শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জনজাতিদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সহ বিভিন্ন জনকল্যাণকামী প্রকল্প রূপায়ণ করছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যে শিক্ষা পরিকাঠামোর ব্যাপক প্রসারের পাশাপাশি গুণগত শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করতে, নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি রূপায়ণ করার কাজও রাজ্য সরকার করছে। আজ বিশালগড় মহকুমার মধুপুর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। বিশালগড়ে নতুন টাউনহলে আয়োজিত অপর এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। উল্লেখ্য, মধুপুর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ৮ হাজার ৪২২ টাকা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার প্রসারেও রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রয়াস অব্যাহত আছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা এখন সবদিক দিয়েই দ্রুতগতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। গত অর্থবছরে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই ১৫৩ কোটি টাকার উপর বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত, ভিলেজ কমিটিতে বসবাসরত অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প রূপায়ণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মন্ত্রে রাজ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমুখী প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুন মাস পর্যন্ত সারা রাজ্যে ৬৩৮ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ রূপায়ণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাস্তারমাথা থেকে মধুপুর হয়ে কমলাসাগর কসবেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত রাস্তাটি সংস্কার করা হয়েছে। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। অদূর ভবিষ্যতে কমলাসাগরের কসবেশ্বরী মন্দিরকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া হবে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে রাজ্যের ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রী সহ নতুন প্রজন্ম যেন নেশার প্রতি আসক্ত না হয় তারজন্য অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে মুখ্যমন্ত্রী আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে কমলাসাগরে রবিশংকর বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে মধুপুর পঞ্চায়েতের পূর্ণিমা শীল, শ্রেষ্ঠ আশাকর্মী হিসেবে মধুপুরের রুমা সরকার, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশেষ পরিষেবা দেওয়ার জন্য পূর্ব গকুলনগর আরোগ্য মন্দির এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মধুপুর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের বিশেষ সাফল্যের জন্য প্রিন্সিপাল বর্ণালী গোস্বামীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে মুখ্যমন্ত্রী আজ বিশালগড়ের নতুন টাউনহলের আরেকটি অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে ৮ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিশালগড় মহকুমা শাসক কার্যালয়ের নতুন ভবন, ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন, ২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিপাহীজলা ডি.সিএম. ওয়াটার কমপ্লেক্স, ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এস.ডি.এম. কোয়ার্টার, ১১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিশালগড় থেকে গোলাঘাটি পর্যন্ত রাস্তার শিলান্যাস এবং ২৬ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭টি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরের উদ্বোধন করেন। এই অনুষ্ঠানে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক স্থাপনে এবং প্রতি সপ্তাহে রক্তদান শিবিরের আয়োজনে বিশেষ অবদানের জন্য বিধায়ক সুশান্ত দেবকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশেষ পরিষেবা প্রদানের জন্য সিপাহীজলা জেলার মাইক্রোসাপাড়া পি.এইচ.সি, দয়ারাম পাড়া পি.এইচ.সি, যুবরাজঘাট ও উজান পাথালিয়া আরোগ্য মন্দিরের সম্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়াও জেলার জম্পুইজলা ব্লকের ৬টি, চড়িলাম ব্লকের ২টি এবং বিশালগড় ব্লকের ২টি ভিলেজ কমিটিকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ভিসি হিসেবে সম্মাননা দেওয়া হয়। এছাড়াও ড্রাগ এবিউজ ও ইলিসিট ট্রাফিকিং তর্ক প্রতিযোগিতায় জেলার বিজয়ী মোট ৪ জন ছাত্রছাত্রী এবং জেলাভিত্তিক সাঁতার ও ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী মোট ৮ জন ছাত্রছাত্রীকে পুরস্কার ও শংসাপত্র প্রদান করা হয়।
উভয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপাহীজলা জিলা পরিষদের সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিপাহীজলা জেলার জেলাশাসক ডা. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল। অনুষ্ঠান দুটিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা, বিশালগড় পুরপরিষদের চেয়ারপার্সন অঞ্জন পুরকায়স্থ, বিশালগড় পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান অতসী দাস, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন, সি. শর্মা প্রমুখ।