছে। ফলে রাজ্যে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৭৪ হাজার মেট্রিকটন আনারস উৎপাদিত হচ্ছে। কিউ প্রজাতির আনারস প্রধানত ধলাই, উত্তর ত্রিপুরা এবং ঊনকোটি জেলায় বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়। ক্যুইন প্রজাতির আনারস পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় এবং সিপাহীজলায় বেশি পরিমাণে চাষ করা হয়। বিগত সরকারের সময়কালে রাজ্যের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আনারসের সঠিক মূল্য পেতো না। বর্তমান রাজ্য সরকার কৃষকদের তাদের উৎপাদিত আনারসের সঠিক মূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত আনারস যাতে সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠে তারজন্য দিল্লিতে, ইন্দোরে, বেনারসে ক্রেতা বিক্রেতা সম্মেলন করা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রাজ্যের ক্যুইন আনারস দেশ বিদেশে রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে ক্যুইন আনারসকে রাজ্যিক ফল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২০১৮-১৯ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত গত ৭ বছরে ৭৩ মেট্রিকটনের বেশি আনারস দুবাই, ওমান, কাতার, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এছাড়াও ১৫ হাজার মেট্রিকটন আনারস দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। ক্যুইন আনারস জি.আই, ট্যাগ লাভ করায় বাজারজাতকরণের সুবিধা হয়েছে। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মাধবরাও সিন্ধিয়া ক্যুইন আনারসকে গ্লোবাল ব্র্যান্ড বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এজন্য রাজ্য সরকার ১৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প শুরু করার চিন্তাভাবনা করছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বিগত ৭ বছরে রাজ্যের কৃষি সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাজ্য সরকার কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে নানা সহায়তা প্রদান করছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের কল্যাণে রাজ্য সরকার সবসময় তাদের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব ড. শৈলেশ কুমার যাদব, বিশ্বব্যাঙ্কের সিনিয়র এগ্রি বিজনেস স্পেশালিস্ট রাজ গাঙ্গুলি, নানসেই ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল প্রোডাক্টস ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অদ্বৈত কুলকার্নি, গ্রো ইন্ডিয়া ইমপোর্ট এক্সপোর্টের কো-ফাউন্ডার নরেশ গজবিয়ে প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন উদ্যান ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের অধিকর্তা দীপক কুমার দাস, কৃষি দপ্তরের অধিকর্তা ফণীভূষণ জমাতিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর টেকনিক্যাল সেশনে আনারসের উৎপাদন, রপ্তানি ইত্যাদি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন।